শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

বখাটের হামলা এবং পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ

দেশজুড়ে যখন সাড়ম্বরে পুলিশ সপ্তাহ চলছে তখনই রাজধানীর আশুলিয়ার একটি এলাকায় একজন দাখিল পরীক্ষার্থী ছাত্রীর এবং তার মায়ের হাত ভেঙে ফেলার খবরে স্তম্ভিত হতে হয়েছে জনগণকে। গতকাল দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানানো হয়েছে, আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের অধীন নাল্লাপাড়া এলাকায় আসলাম নামের এক বখাটে যুবক দাখিল পরীক্ষার্থী হোসনে আরার ডান হাত এবং তার মা খোদেজা বেগমের বাম হাত ভেঙে দিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীসহ স্থানীয়দের উদ্ধৃত করে রিপোর্টে জানানো হয়েছে, নিজেকে ছাত্রলীগের নেতা বলে পরিচয়দানকারী বখাটে আসলামের মা শাহানা বেগম নিজের গরুকে নিয়ে দাখিল পরীক্ষার্থী হোসনে আরাদের ক্ষেতে কলাই খাওয়াচ্ছিল। হোসনে আরার মা এর প্রতিবাদ জানালে দু’জনের মধ্যে বিতর্ক শুরু হয়। খবর পেয়ে বখাটে আসলাম হোসনে আরাদের বাড়িতে চড়াও হয় এবং লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মা খোদেজা বেগমের বাম হাত ভেঙে ফেলে। এ সময় বাধা দিতে ও প্রতিবাদ জানাতে গেলে বখাটে আসলাম হোসনে আরাকেও লাঠি দিয়ে পেটাতে পেটাতে তার ডান হাত ভেঙে ফেলে। মা ও মেয়ে দু’জনেরই হাতে প্লাস্টার লাগাতে হয়েছে। বড়কথা, ডান হাত ভেঙে যাওয়ায় হোসনে আরার পক্ষে চলমান দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
এটা গত ২৮ জানুয়ারির ঘটনা। বলা হচ্ছে, ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণেই বখাটে আসলাম হোসনে আরার ডান হাত ভেঙে ফেলেছে, যাতে তার পক্ষে দাখিল পরীক্ষা দেয়া সম্ভব না হয়। ওদিকে ঘটনার পরপর এ বিষয়ে আশুলিয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলেও ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যসহ স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রহস্যজনক কারণে পুলিশ ওই বখাটের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। স্থানীয়দের মতে ব্যবস্থা না নেয়ার সম্ভাব্য একটি কারণ হলো, বখাটে আসলাম নিজেকে ছাত্রলীগের নেতা বলে পরিচয় দিয়ে বেড়ায়। চাঁদাবাজি ও মানুষকে হয়রানি করার মতো অন্য কিছু অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। কিন্তু ছাত্রলীগের নেতা হওয়ার কারণে পুলিশ নাকি তার বিরুদ্ধে কোনো ঘটনার ক্ষেত্রেই কোনো ব্যবস্থা নেয় না। সাধারণ মানুষও ভয়-ভীতির কারণে তার সম্পর্কে মুখ খুলতে চায় না। এদিকে মা ও মেয়ের হাত ভেঙে ফেলার পরিপ্রেক্ষিতে অনুসন্ধানকালে আশুলিয়া থানার ওসি জানিয়েছেন, তার নাকি এই ঘটনা সম্পর্কে কিছু জানা নেই!
আশুলিয়া থানা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের পক্ষ থেকে অবশ্য অস্বীকার করে জানানো হয়েছে, অভিযুক্ত বখাটে ছাত্রলীগের নেতা বা সদস্য নয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও পুলিশ কেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না সে প্রশ্নের উত্তর নিয়ে এলাকার জনগণের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা চলছে। উল্লেখ্য, হোসনে আরা নাল্লাপাড়া আদর্শ ইসলামিয়া সিনিয়র বহুমুখী মাদরাসার ছাত্রী এবং ওই মাদরাসা থেকেই তার দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু বখাটে আসলামের কারণে তার শিক্ষা জীবন থেকে একটি বছর হারিয়ে গেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, থানায় মামলা দায়েরের কারণে বখাটে আসলামই উল্টো হোসনে আরার পরিবার সদস্যদের হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে এবং মামলা তুলে নেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। রিপোর্টে আরো জানানো হয়েছে, পুলিশ নাকি অর্থের বিনিময়ে ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। অন্যদিকে হামলা ও হাত ভেঙে ফেলার প্রতিবাদে এবং বখাটে যুবককে গ্রেফতারের দাবিতে হোসনে আরার সহপাঠীসহ স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে বলেও খবরে জানানো হয়েছে। 
বলার অপেক্ষা রাখে না, আশুলিয়ার গ্রামাঞ্চলে সংঘটিত হামলা এবং মা ও মেয়ের হাত ভেঙে ফেলার ভয়ংকর অপরাধ সম্পূর্ণরূপেই অমার্জনীয়। আমরা উদ্বিগ্ন বিশেষ করে পুলিশের রহস্যময় ভূমিকার কারণে। সারাদেশে পুলিশ সপ্তাহ শুরু হওয়ার প্রাক্কালে আসলাম নামের বখাটে যুবক ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলেই আমরা পুলিশের ভূমিকা ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রশ্ন না তুলে পারি না। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, সম্ভাব্য কারণ হিসেবে একদিকে বলা হয়েছে ওই বখাটে ছাত্রলীগের নেতা, অন্যদিকে আবার পুলিশের বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের গুরুতর অভিযোগও প্রাধান্যে এসেছে। আমরা মনে করি, অন্তরালের প্রকৃত কারণ যা-ই হোক না কেন, যেহেতু সবকিছু প্রকাশ্যে ঘটেছে এবং যেহেতু এলাকাবাসী সকলেই এর সাক্ষী সেহেতু পুলিশের জন্য দায়িত্ব পাশ কাটানোর কোনো সুযোগ থাকতে পারে না। তাছাড়া অপরাধ যেহেতু ভয়ংকর এবং এর ফলে একজন দাখিল পরীক্ষার্থীর পক্ষে যেহেতু পরীক্ষা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না, সে কারণেও পুলিশের উচিত ওই যুবকের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া।
তার রাজনৈতিক পরিচিতি যা-ই হোক না কেন, তাকে অবশ্যই অবিলম্বে গ্রেফতার করে বিচারের জন্য আদালতে হাজির করতে হবে। আমরা আশা করতে চাই, পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধনী ভাষণে ‘জনবান্ধব’ হওয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পুলিশের প্রতি যে আহ্বান জানিয়েছেন সে আহ্বানের যথাযথ মর্যাদা রক্ষা করা হবে। পুলিশকে একই সঙ্গে দাখিল পরীক্ষার্থী হোসনে আরার জন্য ক্ষতিপূরণ দেয়ার পদক্ষেপও নিতে হবে। সব মিলিয়ে আমরা এমন কঠোর ব্যবস্থার দাবি জানাই যাতে দেশের অন্য কোনো এলাকায় আশুলিয়ার ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটতে পারে। যাতে আর কোনো বখাটে-সন্ত্রাসীর পক্ষে কোনো মা ও মেয়ের এত বড় সর্বনাশ করার কথা চিন্তা করাও সম্ভব না হয়।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ