বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

সুন্দরবন সংলগ্ন কয়রার দক্ষিণ বেদকাশীতে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার অপার সম্ভাবনা

খুলনা অফিস : সুন্দরবনের কোল ঘেষে বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত কয়রা উপজেলা। এ উপজেলার শেষ সীমানায় অবস্থিত দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়ন। সুন্দরবনের অতি সন্নিকটে অবস্থিত এ এলাকাটিতে গড়ে উঠতে পারে একটি পর্যটন কেন্দ্র।

উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দক্ষিণে শাকবাড়িয়া নদী ও মাইকেলের কপোতাক্ষ নদের কোলে অবস্থিত দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়ন। নদী দু’টি ৩ দিক দিয়ে ঘিরে রেখেছে ইউনিয়নটিকে। নদীর একপাশে লোকালয় অন্য পাশে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি পৃথিবীর একমাত্র মনগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন। লোকালয়ের পার থেকে দেখা যায় জঙ্গলের ধারে ঘাস খাচ্ছে চিত্রল হরিণ। গাছে গাছে লাফিয়ে বেড়ায় বানর। পৃথিবী বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ নানা প্রজাতির পশু পাখি ও বিষধর সাপের বসবাস এখানে। সুন্দরী, গরান, কেওড়া, গেউয়া, পশুর, আমরুল ও গোলসহ নাম না জানা অসংখ্য প্রজাতির বৃক্ষের সমাহার এ বনে। নদীতে দেখা যায় কুমির ও শুশকসহ নানা প্রজাতির মাছ। লোকালয়ের পারে ইউনিয়নের সর্ব দক্ষিণে গোলখালী গ্রামের সামনে বেড়িবাঁধের বাইরে মূল জঙ্গল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পলি জমে গড়ে উঠেছে আর একটি জঙ্গল। সব মিলিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে এক অপরূপ লীলাভূমি এই সুন্দরবন। দক্ষিণ বেদকাশির মত সুন্দরবন হতে এত নিকটে বাংলাদেশের অন্য কোনো লোকালয় নেই। এখান থেকে হিরন পয়েন্ট ও বঙ্গোপসাগর আনুমানিক ২৫/৩০ কিমি দূরে। ইউনিয়নটিতে আছে একটি পুলিশ ক্যাম্প, একটি কাস্টম্স চেকপোস্ট, একটি কোষ্টগার্ড ভবন ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মুসলিম, হিন্দু, খ্রিষ্টান ও মুন্ডা উপজাতি এ এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরে একত্রে বসবাস করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির স্বাক্ষর রেখে চলেছে। যুগ যুগ ধরে ঘুর্ণিঝড়, জলোচ্ছাসসহ নানা প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে তারা টিকে আছে। বর্তমানে ইউনিয়নটিতে প্রায় ২৮ হাজার লোকের বসবাস। অধিকাংশ মানুষ খুবই সহজ-সরল, তবে পরিশ্রমী। দিনমজুর, কৃষি ও মাছ ধরা তাদের প্রধান পেশা। এলাকায় শিক্ষার হার অনেক কম থাকায় অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে। এলাকার শিক্ষিত চিন্তাশীল মানুষেরা মনে করেন সুন্দরবনের অতি নিকটে অবস্থিত এই প্রত্যন্ত অঞ্চলটির অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাতে এলাকাটি একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের প্রধান শিক্ষক মশিউর রহমান মিলন বলেন, বর্তমান বিশ্বে পর্যটন শিল্প একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে। সুন্দরবন ও বঙ্গোপসাগরের অতি নিকটে অবস্থিত এই অঞ্চলটিকে সরকার যদি বিবেচনা করে একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলে তাহলে দেশের পর্যটন শিল্প এক ধাপ এগিয়ে যাবে এবং পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এলাকাটি বড় ধরনের ভূমিকা পালন করবে। এ এলাকায় পর্যটন শিল্প গড়ে উঠলে পৃথিবীর একমাত্র মানগ্রোভ বনাঞ্চলটিও সংরক্ষণ করা সহজ হবে। উন্নত হবে রাস্তা ঘাট। সাধারণ মানুষ সুন্দরবনের ওপর তাদের নির্ভরশীলতা কমাবে এবং সুন্দরবন ধ্বংসের পথ ছেড়ে অন্যভাবে বেছে নিতে পারবে তাদের জীবন ও জীবিকা। লোকালয় তথা সুন্দরবন এলাকায় নিরাপত্তা জোরদারের মাধ্যমে চোরাকারবারী ও বনদস্যুদের সহজে প্রতিহত করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি সীমান্ত রক্ষা ব্যবস্থাও জোরদার হবে। এখান থেকে বঙ্গোপসাগর নিকটে হওয়ায় সুন্দরবন ও বঙ্গোপসাগরের টানে সারাবছর দেখা যাবে পর্যটকদের ভীড়। সুন্দরবন বিশ্বের দরবারে সমাদৃত হবে, পরিচিত হবে নতুন রূপে।’

ইউপি চেয়ারম্যান কবি সামছুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের দক্ষিণ সীমানায় অবস্থিত উপকূলীয় অঞ্চল কয়রা উপজেলার এই ইউনিয়নটির মত বাংলাদেশের অন্য কোনো ভূখ- সুন্দরবনের এত নিকটে আর আছে বলে আমার জানা নেই। এখান থেকে বঙ্গোপসাগরও খুব নিকটে। সরকার যদি এ এলাকাটির গুরুত্ব বিবেচনা করে এখানে একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলে তাহলে সারা বছর এখানে থাকবে পর্যটকদের উপচেপড়া ভীড়। পর্যটন শিল্প উন্নত হবে এবং সরকারের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটবে।

কয়রা কারিগরি কলেজের প্রভাষক আনিসুজ্জামান বলেন, সরকার যদি এই এলাকাটিকে একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলেন তাহলে প্রকৃতির সাথে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে বেঁচে থাকা এলাকার সহজ-সরল খেটে খাওয়া মানুষগুলো পেশাগত দিক থেকে সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীলতা কমাবে। সর্বোপরি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হওয়ার পাশাপাশি দেশের অর্থনেতিক উন্নয়নে এলাকাটি একটি বড় ধরনের ভূমিকা পালন করবে। তাই এ অঞ্চলটির গুরুত্ব বিবেচনা করে এলাকাটিতে যাতে একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠতে পারে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে তিনি জোর দাবি জানিয়েছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ