শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা সরকারি দায়িত্বশীল সংস্থাগুলো কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না

গতকাল রোববার নিজস্ব কার্যালয়ে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন আয়োজিত চকবাজার মর্মান্তিক ঘটনা : প্রতিক্রিয়া ও করণীয় শীর্ষক সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান -সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার: চকবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা সরকারি দায়িত্বশীল সংস্থাগুলো কোনোভাবেই তাদের দায় এড়াতে পারেন না। বিশেষ করে সিটি করপোরেশনের যেসব কর্মকর্তার গাফেলতিতে আবাসিক এলাকায় এসব দাহ্য পদার্থের দোকান, কারখানা বা গোড়াউন গড়ে উঠছে তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। অবিলম্বে রাসায়নিক দ্রব্যের উৎপাদন, বিপনন, গুদামজাতকরণ ও পরিবহনের জন্য যুগোপযোগী নীতিমালা প্রণয়ণ ও তার বাস্তবায়ন করা।
চকবাজারের অগ্নিকান্ডের ঘটনায় পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এবং কেমিক্যাল সোসাইটির প্রতিনিধিদল ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। পরিদর্শনের পর গতকাল রোববার পবা কার্যালয়ে পরিবেশবাদীরা এক সংবাদ সম্মেলনে করে এ দাবি জানায়। পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন কেমিক্যাল সোসাইটির সাবেক সভাপতি ইউজিসি প্রফেসর মুহিবুর রহমান, পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো: আবদুস সোবহান, পবার সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল, নির্বাহী সদস্য মো: সেলিম, বিসিএইচআরডির নির্বাহী পরিচালক মো: মাহবুল হক প্রমুখ।
সাংবাদিক সম্মেলন থেকে বলা হয়, নিমতলীর দুর্ঘটনার পর তালিকা করে ৮০০ রাসায়নিক গুদাম ও কারখানা পুরান ঢাকা থেকে কেরানীগঞ্জে সরিয়ে নেয়ার এবং কেরানীগঞ্জে ‘কেমিক্যাল পল্লী’ গড়ার উদ্যোগ গ্রহণের কথা ছিল। কিন্তু আজো কোনো অগ্রগতি আসেনি। ২০১৭ সালে ফায়ার সার্ভিস এক জরিপের মাধ্যমে ৪০০ বাড়িতে রাসায়নিক কারখানা শনাক্ত করে এবং এ তালিকা সিটি কর্পোরেশনকে প্রদান করে। কিন্তু এই দীর্ঘসময়ে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ হতে এ সকল কারখানা ও গুদাম সরাতে বা বন্ধ করতে কোন ধরনের ফলপ্রসূ উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। সাধারণ পর্যবেক্ষণে মনে হয় পুরানা ঢাকার অধিকাংশ বাড়িতে ছোট বড় বিভিন্ন কারখানা রয়েছে। কোন কোন বা বাড়িতে ২-৩টি গুড়াউন বা কারখানা রয়েছে। তাতে সাধারণভাবে ধারণা করা যায় যে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ২০/৩০ হাজার কারখানা রয়েছে পুরান ঢাকায়।
পরিবেশবাদীরা বলেন, শহরে যেকোনো ব্যবসার জন্য সিটি কর্পোরেশনের লাইন্সেস নিতে হয়, রাসায়নিক আমদানী ও মজুতের ক্ষেত্রে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের অনুমোদন প্রয়োজন, কারখানা স্থাপনে ফায়ার সার্ভিস এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন প্রয়োজন। এছাড়া কারাখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং মান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে আছে। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর আইন ও নীতিমালা বাস্তবায়নে জনবল ও বাজেটে কোন ঘাটতি আছে রয়েছে কি না, সংস্থাগুলোর বিগত দিনে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের দায়িত্বে অবহেলা বা অসহযোগিতা করেছে কি না অথবা ব্যবসায়ীরা সরকারী সংস্থাগুলোর ক্ষমতাকে অবজ্ঞা করছে কি না, তাও খুঁজে দেখা জরুরি।
সাংবাদিক সম্মেলন থেকে সুপারিশ করা হয়। এগুলো হল চকবাজারের অগ্নিকান্ডে চিকিৎসারতদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সহায়তা প্রদান এবং নিহত পরিবারকে সবধরণের পর্যাপ্ত সহায়তা প্রদান এ ঘটনার জন্য দায়ীদের নিকট হতে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে। আইন লঙ্ঘন করে রাসায়নিক কারখানা এবং অন্যান্য দাহ্য উপকরণের গোডাউন স্থাপন এবং ভাড়া প্রদানকারী বাড়ির মালিক ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। বিদ্যমান আইন এবং রাসায়নিক কারখানা সরানোর জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়, শ্রম মন্ত্রণালায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সিটি কর্পোরেশন, পরিবেশ অধিদপ্তর, বিস্ফোরক অধিদপ্তর, কারখানা পরিদর্শকের অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মতো সংস্থাগুলোর দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের দায়িত্বে অবহেলা বা অসহযোগিতা করেছে কি না অথবা ব্যবসায়ীরা সরকারী সংস্থাগুলোর ক্ষমতাকে অবজ্ঞা করছে কি না, তা বের করতে তদন্ত কমিটি গঠন ও প্রতিবেদন প্রকাশ।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ