ঢাকা, বৃহস্পতিবার 18 April 2024, ০৫ বৈশাখ ১৪৩০, ৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী
Online Edition

বিবিসি সংবাদদাতার বিশ্লেষণ: এবারের জাতীয় সংসদ কেমন হতে যাচ্ছে

বাংলাদেশে নতুন সংসদের প্রথম অধিবেশন আজ বসতে যাচ্ছে।

 

সংগ্রাম অনলাইন ডেস্ক:

বাংলাদেশে নতুন সংসদের প্রথম অধিবেশন আজ বসতে যাচ্ছে। নির্বাচনে ২৫৮টি আসনে জয়লাভ করেছে আওয়ামী লীগ, অন্যদিকে বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামের বিরোধী জোট আটটি আসনে জয়ী হলেও তারা ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে নতুন নির্বাচন দাবি করেছে।

সংসদে বিরোধী দল হিসেবে বসছে ২২টি আসনে জয়ী হওয়া জাতীয় পার্টি যারা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত মহাজোটেরই একটি শরিক দল। সবমিলিয়ে কেমন হতে যাচ্ছে এবারের সংসদ? - সেটাই বিশ্লেষণ করছেন সহকর্মী কাদির কল্লোল।

নতুন সংসদ গত সংসদের তুলনায় আলাদা কোন চেহারা নেবে বা বড় পার্থক্য হবে, সেটা মনে হচ্ছে না। যদিও আগের সংসদটি হয়েছিল ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে, আর এবারের নির্বাচনটি হয়েছে সব দলের অংশগ্রহণে।

কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে 'নিয়ন্ত্রিত' এই নির্বাচনে তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি এবং তাদের জোট ঐক্যফ্রন্ট, তারা মাত্র আটটি আসন পেয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্ট তাদের দলের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ না নেয়ার অবস্থানে এখনো রয়েছে।

সেখানে ২২টি আসন পাওয়া আওয়ামী লীগের জোটের অন্যতম শরীক জাতীয় পার্টি বিরোধী দলের আসনে বসছে। তারা গত সরকারের সময় একইসঙ্গে সরকারে এবং বিরোধী দলে ছিল। এবার পার্থক্য শুধু এটাই যে, তারা এখন সরকারের মন্ত্রিসভায় নেই।

এছাড়া আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরীক দল ওয়ার্কার্স পার্টি এবং জাসদও সংসদের বিরোধী দলের ভূমিকা নেবে - এমনটাই বলা হচ্ছে।

ফলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শরীকদেরই বিরোধী দলে দেখা যাবে। তারা কতটা স্বাধীনভাবে সরকারকে চ্যালেঞ্জ করতে পারবেন, সেটা নিয়ে সন্দেহ থেকে যায়।

কতটা কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারবে একাদশ সংসদ?

এই সংসদে জাতীয় পার্টির নেতা জেনারেল এরশাদ নিজেই বিরোধী দলের নেতা হয়েছেন। জাতীয় পার্টি এবার একেবারে নির্ভেজাল বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করবে, এমন বক্তব্য দিচ্ছেন দলটির নেতারা।

কিন্তু জাতীয় পার্টি নিজেদের ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে কিনা - সেই প্রশ্ন রয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।

জাতীয় পার্টি এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, তাদের ভাষায় 'নির্ভেজাল বিরোধী দল' হওয়ার জাতীয় পার্টির যে অবস্থান, এর পেছনেও সরকারের ইচ্ছা কাজ করেছে।

এছাড়া ১৪ দলীয় শরীক ওয়ার্কার্স পার্টি এবং জাসদের নেতাদের এবার মন্ত্রিসভায় রাখা হয়নি। সরকার তাদেরকেও বিরোধী দলের ভূমিকায় চায়, এমনটা মনে হয়েছে। ফলে এই দলগুলোর ওপর সরকারের একটি প্রভাব থেকেই যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

আরেকটি বিষয় হচ্ছে, ১৯৯১ সালে সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরে আসার পর থেকে, আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি যে সংসদগুলোয় বিরোধী দলে ছিল, দুই দলই কিন্তু বিরোধী দলে থাকাকালে সংসদ বয়কট করেছে বেশিরভাগ সময় ধরে।

এই বিষয়গুলোকে উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরে আওয়ামী লীগের নেতারা আশা করছেন, এবার সংসদে তারা আশা করছেন যে একটি 'গঠনমূলক' পরিবেশ তৈরি হবে।

মহাজোটের শরীক হিসাবে নির্বাচন করলেও, সংসদে বিরোধী দলে বসতে যাচ্ছে জাতীয় পার্টি।

জোটের শরীকরা বিরোধী দলে বসলে কতটা জবাবদিহিতার পরিবেশ তৈরি হবে?

সংসদে আসলে সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার বিষয়টি নির্ভর করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিগুলোর ওপর। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে, তখন থেকেই মন্ত্রীদের বাইরে অন্য সংসদ সদস্যদের বা বিরোধী দলের সদস্যদের ওই সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলোর প্রধান বা সভাপতি করার ব্যবস্থা নেয়া হয়।

কিন্তু দেখা যায়, সংসদে সরকার বা ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকেই কমিটিগুলোর নিয়ন্ত্রণ রাখা হয়। বেশিরভাগ কমিটি প্রধান থাকে সরকারী দলের, বিরোধী দলের হাতে খুবই কম কমিটির নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেয়া হয়।

ফলে অতীতে দেখা গেছে, সংসদীয় কমিটি সেভাবে সক্রিয় ভূমিকা নিতে পারেনি। অনেক সময় কোন কোন কমিটি সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করলে তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে।

এরপরেও সংসদীয় কমিটিগুলোর মাধ্যমে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার একটা সুযোগ থাকে। সেই সুযোগ আওয়ামী লীগের শরীকরা, যারা বিরোধী দলে বসছেন, তারা কতটা নেবেন - সেই প্রশ্ন তো থেকেই যায়।

 

বিএনপির প্রতিক্রিয়া কী?

বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিতরা তো শপথই নেননি। তার মধ্যেই বসতে যাচ্ছে সংসদের প্রথম অধিবেশন।

বিএনপি নেতারা বলছেন, তাদের ভাষায় 'কারচুপি' এবং 'অনিয়মের' নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ এই সংসদ গঠন করেছে। ফলে তারা সংসদের প্রথম দিনেই প্রতিবাদ করতে যাচ্ছেন। তার অংশ হিসাবে ঢাকায় তারা মানব বন্ধনের কর্মসূচী নিয়েছেন।

তবে দেখা যাচ্ছে, ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচিত দুইজন শপথ নিতে চান। ফলে তাদের মধ্যে একটি জটিলতার তৈরি হয়েছে।

 

সংসদের প্রথম দিনেই ‘ভুয়া ভোটের সংসদের’ প্রতিবাদ করেছ বিএনপি

তবে সংসদে শপথ নেয়ার বা যোগ দেয়ার তিনমাস পর্যন্ত সময় রয়েছে। যদি শেষপর্যন্ত বিএনপি সংসদে যোগ দেয়, তাহলে সংখ্যায় কম হলেও, সংসদের চেহারা ভিন্ন রকম হতে পারে।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, বিএনপি সংসদে না এলে বিএনপি আবারো ভুল করবে বলে মনে করছেন তারা।

সূত্র:বিবিসি বাংলা

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ