বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা সবার আগে

অরণ্য আলভী তন্ময় : নিউজিল্যান্ডে অতি সম্প্রতি যে ঘটনা ঘটে গেল সেটা আরো একবার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন, নিরাপদ খুব বেশি প্রয়োজনীয় একটি নাম। পৃথিবীতে এখন সকচেয়ে আকাঙ্খিত নাম ’নিরাপত্তা’। এই নশ্বর ভূখন্ডে কে যে কোথায় নিরাপদ আর কোথায় অনিরাপদ সেটা বোঝা খুব মুশকিল হয়ে পড়েছে। এখন আর সন্ত্রাসীদের কোন নির্দিষ্ট এলাকা নেই, নেই কোন জাত কিংবা ধর্ম। নেই কোন আলাদা জাতিগোষ্ঠীর প্রতি বিদ্বেষও। অন্ততঃপক্ষে গত ১৫ মার্চ নিউজিল্যান্ডের ক্রাইষ্টচার্চে ঘটে যাওয়া ঘটনা থেকেই উপরের কথাগুলোর সত্যতা খুব সহজেই আঁচ করা যায়। এখানে আক্রমণের শিকার মসজিদে নামাজ পড়তে যাওয়া কিছু মুসলমান আর আক্রমণকারী একজন খ্রিষ্টান। যে দৃশ্য আগে খুব বেশি দেখা যায়নি। সবচেয়ে বড় কথা সদ্য শেষ হওয়া নিউজিল্যান্ড সফরে আক্রমণের শিকার হওয়া নুর মসজিদে শুক্রবারের জুমআর নামাজ পড়তে যাওয়ার কথা ছিল অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল, মেহেদি হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলামদের। মিনিট পাঁচেক আগে সেই মসজিদে পৌঁছালে হয়তো ঘটে যেত বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে মর্মদন্তু ঘটনা। সৃষ্টিকর্তা সেই দুর্ঘটনা থেকে যেমন বাঁচিয়েছেন খেলোয়াড়দের ঠিক তেমনি রক্ষা করেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটকে। হয়তো সরাসরি এই হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিলনা টাইগার ক্রিকেটাররা। কিন্তু কয়েক মিনিটের এদিক সেদিক হলেই ঘটে যেত বড় বিপদ। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে কি দিনে দিনে অনিরাপদ হয়ে উঠেছে ক্রিকেট নামক খেলাটিও। ২০০৯ সালে পাকিস্তানে শ্রীলংকা দলের উপর সন্ত্রাসী হামলার ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো দেশটিতে ফেরেনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। এরপর খুব বেশি আক্রমণের শিকার হতে হয়নি ক্রিকেটারদের। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের মতো ‘অতি নিরাপদ’ আর শান্তিপ্রিয় দেশও যে এখন সন্ত্রাসীদের হাত থেকে নিরাপদ নয় সেটি প্রমাণিত হলো আরো একবার। তাহলে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে কি সহজেই মুক্তি মিলছেনা মানুষের। বাংলাদেশ হয়তো এবারের মতো বদ বাচাঁ বেঁচে গেল, কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য কি নিজেরা নিরাপদ এই গ্যারান্টি পাওয়া গেল? মসজিদে জুমার নামাজকালীন এ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। ঘটনায় বহু মানুষ হতাহত হয়। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ক্রিকেটের ওয়েবসাইট ক্রিকইনফোর বাংলাদেশ প্রতিনিধি মোহাম্মদ ইসাম। অজ্ঞাতনামা এক মহিলা বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের বাসকে থামিয়ে দেয়। তারপর পার্ক দিয়ে দৌড়ে খেলোয়াড়রা হোটেলে এসে আশ্রয় নেয়। ১৬ মার্চ শুরু হওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড তৃতীয় টেস্ট। তার আগেরদিন অনুশীলন যতটুকু হয়েছে ততটুকু সেরে বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা ছুটতে চাইলেন কাছের মসজিদে। জুমার নামাজ আদায় করতে হবে। বাকিটা ফিরে সারা যাবে। ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালের কাছেই আল নূর মসজিদ। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সংবাদ সম্মেলনেও তাড়াহুড়া ছিল। তাও শেষ করতে সময় লাগল ৯ মিনিট। হয়তো এই কয়েক মিনিটের দেরি বাংলাদেশ দলকে বিশাল কোনো দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচিয়ে দিল। কিন্তু এটা নিশ্চিত, রাতের পর রাত বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের তাড়া করে বেড়াবে হয়তো এ দুর্ঘটনা। ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে নিউজিল্যান্ড সময় দুপুর দেড়টার দিকে ভয়ংকর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। দেশটির ইতিহাসে এমন ঘটনা কখনো ঘটেনি। জুমার নামাজ আদায় করতে গিয়ে মারা যাওয়া অন্তত ৪৯ জনের তালিকায় তিনজন বাংলাদেশির নাম আছে। কিন্তু টিম বাসে করে মাহমুদউল্লাহ-তামিম ইকবাল-মুশফিকুর রহিমরা যখন মসজিদের ৫০ গজের মধ্যে তখন কিংকর্তব্যবিমূঢ় সবাই। বাইরে কোনো গোলাগুলী ও হত্যাযজ্ঞের দৃশ্যের মঞ্চায়ন হচ্ছে যেন। কী নৃশংস, কী বীভৎস! বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার খালেদ মাসুদ এই চাক্ষুষ ঘটনাকে বর্ণনা করার সময় কাঁপছিলেন, ‘আমরা খুব কাছেই ছিলাম। মসজিদটা দেখতে পাচ্ছিলাম। বড়জোর ৫০ গজ দূরে ছিলাম। আমি বলব, আমরা খুবই ভাগ্যবান। আর ৩ কিংবা ৪ মিনিট আগে পৌঁছলে আমরা মসজিদেই থাকতাম। আরও ভয়ংকর কিছু হয়তো ঘটে যেতে পারত।’ সারা বিশ্ব হতবাক। বাংলাদেশ সময় সকাল থেকে এই দেশের মানুষ আরও বেশি উৎকণ্ঠায়। তাদের প্রিয় টাইগাররা যে ওই ঘটনার খুব কাছেই। কোচ স্টিভ রোডস তখনো মাঠে। টিম হোটেলে ফিরে গেছেন লিটন দাস, নাঈম হাসান ও স্পিন কোচ সুনীল যোশি। বলা চলে ভাগ্য বিধাতা সহায় হওয়ায় বড় রকমের বিপদের হাত থেকে বেঁেচ গেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। ক্রিকেটকে বলা হয়ে থাকে ভদ্রলোকের খেলা। সে কারণেই শান্তির রং সাদা পোশাকে টেষ্ট ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। কিন্তু নিউজিল্যান্ডে যা ঘটে গেল তা সত্যিই বেদনাবিধুর হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়ে থাকবে। এমন ভয়াবহ ঘটনার পর পুরো বিশ্বের মতো ক্রিকেটাঙ্গন জুড়েও শোকের ছায়া নেমে আসে। বিশ্বের অনেক সাবেক ও বর্তমান দেশি-বিদেশি ক্রিকেটাররা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোকবার্তা দিয়েছেন। মাহেলা জয়াবর্ধনে টুইটে লেখেন, ‘ক্রাইস্টচার্চে যা ঘটেছে তার জন্য খুবই দুঃখিত। ক্ষতিগ্রস্ত ও তাদের পরিবারের জন্য প্রার্থনা রইলো।’ কুমার সাঙ্গাকারা লেখেন, ‘ক্রাইস্টচার্চের গোলাগুলীর ঘটনা জানতে পেরে শঙ্কিত। প্রতিটি প্রিয় মানুষহারাদের জন্য আমার মন থেকে তাদের জন্য সমবেদনা ও সহানুভূতি। সবার জন্য প্রার্থনা ও ভালোবাসা রইলো এই দুঃখজনক ঘটনায়। সকল আহতদের দ্রু সুস্থতা কামনা করছি।’ ইংলিশ ক্রিকেটার ইয়ন মরগান তার টুইটে লিখেছেন, ‘খুবই খারাপ সংবাদ আজ ক্রাইস্টচার্চে সকালে যা ঘটেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আমার প্রার্থনা রইলো।’ অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক লিখেছেন, ‘ভয়াবহ সংবাদ পেলাম ক্রাইস্টচার্চের। এটা বিধ্বংসী। নামাজের সময়ে এমন ঘটনা খুবই দুঃখ দেয়।’ শহীদ আফ্রিদি লেখেন, ‘ক্রাইস্টচার্চে দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। আমি দেখেছি নিউজিল্যান্ড কতটা শান্ত ও বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ। তামিমের (ইকবাল) সঙ্গে কথা হয়েছে, সবাই নিরাপদে আছেন। পুরো বিশ্বের এক হওয়া উচিৎ। ঘৃণা বন্ধ হোক। সন্ত্রাসীদের কোনো ধর্ম নেই। আক্রান্তদের পরিবারের জন্য দোয়া ও ভালবাসা রইলো।’ বাংলাদেশের পেসার তাসকিন আহমেদ লিখেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ। দলের সবাই নিরাপদে হটেলে ফিরেছেন জেনে ভালো লাগছে। আশা করছি তারা শিগগিরই সুস্থভাবে দেশে ফিরবেন। এই অবুঝ সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের জন্য রইলো দোয়া।’ পেসার রুবেল হোসেন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ সব কিছুর মালিক। এই মসজিদে আমিও নামাজ পড়ে এসেছি। এটা একটা পরিকল্পিত হামলা। মহান আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া আমাদের ক্রিকেটারদের রক্ষা করেছেন এত বড় একটা দুর্ঘটনা থেকে। যে সমস্ত মুসলমান ভাইয়েরা মারা গেছে আল্লাহ তাদেরকে জান্নাত নসিব করুন আমিন।’ দেশের বাইরে অমুসলিম দেশে থাকলেও পবিত্র দিন শুক্রবারের জুমআর নামাজ মিস করতে চায়নি বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। সে কারণে কিছুটা তাড়াহুড়ো করে ম্যাচের আগেরদিন সংবাদ সম্মেলন শেষ করে মসজিদের দিকেই ছুটে যাচ্ছিলেন খেলোয়াড়রা। বাংলাদেশের টিম বাস থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরেই নারকীয় এই হামলার ঘটনা ঘটে। যেখানে নিরাপদেই রয়েছেন টাইগাররা। ঘটনার সময় হ্যাগলি ওভালের আক্রান্ত মসজিদের কাছেই মাঠে অনুশীলন শেষে নামাজ আদায় করতে যাচ্ছিলেন বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়রা। কিন্তু মসজিদের দিকে এগিয়ে যেতেই এক আহত নারীর মুখে হামলার কথা শুনে ফিরে আসেন দলের সবাই। আশ্রয় নেন টিম বাসে। কিন্তু তখনও থেমে থেমে গুলীর শব্দ শোনা যাচ্ছিল। সেসময় ইসএসপিএনক্রিকইনফো’র বাংলাদেশ প্রতিনিধি মোহাম্মদ ইশামকে ফোন করে বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল হামলার কথা জানানোর পাশাপাশি সহায়তা চান। ক্রিকইনফো’র সাংবাদিকের ওই মুহূর্তের অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, শুরুতে সিদ্ধান্ত হয়েছিল লিংকন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনডোর সুবিধা থাকায় সেখানেই অনুশীলন সেরে নেওয়া হবে। কিন্তু টিম হোটেল থেকে তা দূরে হওয়ায় সিদ্ধান্ত পাল্টানো হয়। ম্যাচের আগে প্রেস কনফারেন্সে অংশ নেন মাহমুদউল্লাহ। তবে দলের সবাই নামাজের জন্য  তৈরি হচ্ছিলেন দেখে একটু দ্রুতই কথা শেষ করেন তিনি। তারপরও ৯ মিনিট ধরে কথা বলেন তিনি। সংবাদ সম্মেলন শেষে দলের ১৭ জন সদস্য, যাদের মধ্যে ছিলেন দলের ম্যানেজার খালেদ মাসুদ পাইলটও, টিম বাসে রওয়ানা হন। এর প্রায় ১৭-১৮ মিনিট পরেই ক্রিকইনফো’র ওই সাংবাদিকের কাছে সহায়তা চেয়ে কল করেন তামিম। ফোনে বেশ আতঙ্কিত কণ্ঠে তামিম বলছিলেন, ‘এখানে গোলাগুলী চলছে, আমাদের বাঁচান।‘ যদিও প্রথমে এটাকে নিছক মজা হিসেবে নিয়েছিলেন ওই সাংবাদিক। কিন্তু ফোন কেটে দিয়ে ফের কল করে একই কথা বলেন তামিম। এবার তার কণ্ঠ ভারী হয়ে আসছিল। যে মসজিদে তারা প্রবেশ করতে যাচ্ছিলেন, সেখানে তখন গোলাগুলী চলছে জানিয়ে তামিম ওই সাংবাদিককে পুলিশে খবর দিতে বলেন। তামিমের কথা শুনে ওই মসজিদের দিকে দৌড়ে যান ওই সাংবাদিক। পথে এক নারী তাকেসহ আরও দুই বাংলাদেশি সাংবাদিককে লিফট দিলে দ্রুততম সময়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাজ্জব বনে যান সবাই। সেখানে তখন রীতিমত ভয়াবহ পরিস্থিতি। চারদিকে রক্ত আর লাশ। কয়েকটি পুলিশের গাড়ি আর অ্যাম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে আছে।  বিকৃত মানসিকতার মানুষরাই সাধারণত বিপথগামী হয়ে পরিণত হয়ে থাকে পশুতে। সেই পশুর হাতেই প্রাণ গেল অর্ধশতাধিকেরও বেশি মানুষের। কি কারণে এমন হামলা তা নিয়ে পুরো দুনিয়া জুড়েই চলছে নানা আলোচনা। ২৮ বছর বয়সী ওই হামলাকারী একজন শ্বেতাঙ্গ। তিনি অস্ট্রেলিয়া থেকে এসেছেন। দুই বছর ধরে হামলার পরিকল্পনা ছিল তার। যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম ডেইলি স্টারের অনলাইন সংস্করণে বলা হয়েছে, হামলা চালানোর আগে ৯৪ পৃষ্ঠার একটি ঘোষণাপত্র ছড়িয়েছেন তিনি। এতে ওই যুবক নিজেকে ব্রিন্টন ট্যারান্ট বলে পরিচয় দিয়েছেন। তিনি ‘সন্ত্রাসী হামলায় হাজার হাজার ইউরোপিয়ানের প্রাণহানির’ প্রতিশোধের প্রতিজ্ঞার কথা জানিয়েছেন ওই ঘোষণাপত্রে। ওই ঘোষণাপত্রে হামলার উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের ভূমি কখনোই তাদের ভূমি নয়। যতদিন পর্যন্ত শ্বেতাঙ্গরা বেঁচে থাকবে, ততদিন পর্যন্ত অমাদের বাসভূমি আমাদের। তারা কখনোই আমাদের ভূমি দখল বা আমাদের মানুষকে ভূমি ত্যাগ করাতে পারবে না।’ ২০১১ সালে নরওয়েতে হামলা চালিয়ে ৭৭ জনকে হত্যার ঘটনাকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ক্রাইস্টচার্চের হামলাকারী। তার ভাষ্য মতে, সুইডেনে হামলার প্রতিশোধ তার এ হামলা। হামলার সময় মাথার সঙ্গে লাগানো একটি বিশেষ ক্যামেরা দিয়ে ওই ঘটনা ফেইসবুকে লাইভ প্রচার করেন হামলাকারী। লাইভ শুরু করার সময় তাকে বলতে শোনা যায়, ‘এ পার্টি শুরু করা যাক।’ মূলত অভিবাসীদের কারণেই এ হামলা চালিয়েছিলেন তিনি। কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ নিরাপদ নয় বলে সফর বাতিল করেছিলেন ক্রিকেট অষ্ট্রেলিয়া। আর এই দেশটির একজন মানুষের হাতেই শেষ হতে বসেছিল লাল সবুজ জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা। বাংলাদেশে কোন ক্রিকেট দল আসলে তাদেরকে কয়েক স্থরের নিরাপত্তা দেওয়া হয়ে থাকে। সিরিজ শুরুর আগে সংশয় থাকলেও শেষে এসে আর তা থাকেনা। নয়তো অষ্ট্রেলিয়া সিরিজ বাতিলের পর ইংল্যান্ড বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। এবার নিউজিল্যান্ডের মসজিদে হামলার সময় বাংলাদেশ দলের সঙ্গে কোন প্রকার নিরাপত্তা বাহিনী ছিলনা। সেটাই এখন ভাবিয়ে তুলেছে বিসিবিকে। সে কারণে বাংলাদেশ দল ভয়াবহ হত্যাকান্ডের প্রত্যক্ষদর্শী হয়ে হেগলি ওভাল মাঠে ফেরার পরপরই তাদের সাথে যোগাযোগ হয় সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের। তিনি খেলোয়াড়দের সাথে কথা বলার পরপরই নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের সাথে কথা বলে ক্রাইস্টচার্চ টেস্ট বাতিল করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এবার বিদেশে গেলে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার বিষয়টি আগে নিশ্চিত করে তবেই যাবে বাংলাদেশ, এমনটি নিশ্চিত করে বোর্ড সভাপতি বলেন, ’বড় বিপদের হাত থেকে বেচেঁ গেছি আমরা। সে কারণে নিরাপত্তার ব্যাপারটিতে এখন নতুন করে নজর দেওয়ার সময় এসেছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে তবেই কোনো দেশে সফরে যাবে বাংলাদেশ দল। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মতো দেশে বাংলাদেশের তুলনায় নিরাপত্তা বলে কিছুই থাকে না বলে আমি দেখেছি’। এমন বড় একটি দুর্ঘটনার পর বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রা সংস্থা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) একটি দায়সারা প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিজেদের দায়িত্ব সেরেছে। স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ দিন পার করছে নিউজিল্যান্ড। ক্রিকেট বিশ্বে ঘটে যেতে পারতো সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা। একসঙ্গে পরপারে চলে যেতে পারতেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বেশ ৮-১০ জন ক্রিকেটার। তবে সৃষ্টিকর্তার দয়ায় বেঁচে গেছেন তারা। অজ্ঞাত এক নারীর সতর্কবার্তায় হামলাস্থল মসজিদে যাওয়ার রাস্তা থেকেই মাঠে ফিরে গিয়েছেন তামিমরা। এমন একটা দুর্ঘটনায় যেখানে আইসিসি যেখানে বাংলাদেশ দলকে সমুহ সমর্থন দেওয়ার কথা, সেখানে তারা দীর্ঘক্ষণ চুপ ছিল। পরে দায়সারা একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েই নিজেদের দায়িত্ব সেরেছে প্রতিষ্ঠানটি। যেখানে, দুর্ঘটনা পরবর্তী অবস্থায় বাংলাদেশ দলের কী করা উচিৎ, কিংবা নিউজিল্যান্ড সফর সম্পর্কিত দায়দায়িত্ব পালন করতে দেশটির ক্রিকেট সংস্থার কী করা উচিৎ তার কোনো পরামর্শ না দিয়েই দুই লাইনের একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে আইসিসি। বিজ্ঞপ্তি প্রতিষ্ঠানটি লিখেছে- ‘ক্রাইস্টচার্চে হামলার ঘটনায় আমরা শোকাহত। এ হামলায় নিহতদের পরিবার ও স্বজনদের জন্য আমাদের আন্তরিক সমবেদনা। দুই দলের খেলোয়াড়, স্টাফ এবং ম্যাচ অফিশিয়ালরা সবাই নিরাপদে আছে এবং ম্যাচ বাতিলের সিদ্ধান্তে আইসিসির রয়েছে পূর্ণ সমর্থন।’ নিজেদের ওয়েবসাইট ও টুইটারে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়সারা এই বিজ্ঞপ্তিটি দেয় আইসিসি। সবকিছু মিলিয়ে নিরাপত্তা যে কতটা প্রয়োজন সেটা আরো একবারের মতো জানা গেল। তবে এখন থেকে বিদেশ সফরের আগে নিরাপত্তা নিয়ে আগে থেকেই কাজ করতে হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ