শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

কয়রার প্রাথমিক শিক্ষায় ব্যাপক অগ্রগতি লাভ

খুলনা অফিস : খুলনার কয়রা উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষায় বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। মাত্র কয়েক বছর আগেও যে ছেলেমেয়েরা স্কুলের পরিবর্তে সময় কাটাতো বনে-বাদাড়ে, মাঠে-ঘাটে. গো-চারণে কিংবা খাল-বিলে মাছ ধরতে-আজ তারাই বিদ্যাপীঠে। পৃথিবীর একক ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন সংলগ্ন কয়রা উপজেলার শিক্ষার হার ছিল অনেক নিচে। স্কুলগামী ছাত্র-ছাত্রীর চেয়ে ঝরে পড়ার হারই ছিল বেশি। এর প্রধান কারণ ছিল সুন্দরবন অধ্যুষিত এই এলাকার জনগোষ্ঠী বরাবরই ছিল দরিদ্র আর অবহেলিত। তাদের প্রধান অন্তরায় ছিল বিদ্যালয় সঙ্কট, অনুন্নত রাস্তাঘাট, দরিদ্রতা, অশিক্ষা আর অবহেলা। সঙ্গত কারণেই প্রত্যন্ত এলাকার একজন মৎস্যজীবীর স্বপ্নের মধ্যেও ছিল না তার ছেলে-মেয়ে স্কুলে পড়বে, শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়ে দেশ সেবায় নিয়োজিত হবে। আর সুন্দরবন সংলগ্ন নদীর পাড়ের অধিকাংশ জেলের ধারণা ছিল তাদের ছেলেরাও মাছ ধরার পেশা বেছে নেবে। ফলে এই শ্রমজীবীদের ছেলেমেয়েরা শৈশব থেকেই বিদ্যালয়ের পরিবর্তে শিক্ষা নিতো মাছ ধরার কাজের। এই অবস্থায় এ এলাকায় শিক্ষার হার বাড়াকে অসম্ভব বলেই ধরে নিয়েছিল এখানকার মানুষ। কিন্তু শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে উপকূলীয় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণের এই আপাতত অসম্ভব কাজটিকে সম্ভব করতে সক্ষম হয়েছে বর্তমান সরকার। মাত্র ৫/৬ বছর আগে এ উপজেলায় যেখানে স্কুলগামী ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৭০ শতাংশ, সেখানে এখন তা বেড়ে ৯৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

জানা যায়, ২০১০ সালে কয়রায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল ৫৪টি। আর ২০১৩ সালে এর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১৪০টি। ৮৪টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের পাশাপাশি উপজেলার অধিকাংশ এলাকায় এখন প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। সেই সাথে এখানকার সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকের সংখ্যা সাড়ে ৫শ’ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৭৮৫ জনে উন্নীত হয়েছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসের এক জরিপের তথ্য অনুসারে, ২০১০ সালে কয়রার ঝরে পড়া শিশুর সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৫৮ জন, যা প্রতি বছর বৃদ্ধি পেত। ২০১০ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১৮ হাজারের নিচে। বর্তমানে এ উপজেলায় বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৫ হাজারেরও ওপরে।

বর্তমান সরকারের শিক্ষা নীতি এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব প্রদানের কারণেই কয়রা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষায় আমূল পরিবর্তন ঘটেছে বলে উল্লেখ করেছেন উপজেলার সহকারী শিক্ষা অফিসার নুর-ই এলাহী। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে একসাথে এত বিদ্যালয় কোনো সরকার জাতীয়করণ করতে পারেনি। শুধু তাই নয়, জাতীয়করণকৃত বিদ্যালয়ের শতভাগ ছাত্র ছাত্রীকে দেয়া হচ্ছে উপবৃত্তি। বছরের প্রথম দিনেই তাদের হাতে দেয়া হয় নতুন বই। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার জন্য আলাদা কক্ষ, আলাদা শিক্ষক, শিশুতোষ শিক্ষা উপকরণ দেয়া হয় প্রতিবছর। 

সহকারী শিক্ষা অফিসার আবু খালিদ বলেন, প্রতিটি বিদ্যালয়কে ভাল করে রাখার জন্য প্রত্যেক বছরই ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয় যার মাধ্যমে বিদ্যালয় রঙ করা, ফুল বাগান সৃষ্টি, শহীদ মিনার তৈরি ও পরিচর্যা করাসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়। এ ছাড়া বিদ্যালয়ে মেরামতের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় ৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা। ইতোমধ্যে অনেক বিদ্যালয়েই সরকার নিয়োগ দিয়েছেন একজন নৈশ প্রহরী। শিক্ষা অফিসে দেয়া হয়েছে কয়েকটি মোটরসাইকেল।

কয়রার প্রত্যন্ত জনপদ দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের জোড়শিং গ্রামের মিজানুর রহমান বলেন, তাদের ছেলে-মেয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য উদগ্রীব থাকে। অভিভাবকের আগেই ছেলে-মেয়েরা স্কুলে আসার জন্য তৈরি হয়ে যায়। এর কারণ হিসেবে তিনি জানান, বিদ্যালয়ে রয়েছে তাদের নানান খেলার সামগ্রী। খেলার ছলে তাদের শেখানো হয় লেখাপড়া। শেখানো হয় গান। তারা বলেন, স্কুলগুলোর চেহারা নান্দনিক হয়ে উঠেছে। এখন বিদ্যালয়গুলোর দিকে তাকালেই অন্যরকম এক ভালোবাসার জন্ম হয়। 

মনোরমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোল্যা কায়কোবাদ বলেন, বর্তমান সরকার যেভাবে শিক্ষাঙ্গনকে আলোর দিকে নিয়ে এসেছেন তা অতীতের সকল ইতিহাসকে হার মানিয়েছে।  উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. আবুল বাশার বলেন, কয়রার প্রাথমিক শিক্ষায় এ পরিবর্তন সকলের সহযোগিতায় সম্ভব হয়েছে। 

এ ব্যাপারে কয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিমুল কুমার সাহা বলেন, ২০১৮ সালে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় কয়রার পাসের হার ছিলো ৯৯.২৯% যা খুবই সন্তোষজনক। তিনি আরও বলেন, এলাকার অন্যান্য উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষা ক্ষেত্রে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ