বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

২২ বছরে যশোর অঞ্চলে ৩৭৮ জন প্রবাসী শ্রমিকের মৃত্যু

৫ কোটি ৬৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান

চৌগাছা (যশোর) সংবাদদাতা, ৩০ জানুয়ারি : কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশে যাওয়ার পর গত ২২ বছরে যশোর, মাগুরা ও নড়াইল জেলায় ৩শ’ ৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের পরিবারকে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫ কোটি ৬৪ লাখ ৬০ হাজার ৯শ’ ৪০ টাকা দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিমানবন্দর থেকে লাশ পরিবহন খরচ, আর্থিক অনুদান ও সন্তানদের পড়ালেখা বাবদ শিক্ষাবৃত্তি দেয়া হয়েছে। বৈধভাবে পাসপোর্ট, ভিসাসহ বহির্গমনের ছাড়পত্র নিয়ে বিদেশে যাওয়ার কারণে সরকারি এ সুবিধা দেয়া হয়েছে। কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা, সড়ক দুর্ঘটনা ও অসুস্থসহ বিভিন্ন কারণে মৃত্যুর শিকার হযেছেন কেবলমাত্র তারাই ক্ষতিপূরণ পেয়ে থাকেন। বিদেশে মৃত শ্রমিকদের লাশ পরিবহন খরচ বিমানবন্দর থেকে ৩৫ হাজার টাকা, আর্থিক অনুদান হিসেবে ৩ লাখ টাকা, মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ বাবদ বকেয়া বেতন ইন্স্যুরেন্স ও সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তি বাবদ টাকা দেয়া হয় বৈধ প্রবাসীদের। জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস যশোর সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৭ সাল থেকে গত বছর ২০১৮ সাল পর্যন্ত তাদের হিসেবে বিদেশে মারা যাওয়া ৩শ’ ৭৮ জনকে ৫ কোটি ৬৪ লাখ ৬০ হাজার ৯শ’ ৪০ টাকা দেয়া হয়েছে। যা ১ লাখ ৯৮ হাজার ৬শ’ ৬৪ দশমিক ৭৯ ডলারের সমান। ৩শ’ ৩৩টি চেকের মাধ্যমে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস মৃত ব্যক্তির পরিবারকে পরিশোধ করেছে। ১৯৯৬ সাল হতে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ১৬ বছরে মৃত ১শ’ ৬৩ জন প্রবাসীর লাশ পরিবহন বাবদ দেয়া হয়েছে ৩১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। আগে মরদেহ প্রতি ২০ হাজার টাকা বহন খরচ দেয়া হলেও বর্তমানে তা বৃদ্ধি করে ৩৫ হাজার টাকা করে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ২০০৫ সাল হতে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১৪ বছরে ৩শ’ ৭৬৩ জন মৃত প্রবাসীর পরিবারকে ৯ কোটি ৩০ লাখ ৩০ হাজার টাকা আর্থিক অনুদান দেয়া হয়েছে। ৬শ’ ২৯টি চেকের মাধ্যমে এ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এছাড়া ২০১৪ সাল হতে ২০১৮ সাল পর্যন্ত যারা বিদেশে আছেন বা মারা গেছেন তাদের ভেতর ৭২ জনের পরিবারের সন্তানদের ৮ লাখ ১ হাজার ৭শ’ টাকা দেয়া হয়েছে শিক্ষাবৃত্তি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিদেশ গমনের জন্য বিএমহটির সাভারে নিবন্ধন ও ফিঙ্গার প্রিন্ট করতে হয়। এ জন্য প্রয়োজন হয় পাসপোর্টের ফটোকপি, দুকপি পাসপোর্ট সাইজের কালার ছবি, ভিসার ফটোকপি ও ২শ ২০ টাকার পে-অর্ডার। এরপর প্রয়োজন হয় বহির্গমন ছাড়পত্র ও স্মার্টকার্ড। যশোর জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস হতে বহির্গমন ছাড়পত্র ও স্মার্টকার্ড প্রদান করা হচ্ছে । বহির্গমন ছাড়পত্রের জন্য যে সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের দরকার তা হচ্ছে, রিক্রুটিং এজেন্সির আবেদন (ক্ষেত্রবিশেষ কর্মীর আবেদন)। মূল পাসপোর্ট (ভিসা স্ট্যাম্পিং), ভিসার কপি, চুক্তিপত্র, ট্রেনিং সনদ/ব্রিফিং সনদ, কর্মীর অঙ্গীকারনামা রিক্রুটিং এজেন্সির অঙ্গীর নামা ও রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্সের বৈধতা সংক্রান্ত তথ্যাদি। এসব কিছুর পর বহির্গমন ছাড়পত্রের জন্য সরকার নির্ধারিত ফি দিতে হয়। ৩ হাজার ৫শ’ টাকা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ ফি, ২শ’ ৫০ টাকা স্মার্ট কার্ড ফি, একক ভিসার ক্ষেত্রে আয়কর চালান ২শ’ ৫০ টাকা, সত্যায়িত একক বিসার ক্ষেত্রে ৪শ’ টাকার আয়কর চালান অসত্যায়িত এবং সৌদিআরব একক ভিসার ক্ষেত্রে ৫শ’ টাকার চালান, অসত্যায়িত, সোনালী ব্যাংক যশোর কর্পোরেট শাখায় জমা দিতে হচ্ছে। এসব কাজ সম্পন্ন করেই যশোর জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কর্মসংস্থান অফিসের মাধ্যমে ঢাকা বিমানবন্দরে অবস্থিত প্রবাসী কল্যাণ ডেক্সের একটি ছাড়পত্র নিয়েই বিমানযোগে বিদেশে যেতে পারছেন বিদেশেগামীরা। তাদের ঢাকার অন্য কোথাও দৌঁড় ঝাপ করতে হচ্ছে না। যশোর জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক স্থাপিত হওয়ায় যশোর, মাগুরা, ঝিনাইদহ ও নড়াইল জেলার মানুষ এ সুবিধা ভোগ করতে পারছেন। বিদেশে যাওয়ার পর এসব প্রবাসীরা তাদের কর্মক্ষেত্রে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে আইনগত নিরাপত্তা সুবিধা পাচ্ছেন। তবে অবৈধভাবে পানি পথে যাওয়া লোকজন এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। পালিয়ে থাকা ছাড়া তাদের কোন গত্যন্তর হচ্ছে না। জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক রাহেনুর ইসলাম এ অফিসের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের জন্য বৈধভাবে বিদেশ যাওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ