শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

সোনারগাঁওয়ে শ্রমিক নিহতের খবরে মহাসড়ক অবরোধ

নারায়ণগঞ্জ সংবাদদাতা : নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে টিপুরদী এলাকায় অবস্থিত চৈতি কম্পোজিট গার্মেন্টের রিনা আক্তার (২৮) নামে এক শ্রমিক নিহত হওয়ার খবরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এ সময় শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে এলে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে  জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খ-সার্কেল) খোরশেদ আলম, সাংবাদিকসহ প্রায় অর্ধশত লোক আহত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর পরই কারখানা কতৃপক্ষ কারখানা দুই দিনের ছুটি ঘোষনা করে। মহাসড়ক অবরোধ চলাকালে ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। 

চৈতি গার্মেন্টের সুইং অপারেটর রুমা আক্তার ও লাইন ম্যান পংকজ জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে কারখানার মূল ভবনের তিন তলায় ১২ নং লাইনে সুইং অপারেটর হিসেবে কাজ করছিলেন রিনা আক্তার নামে এক শ্রমিক। তাকে ওই লাইনের ইনচার্জ জামালসহ কয়েক জন নির্যাতন করে হাত পা বেধে বাথরুমে ফেলে রাখে। পরে অন্য শ্রমিক বাথরুমে গেলে বিষয়টি দেখে নাজমা আক্তারসহ দুজন শ্রমিক জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এদিকে ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর কারখানার কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় কারখানা বিরতি দেওয়ার কথা থাকলে নির্ধারিত সময়ের ৩০ মিনিট আগেই বিরতি দিয়ে দেন।

পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ দ্রুত রিনা আক্তার নামে হাত পা বাধা শ্রমিককে গাড়ীতে করে কারখানা থেকে বের করে নেয় এবং পরের গাড়ীতে আহত দুই শ্রমিককে গাড়ি দিয়ে বের করার সময় শ্রমিকরা গাড়ী ভাংচুর করে আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে। শ্রমিকরা শ্রমিক নিহতের খবরে উত্তেজিত হয়ে প্রথমে কারখানার ভেতরে বিক্ষোভ করে। পরে উত্তেজিত শ্রমিকরা কারখানার পাশে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গিয়ে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে খন্ড খন্ড বিক্ষোভ মিছিল করে ১০/১২টি গাড়ি ভাংচুর করে। এর ফলে মহাসড়কের ১০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে সোনারগাঁও থানা পুলিশ, কাচঁপুর হাইওয়ে পুলিশ, কাচঁপুর শিল্প পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে শ্রমিকদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত করতে ফাঁকা গুলি ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে। শ্রমিক পুলিশের সংঘর্ষে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খণ্ড সার্কেল) খোরশেদ আলম, সোনারগাঁও থানার ওসি অপারেশন আলমগীর হোসেন, পুলিশ সদস্য আবুল হাসান, কনষ্টেবল শাহ আলম, রাখাল মিয়া, শিল্প পুলিশ সদস্য হযরত, রুবেল, সাংবাদিক হারুন অর রশিদ, আনোয়ার, ইউসুফ আলী, গাজী মোবারক, শ্রমিক বিথী, বৃষ্টি, শাহ আলম, রিদয়, সবুজসহ ৫০ জন আহত হয়েছে।

কারখানার উপ মহা ব্যবস্থাপক বদরুল আলম জানান, কারখানায় রিনা আক্তার নামে একজন শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েছে। শ্রমিক নিহতের গুজবে শ্রমিকরা প্রথমে কারখানার ভেতরে অবস্থান নিয়ে কারখানা ভাংচুর ও কারখানার একটি গাড়ি ভাংচুর করে। পরে তারা মহাসড়ক অবরোধ করে বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর চালিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে কারখানা দুই দিনের জন্য ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

সোনারগাঁও থানার ইন্সপেক্টর অপারেশন আলমগীর হোসেন জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। অবরোধকারীদের শান্ত করতে পুলিশ ৪১ রাউন্ড ফাঁকা গুলী ও ১০ রাউন্ট টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। মহাসড়কে যানচলাচল শুরু করেছে। 

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খ) অঞ্চল খোরশেদ আলম জানান, কারখানায় শ্রমিক নিহত হওয়ার খবরে শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করেছে। পরে শ্রমিকদের স্বাভাবিক করতে গেলে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এসময় আমিসহ আমার ৬জন পুলিশ সদস্য ও সাংবাদিক আহত হয়। এ সময় তাদের শান্ত করতে শ্রমিকদের লাঠিচার্জ করে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়েছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ