প্রশ্ন করতে বেশি সময় নেয়ায় সংসদে ক্ষোভ
সংসদ রিপোর্টার: জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বা অন্য মন্ত্রীদের সম্পূরক প্রশ্ন করার সময় সরাসরি প্রশ্ন না করে বিভিন্ন ধরনের ভূমিকা ও অন্য বিষয়ে কথা বলায় সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বর্ষীয়ান পার্লামেন্টেরিয়ান শেখ ফজলুল করিম সেলিম এ ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত ৩০ মিনিটের প্রশ্নোত্তোর পর্বের শেষে ফ্লোর নিয়ে শেখ সেলিম স্পিকারকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দিতে ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।
এর আগে প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করতে গিয়ে প্রশংসা ছাড়াও অপ্রসাঙ্গিক কথা বলেন বিরোধী দলসহ সরকারি দলের একাধিক সংসদ সদস্য।
এরপর শেখ সেলিম বলেন, আমরা প্রায়ই লক্ষ্য করি কোনো কোনো সদস্য সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি উপেক্ষা করে প্রশ্ন করার নামে আগে বিরাট একটা ভূমিকা রাখেন বা বক্তৃতা দেন, এটা ঠিক নয়। প্রশ্নকর্তা শুধুমাত্র সংক্ষেপে তার প্রশ্নটি করবেন এমন বিধি বিধান রয়েছে কার্যপ্রণালী বিধিতে। তাছাড়া একটি তারকা চিহ্নিত প্রশ্নের পরে মাঝে মধ্যেই ২-৩ বা তারও বেশি সদস্যকে প্রশ্ন করার সুযোগ দেয়া হয়। তাতে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। আবার অনেকেই একই ধরনের প্রশ্ন করায় অন্যরা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ বিষয়ে আপনি (স্পিকার) সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি মেনে তাদেরকে শুধুমাত্র প্রশ্নটি উত্থাপনের নির্দেশনা দেবেন, এটা আশা করি।
তিনি বলেন, আজ দেখলাম অনেক প্রশ্নকর্তা প্রশ্ন করার নামে নাতিদীর্ঘ বক্তৃতা দিয়েছেন। এসব কারণে মঙ্গলবার মাত্র চারটি সম্পূরক প্রশ্ন করার সুযোগ পান চারজন সংসদ সদস্য। ফলে মাত্র দুইজন সংসদ সদস্যের তারকা চিহ্নিত দুটি প্রশ্নের জবাব দিতে পরেছেন প্রধানমন্ত্রী।
ক্ষুব্ধ হয়ে শেখ সেলিম স্পিকারকে কার্যপ্রণালী বিধি সব সংসদ সদস্যদের স্মরণ রেখে শুধুমাত্র কী জানতে চান সে প্রশ্নটি সংক্ষেপে করার আহ্বান জানান। এছাড়া একটি লিখিত প্রশ্নের পরে সর্বোচ্চ একজনকে সম্পূরক প্রশ্ন করার অনুমতি দেয়ার কথা বলেন।
পরে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, আপনি যে আহ্বান জানিয়েছেন তা নিশ্চয়ই সব সংসদ সদস্য শুনেছেন। আজও আমি প্রতিটি প্রশ্ন কর্তার প্রশ্নের মাঝখানে ইন্টারাপ করছিলাম। বারে বারে বলছিলাম ‘মাননীয় সংসদ সদস্য আপনি প্রশ্ন করুন, প্রশ্ন করুন, ভূমিকার প্রয়োজন নেই,’ কেননা আমাদের সময়ের দিকে লক্ষ্য রেখে প্রশ্ন সাজাতে হয় এবং প্রশ্নকর্তার সংখ্যাও নির্ধারণ করতে হয়। সে কারণে সংসদে প্রশ্নকর্তারা যাতে শুধুমাত্র তাদের জিজ্ঞাসা সরাসরি করেন তা হলে সংসদ পরিচালনায় সুবিধা হবে।
স্পিকার এ সময় বলেন, আমি প্রতিটি লিখিত প্রশ্নের পরে আমার ক্ষমতা বলে শুধুমাত্র দুই জনকে সম্পূরক প্রশ্ন করার সুযোগ দিয়ে থাকি। যাতে সময় মেনে সংসদ পরিচালনার সুবিধা হয়।
উল্লেখ্য, বুধবার জাতীয় সংসদের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্দিষ্ট প্রশ্নকাল ৩০ মিনিটে বেশ কয়েকজন সম্পূরক প্রশ্ন করেন। তারমধ্যে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, এমপি কাজী ফিরোজ রশীদ, দিদারুল আলম ও ডা. রুস্তম আলী ফরাজী প্রধানমন্ত্রীকে সম্পূরক প্রশ্ন করার সময় নাতিদীর্ঘ বক্তৃতা করেন। অনেকে ৩০ সেকেন্ডের একটি প্রশ্ন করতে তিন মিনিটের বেশিও সময় নেন। এ সময় স্পিকার বেশ কয়েকবার তাদেরকে সরাসরি প্রশ্ন করার আহ্বান জানিয়েও ব্যর্থ হন। ফলে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত সময়ে ১৩টি তারকা চিহ্নিত প্রশ্ন থাকলেও তিনি মাত্র দুটি প্রশ্নের উত্তর দিতে সমর্থ হন।