বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

তিনটি অনুগল্প

হাফিজ ইকবাল : 

১. চাঁদের দুঃখ

 

এক আকাশে একটি চাঁদ। সফেদ-কালো  মেঘগুলো তার দুঃখ-সুখের সঙ্গী। চাঁদটি তার সমস্ত আলোকে ছড়িয়ে দিয়ে পৃথিবীকে প্রভাময় করতে চাচ্ছে। কিন্তু হায় মেঘমালা তাকে যাতনা দিচ্ছে। তার আলোগুলোকে ছড়িয়ে দিতে প্রচ- বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চাঁদটি তাই কাঁদছে। কাঁদছে। কাঁদছে। মেঘমালা আরো গুমট করছে পরিবেশ।

 

২. বোঝা 

পাশাপাশি তিনটি কাঁঠাল গাছ। ক্ষীণকায় ব্যপ্তি। একটিতে তালগোছের দু'খানা মনোরম কাঁঠাল ঝুলে তার বয়স প্রাপ্তির দৃষ্টান্ত দিচ্ছে। খুব বেশী কাছাকাছি হওয়ায় বেড়ে ওঠার অনুকূল পরিবেশ পায়নি গাছ তিনটি। তাদের উপরাংশ জুড়ে অসংখ্য পাতা। সবুজ আর সবুজ। দেখতে দারুণই লাগছে। তবে অসংখ্য সবুজ পাতার মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি পাকা পাতা। হলুদ ও লালরঙের মিশ্রণে পাতাগুলো দর্শকের এক বিশেষ আকর্ষণ। গাছের নিচ থেকে এক ভদ্রমহোদয় বিরক্তিভরা কণ্ঠে বললেন, 'এই পেকে যাওয়া পাতাগুলো ঝরে গেলে কাঁঠাল গাছগুলোকে অনেক সুন্দর লাগবে।' বয়সে নবীন তবে ভাবুক গোছের এক ব্যক্তি বললেন, 'যদি এই পাকা পাতাগুলো না থাকত তবে সবুজ পাতাগুলোর সৌন্দর্য খুব একটা বেশি ফুটে উঠত না।' ভদ্রমহোদয় ক্ষেপে বললেন, 'এসব বয়স্ক পেকে যাওয়া পাতা গাছটির সৌন্দর্যে কঠিন হানিকর। আমি এখনই ঝাকি মেরে এসব আধমরাকে ফেলে দিব।' নবীন ভাবুক কিছুটা ক্ষীণস্বরে বললেন, 'দেন, ফেলে দেন! এ সকল পাতার বয়স হয়েছে। অনেক বয়সের ফলে দীর্ঘসময় ধরে সালোকসংশ্লেষণ করে অক্সিজেন দিয়েছে। এতদিন ধরে গাছটিকে খাদ্য তৈরী করে খাইয়েছে। দেন, এগুলোকে ফেলে দেন! এই বুড়ো বয়সে পাতাগুলো আজ গাছের জন্য বড়ই বোঝা!'

 

৩. পাখিবান্ধব গাছ 

ঝির ঝির বাতাস বইছে। গাছের পাতাগুলো আনন্দে দুলছে। অদূরে দাঁড়িয়ে আইজল শেখ। সে কিছুক্ষণ পূর্বে দেখেছিল যে গাছটি অনেকগুলো পাখিকে ময়লা আবর্জনা দিয়ে চেপে রেখেছে। কিছু পাখি মারা গেল। জীবিত পাখিগুলো আর্তনাদ করছে। হঠাৎই বাতাসের বেগ বেড়ে গেল। দোলায়িত পাতাগুলো আনন্দে আর দুলছে না। বাতাসের বেগ সেগুলোকে এ পরিমাণ নাড়াচ্ছে যে, কিছু পাতা বৃন্ত থেকে খসে বাতাসে উড়ে গেল। বাতাসের বেগ চরমভাবে বেড়ে গেল। এবার ডালপালাগুলো ঝাঁকুনি খেতে লাগল। ঝাঁকুনি খেতে খেতে মড়াৎ করে মগডালটি ভেঙ্গে গেল। মগডালের মড়াৎ শব্দে অন্যডালগুলোতে ভীতির সঞ্চার হলো। ভয়ে কাঁপছিল ডালগুলো। ধস নামার মতই বাকি ডালগুলো ঝরে পড়ল। 

শনশনিয়ে বাতাস বওয়াতে পাখিদের ঢেকে রাখা ময়লা আবর্জনাগুলোও উড়ে গেল। বাতাস থেমে গেলে জীবিত পাখিগুলো ডানা ঝাপটিয়ে উড়ে চলে আকাশকে কূজনে ভরিয়ে তুললো। পাখিগুলো মৃত সঙ্গীপাখির শোকে মূহ্যমান হলো না। তারা অধীনতা থেকে মুক্তি পেয়েছে যা তাদের পাখি হিশেবে প্রাপ্য ছিল। প্রাপ্য পেয়েছে বলে অনেক আনন্দিত। 

আইজল শেখ বলছে, এ রকম গাছ ও ডালপালা আর প্রয়োজন নেই যারা পাখিদেরকে করে বন্দী। শক্তির জোরে মেরেও ফেলে। এ জায়গায় জন্ম হোক পাখিবান্ধব এক গাছের।

 

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ