শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

ছাত্রশিবিরের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ

স্টাফ রিপোর্টার : আজ বুধবার ৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৭৭ সালের এই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে পথচলা শুরু করে একে একে ৪১টি বছর পিছনে ফেলে এ সংগঠন রচনা করেছে এক গৌরবময় ইতিহাস। একটি গঠনমূলক গতিশীল গণতান্ত্রিক সংগঠন হিসেবে, একটি একক ও অনন্য অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে, মানুষ তৈরির কারখানা হিসেবে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির জনতার মনে, লাখো তরুণের হৃদয়ে করে নিয়েছে তার স্থায়ী আসন।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানী শাসকচক্রের হাত থেকে দীর্ঘ নয় মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের। শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচার নিপীড়নে জর্জরিত এদেশের মানুষ স্বপ্ন দেখতে শুরু করে স্বাধীনতার পর। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী চরম আর্থ-সামাজিক রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিশৃঙ্খলা, জাতি গঠনে রাজনৈতিক নেতৃত্বের চরম ব্যর্থতা আপামর জনসাধারণের সেই সুখ-স্বপ্ন বেশীদিন স্থায়ী হয়নি। দেশের সামগ্রিক অরাজক অবস্থা সাধারণ মানুষের মাঝে চরম হতাশার সৃষ্টি করে। ৭১ থেকে ৭৫ এর সাড়ে তিন বছর সময়কালে সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশে চেপে বসে একদলীয় বাকশালী সরকার। মানুষ হারায় বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা। দুর্ভিক্ষে প্রাণ গেলো লক্ষ লক্ষ মানুষের। ক্যু, সামরিক শাসন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণের বিভিন্ন ধাপে গড়িয়ে দেশটি এক অদ্ভূত অবস্থানে চলে গেল। ফলে এদেশের ভবিষ্যত নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে চরম অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। বিদ্যমান ছাত্র সংগঠনগুলো ছাত্রদের মুক্তির দিশারী হওয়ার পরিবর্তে পরিণত হয়েছিল দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মেধা-মূল্যবোধ-আদর্শহীন দলীয় লেজুড়বৃত্তির আখড়া হিসেবে।
এরই প্রেক্ষাপটে এ দেশের সাধারণ মানুষের মাঝে আশা তৈরির দুর্বার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে আসেন কিছু চিন্তাশীল, সাহসী ও স্বাপ্নিক তরুণ। আল্লাহর উপর ভরসা করে ১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে যাত্রা শুরু করে একটি ক্ষুদ্র ছাত্র সংগঠন। কালের বিবর্তনে আজ সে সংগঠন বিশাল মহীরুহে পরিণত হয়েছে, যার ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছে দেশের লক্ষ লক্ষ মেধাবী ও মুক্তিকামী ছাত্র-তরুণ। আলোকবর্তিকা হাতে অগ্রসরমান যে কাফেলাটি অতি দ্রুতই মেধাবী তরুণ-ছাত্রদের হৃদয়ের স্পন্দনে পরিণত হয়, তার নাম “বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির”। শুরু হল সুমধুর সঙ্গীতের শপথদীপ্ত অনুরণন-“পদ্মা মেঘনা যমুনার তীরে আমরা শিবির গড়েছি-শপথের সঙ্গীন হাতে নিয়ে সকলে নবীজির রাস্তা ধরেছি..”
প্রতিভা বিকাশে ছাত্রশিবির: প্রতিভার বিকাশের জন্য ছাত্রশিবির বছরব্যাপী কেন্দ্র থেকে শুরু করে উপশাখা পর্যন্ত আয়োজন করে বিভিন্ন উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতার। যেমন- কুইজ প্রতিযোগিতা, মেধা যাচাই, ক্যারিয়ার গাইডলাইন কনফারেন্স, কম্পিউটার মেলা, বিজ্ঞান মেলা, সাধারণ জ্ঞানের আসর, বিতর্ক ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতা, ক্রিকেট ও ফুটবল প্রতিযোগিতা ইত্যাদি। এসবের মাধ্যমে গড়ে তোলার চেষ্টা করে দেশের আগামী দিনের নেতৃত্ব। ইসলামী ছাত্রশিবির একমাত্র ছাত্র সংঠন যার রয়েছে নিয়মিত প্রকাশনা। কেন্দ্র থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রকাশনা ছাড়াও শাখা পর্যায় থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হয় বিভিন্ন প্রকাশনা। যা একদিকে ছাত্র সমাজের চরিত্র গঠনে রাখছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, অপর দিকে প্রতিভাবান লেখকদের গড়ে ওঠার প্লাটফর্ম হিসেবে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।
অপসংস্কৃতির করাল গ্রাস থেকে যুব সমাজকে রক্ষা এবং সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশের লক্ষ্যে দেশব্যাপী শিবিরের রয়েছে অসংখ্য সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী যারা নিয়মিত প্রশিক্ষণ, ওয়ার্কশপ, প্রযোজনার মাধ্যমে শিল্পী তৈরি করে যাচ্ছে প্রতি বছর।
বাংলাদেশের শিক্ষিত, আধুনিক তরণদের মাঝে ইসলামী আচার-আচরণ, মূল্যবোধ ও সংস্কৃতি চর্চার ব্যাপারে শিবিরের প্রভাব অনেক। বিভিন্ন সময়ে প্রকাশ করেছে স্টিকার, ঈদকার্ড, ক্লাস রুটিন, নব বর্ষের ডায়েরী, ক্যালেন্ডার ইত্যাদি। এ ছাড়াও রয়েছে সায়েন্স সিরিজসহ বিভিন্ন একাডেমিক প্রকাশনা।
জনগণের পাশে ছাত্রশিবির: বিপুল জনসংখ্যা অধ্যুষিত বাংলাদেশ হাজারও সমস্যায় জর্জরিত। দেশের এসব সমস্যায় শিবির পালন করে আসছে গঠনমূলক ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ছাত্রশিবির দেশের বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগে দেশবাসীর পাশে দাঁড়িয়েছে সাহসী সৈনিকের মত। সাধ্যমত ত্রাণ সামগ্রী সংগ্রহ করে দুর্যোগ কবলিত মানুষের মাঝে বিতরণ, শীত বস্ত্র বিতরণ, বিনামূল্যে ঔষধ-চিকিৎসা প্রদান ইত্যাদি কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে এ দেশের জনসাধারণের মনের মাঝে স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে।
ছাত্র সংগঠন হিসেবে ছাত্রশিবির এসব দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত ছাত্র-ছাত্রীদের। তাদের বিনামূল্যে বই, খাতা, কলমসহ নগদ অর্থ প্রদান করে তাদের শিক্ষা জীবনকে অব্যাহত রাখা ছিল শিবিরের অন্যতম প্রধান কর্মসূচি। শিবিরের নিয়মিত কর্মসূচির মাঝে রয়েছে স্বেচ্ছায় রক্তদান ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির মত সামাজিক আন্দোলন। যা জনসচেতনতা তৈরির পাশাপাশি সুন্দর ও নির্মল সমাজ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
১৯৮৮, ১৯৯১, ১৯৯৮, ২০০০, ২০০১ এর প্রলয়ংকরী বন্যার পর শিবিরের ত্রাণবিতরণ কর্মসূচি সবাইকে অভিভূত করেছে। ২০০৭ এ সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত দক্ষিণাঞ্চলের জনপদে শিবির কেবল ত্রাণবিতরণ করেনি বরং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উদ্ধার করেছে আটকে পড়া দুর্গত মানুষদের। একই ভাবে ২০০৯ এ পটুয়াখালী, সাতক্ষীরা ও খুলনা এলাকার আইলা আক্রান্ত মানুষদের পাশে দাঁড়ায় শিবির।
জাতীয় ইস্যুতে ছাত্রশিবির: দেশের সকল রাজনৈতিক ক্রান্তিকালে ছাত্রশিবিরের ভূমিকা সবসময়ই গঠনমূলক। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, গণতন্ত্র পূনরূদ্ধার প্রক্রিয়ায় ছাত্রশিবিরের ভূমিকা ছিল অগ্রণী ও বলিষ্ঠ। নব্বই’র দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক যে বিশাল ছাত্র জমায়েত ও আন্দোলন গড়ে উঠে, তার অন্যতম সংগঠক ছাত্রশিবির। স্বৈরশাসকের হাতে বহু নেতাকর্মী নিহত ও নির্যাতিত হলেও ছাত্রশিবির কঠোর রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে পিছপা হয়নি। শিবিরের বিশাল সমাবেশ ও মিছিল ছাত্র-জনতার প্রাণে নতুন আশা ও প্রেরণা সঞ্চার করেছিল। তাছাড়া ৯০’র দশকে গণআদালতের তা-বের প্রতিবাদে শিবিরের লড়াকু ভূমিকা ঐতিহাসিক। গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে রাজপথে ছাত্রশিবির সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিল। ১৯৯৬ এর নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসীন সরকারের বহুমাত্রিক নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে দেশের অন্যান্য ছাত্রসংগঠনের সমন্বয়ে “সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য” গঠন করে স্বৈরাচারী-ফ্যাসিবাদি কর্মকা-ের প্রতিবাদ অব্যাহত রাখে। পাবর্ত্য চট্টগ্রামকে তথাকথিক শান্তিচুক্তির নামে মূল ভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন করার বিরুদ্ধে গণচেতনা সৃষ্টি করে। ২০০১ সালের নির্বাচনে চারদলীয় জোটের পক্ষে জনমত গঠনের মাধ্যমে স্বেচ্ছাচারী সরকারের পরাজয়ে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে। ২০০১ পরবর্তী বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যত রকম সন্ত্রাস, রাহজানি ও দেশদ্রোহী কাজ সংগঠিত হয়েছে, ছাত্রশিবির প্রতিবারই এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলেছে। শিবির নিজের যেমন দলের মাঝে সন্ত্রাসীদের কোনো স্থান রাখেনি, তেমনি কোনো সন্ত্রাসী কর্মকা-কেই শিবির প্রশ্রয় দেয়নি। বার বার বোমা, সন্ত্রাস, হত্যা যখন দেশের সার্বিক পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তোলে, তখন প্রতিপক্ষের কেউ শিবিরের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করলেও শিবির যে এসব অপরাধ থেকে বহু দূরে তা প্রমাণ করতে পেরেছে।
ট্রানজিট ইস্যু, টিপাইমুখ বাঁধ, সীমান্তে কাঁটা তারের বেড়া ও নির্বিচারে গুলী করে অপহরণ-ধর্ষণ-হত্যা, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনা প্রত্যাহার, পিলখানায় দেশ প্রেমিক সেনা অফিসার হত্যা, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনসহ বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতে আলোচনা সভা, মানববন্ধনের আয়োজন করে এবং দেশের স্বার্থ হানিকর এসব কর্মকা-ের তীব্র প্রতিবাদ জানায়।
আন্তর্জাতিক ইস্যুতে ছাত্রশিবির: ছাত্রশিবির আন্তর্জাতিক ইস্যুতে সব সময়ই নীতিগতভাবে নিজের স্বার্থ সংরক্ষণ ও সকলের প্রতি বন্ধুত্বের প্রতি সচেতন। তবে, অন্যায় ও অবিচারের ব্যাপারে শিবির আপসহীন, জালেমের বিরোধিতা ও মজলুমের পক্ষ নেয়া শিবিরের নৈতিক দায়িত্ব।
১৯৭৯ সালে রাশিয়া আফগান মানুষের স্বাধিকার কেড়ে নিয়ে নগ্ন হামলা চালালে শিবির ঢাকায় হাজারো তরুণের মিছিল করে তার প্রতিবাদ জানায়। শিবির এভাবেই প্রতিবাদের মাধ্যমে ফিলিস্তিনী বীর যোদ্ধাদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে আসছে। অধিকৃত কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী মুসলমানদের উপর নির্যাতন ও বৈষম্যমূলক আচরণের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে শিবির ১৯৮৯ সাল থেকেই কর্মসূচি দিয়ে আসছে। এছাড়া ও বসনিয়া হার্জেগোভিনায় মুসলিম জনপদের ওপর পরিচালিত হত্যাজজ্ঞ ও দমননীতির প্রতিবাদে শিবির আয়োজন করে র‌্যালি ও প্রতিবাদ সভার। ছাত্রশিবির ইসলামের বিরুদ্ধে পরিচালিত বিভিন্ন কুৎসা, অপবাদ ও মিথ্যা প্রোপাগান্ডার জবাবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জনমত গঠন করে। ইরাকের কুয়েত আক্রমণ, নাইন ইলেভেনের কাপুরোষিত হামলা, আফগানিস্তান ও ইরাকে মার্কিন আগ্রাসন, ভারত ও চীনে মুসলিম নির্যাতন ও গণহত্যা, মিসরে গণহত্যা ইত্যাদির তীব্র প্রতিবাদ জানায়।
জুলুম নির্যাতন: শিবির তার যাত্রা শুরু করার সাথে সাথে ইসলাম বিরোধী মহল, কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠিরা তাদের শত্রুতা শুরু করেছে। ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধাচরণ, শিবির নেতা কর্মীদের ব্যাপারে অপপ্রচার ছড়ানো, শিবিরের কর্মসূচির ওপর হামলা, শিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা, শিবির কর্মীদেরকে ব্যক্তিগত ও দলীয়ভাবে আঘাতে জর্জরিত করা, গোপন ও প্রকাশ্যে হামলা করে শিবির কর্মীদের হত্যা করা এসবই হয়ে দাঁড়িয়েছে একটি গোষ্ঠীর একমাত্র কাজ। এ পর্যন্ত বিভিন্ন সংগঠনের হামলায় শিবিরের ২৩৪ জন তাজা তরুণ কর্মী শাহাদাত বরণ করেছে। ওরা জানে না কী তাদের অপরাধ? কেন ওদের হত্যা করা হয়েছে। তেমনিভাবে আহত, পঙ্গু হয়ে কষ্টকর জীবন যাপন করছে শিবিরের শত শত কর্মী। চোখ, হাত, পা হারানো এসব ছাত্রদের সকরুণ জিজ্ঞাসা- “কেন আমাদের এমন হলো”? কেউই তার উত্তর দেয় না, অথচ সবাই এর উত্তর জানে। “তাদের একমাত্র অপরাধ (!) তারা মহা পরাক্রমশালী স্বপ্রশংসিত আল্লার উপর ঈমান পোষণ করেছে” ওরা জীবন দিয়ে শাহাদাতে হক্বের স্বাক্ষ্য রেখেছে, ওরা পঙ্গুত্ব বরণ করেছে কিন্তু বাতিলের সাথে আপোষ করেনি, ওরা লড়তে লড়তে জীবনের দাম খুঁজে পেয়েছে। আর এভাবে মৃত্যুর মাঝে জীবনের সন্ধান করে ফেরাই বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের এক অনন্য ঐতিহ্য।
২০০৮ সালের ডিসেম্বরে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আরোহণ করেছে আওয়ামী সরকার। দমন-পীড়ন, অত্যাচার-নির্যাতন এবং খুন-জখমের টার্গেটে পরিণত হয় শিবিরের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। এ নির্যাতন থেকে রেহাই পাচ্ছে না বাড়িতে থাকা মা-বোনেরাও।
আদর্শিক রাজনীতির ধারা অব্যাহত রাখতে শিবিরের ২৩৪ জন শহীদ হয়েছেন। শুধুমাত্র বর্তমান আওয়ামী সরকারের সময়েই হত্যা করা হয়েছে ছাত্রশিবিরের ৯৭ জন মেধাবী নেতাকর্মীকে, গুম করা হয়েছে ১২ জনকে, আহত হয়েছেন প্রায় ১২ সহস্রাধিক, এর মধ্যে গুরুতর আহত হয়েছে সাড়ে ৬ শত, পঙ্গুত্ববরণ করেছেন ৯০ জন। এ ছাড়া গ্রেফতার হয়েছেন প্রায় ২৬ সহস্রাধিক আর মামলা হয়েছে প্রায় ২২ হাজার, এতে আসামী করা হয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজারের অধিক নেতাকর্মী। ৪৫০ এর অধিক ছাত্রশিবিরের অফিস, ছাত্রাবাস, নেতাকর্মীদের আবাসস্থলে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট করা হয়েছে।
তবুও পথচলা: ইসলামী ছাত্রশিবির-একটি নাম, একটি ইতিহাস, আল্লাহর পথের এক দুঃসাহসী কাফেলা। হাঁটি হাঁটি পা পা করতে করতে পিছনে ফেলে এলো একচল্লিশটি সোনালি বছর। শিবির পরিণত হলো তৌহিদী ছাত্র-জনতার আস্থা, ভালবাসা, স্বস্তি ও মুক্তির এক প্রিয় ঠিকানায়। মায়ের মায়াবী আঁচল, বাবার স্নেহের বাঁধন, বোনের আদরের ডাক, ছোট্ট সোনা মণিদের করুণ চাহনি কিছুই পিছনে টেনে রাখতে পারে না একজন শিবির কর্মীর সামনে বাড়ানো পা দুটিকে। ত্যাগ কুরবানীর এক প্রচণ্ড আগ্রহ, জান্নাতের এক দুর্বার আকর্ষণ তার ছিন্ন মস্তককেও অবিচল চেয়ে থাকতে সাহস জোগায় সামনের পানে। শিবির তাই আজ এক বিপ্লবী কাফেলা এবং এক অকুতোভয় তারুণ্যের নাম।
সপ্তাহ্ব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা: ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সেক্রেটারিয়েট বৈঠক থেকে সপ্তাহ্ব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. মোবারক হোসাইন। ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে-সারাদেশে শাখা ও থানা পর্যায়ে আলোচনা সভা এবং বর্ণাঢ্য র‌্যালী, মেধাবী ও দরিদ্র ছাত্রদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের সংবর্ধনা ও শিক্ষাবৃত্তি প্রদান, অদম্য মেধাবীদের সহযোগিতা প্রদান, অনাথ ও দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ, কৃতি শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান, ক্যাম্পাস পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও দেয়ালিকা প্রকাশ, রচনা, কুইজ, বিতর্ক, বক্তৃতা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্প, ব্লাড গ্রুপিং ও স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি এবং বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়।
শিবির সভাপতি কর্মসূচি সফল করার জন্য সর্বস্তরের নেতা কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ