বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

খুলনায় ভারতীয় ভিসা প্রাপ্তির জটিলতা কমেনি

খুলনা অফিস : প্রায় এক মাস হতে চলেছে খুলনায় সহকারী ভারতীয় হাই কমিশনারের কার্যালয়ের মাধ্যমে ভারতীয় ভিসা প্রসেসিং কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কিন্তু জটিলতা কমেনি। বরং আগে যেখানে ১০/১২ দিনের ব্যবধানে ভিসা মিলত এখন সময় নেয়া হচ্ছে আরও বেশি। এতে খুলনা, বাগেরহাট বা গোপালগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে খুলনা ভিসা আবেদন ফরম গ্রহণকেন্দ্রে এসেও ভিসা ও পাসপোর্ট না পেয়েই ফেরত যেতে হচ্ছে ভারত গমনেচ্ছুদের। আবার আগে ভিসার আবেদন ফরম দিনে দিনেই পূরণ করে জমা দেয়ার সুযোগ থাকলেও এখন কমপক্ষে একদিন আগে ফরম পূরণ না করা হলে ওই আবেদন ফরম জমাও নেয়া হচ্ছে না। এতে খুলনার প্রত্যন্ত অঞ্চল কয়রা-দাকোপ, বাগেরহাটের শরণখোলা বা গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া, টুঙ্গিপাড়া থেকে আসা আবেদনকারীদের একদিন খুলনায় অবস্থান করেই ফরম জমা দিতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত পয়লা মার্চ থেকে খুলনাস্থ ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনের মাধ্যমে ভারতীয় ভিসা দেয়া হচ্ছে। নগরীর বয়রাস্থ খুলনা সরকারি মহিলা কলেজের সামনের একটি ভাড়া বাড়িতে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে আগের মত আবেদন ফরম গ্রহণ করা হচ্ছে নগরীর শেখপাড়া তেঁতুলতলা কেন্দ্রেই।
আগে ঢাকার ভারতীয় হাই কমিশন থেকে ভিসা দেয়া হলেও এক মাস ধরে খুলনায় সহকারী হাই কমিশনের মাধ্যমে ভিসা দেয়ায় ভারত গমনেচ্ছুদের কি ধরনের সুবিধা হয়েছে জানতেই গত কয়েকদিন সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিচরণ এবং ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে অনেক অনিয়মের অভিযোগ মিলেছে। বিশেষ করে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন ফরম পূরণ করে তাৎক্ষণিক জমা দিতে গিয়ে অনেকেই নাজেহাল হয়েছেন। নগরীর বানরগাতি এলাকা থেকে আগত মো. আলী হোসেন নামের এক ব্যক্তির আবেদন ফরম ১৮ মার্চ ঠিক মত জমা নেয়া হয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন। পরে তার স্ত্রী এসে ওই আবেদন ফরম আবারো জমা দেন।
রূপসা বেড়িবাঁধ রোড থেকে আসা শুকুর আলী ঢালী নামের এক বৃদ্ধ গত ২৪ মার্চ এসে আবেদন জমা দিতে পারেননি। ১৯৮৬ সালে ব্যাংকে হিসাব খোলার পর তিনি কোন লেনদেন না করায় তার ওই আবেদনপত্র গ্রহণ করা হয়নি বলে তাকে জানানো হয়। পরে ওই হিসাবেই বেশি টাকা জমা দিয়ে ২৫ মার্চ আবেদন জমা দেয়া হয়। দাকোপের মিল্টন রায় নামের এক ব্যক্তি নতুন ব্যাংক হিসাব খুলে ষ্টেটমেন্ট নিয়ে আসলে তার আবেদন ফরমটি গ্রহণ করা হয়নি।
ভারতীয় ভিসার জন্য আবেদন ফরম জমা দিতে এসে নাজেহাল হওয়ার ঘটনাও ঘটছে অহরহ। খুলনার একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ভারতীয় ভিসার আবেদন করেন গত ১৩ মার্চ। গত বুধবার তার পাসপোর্ট প্রদানের দিন ছিল। কিন্তু তিনি ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রে এসে ফিরে যান। মো. রেজাউল হক নামের ওই ব্যবসায়ী বলেন, তার পাসপোর্টে চীনসহ বেশ কয়েকটি দেশের ভিসা রয়েছে এবং তিনি ভারতীয় ভিসা পাওয়া সাপেক্ষে অন্যান্য দেশে যাবেন এমনটিও পরিকল্পনা করে রেখেছেন। কিন্তু নির্দিষ্ট দিনে তিনি পাসপোর্ট না পাওয়ায় তাকে অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হতে পারে বলে আশংকা রয়েছে।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মিসেস শাহিনা নামের এক নারী ভারতীয় ভিসার জন্য আবেদন জমা দেন। গত বুধবার পর্যন্ত তার পাসপোর্টটিও আসেনি।
শেখপাড়া তেঁতুলতলা এলাকার কয়েকজন ভিসা আবেদন ফরম পূরণকারীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, খুলনায় ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনারের অফিস স্থাপনের আগে ঢাকায় যেসব আবেদন করা হয়েছে তাদের মধ্যেও অনেকে এখনও ভিসা পাননি।
ভিসার আবেদনের সাথে ব্যাংক স্টেটমেন্ট জমা দেয়া হলেও মেডিকেল ভিসার ক্ষেত্রে ডলার ইনডোর্স ছাড়া আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে না। আবার একই পরিবারে একাধিক সদস্য মেডিকেল ভিসার আবেদন করলে প্রত্যেকের জন্যই ডলার ইনডোর্স বাধ্যতামূলক করার নিয়ম রয়েছে। এমন একজন আবেদনকারী গত বুধবার আসেন গোপালগঞ্জের জনতা রোড থেকে। আবেদন ফরমটি তিনি গোপালগঞ্জ থেকেই পূরণ করে নিয়ে এসেছেন। মেডিকেল ভিসার জন্য স্বপন কুমার বালী নামের ওই ব্যক্তির আবেদনের সাথে নিয়ে আসেন একটি ব্যাংক ষ্টেটমেন্টও। কিন্তু আবেদনকেন্দ্রে সেটি গ্রহণ না করায় তিনি বিকাশের মাধ্যমে টাকা এনে ১৪ হাজার ১৫৭ টাকা দিয়ে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার খুলনা শাখা থেকে ডলার ইনডোর্স করেই ফরম জমা দেন। আগামী ৮ এপ্রিল তার পাসপোর্ট ডেলিভারীর কথা।
এবিষয়ে খুলনার ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সময় দিতে পারেননি।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির মহাসচিব শেখ আশরাফ-উজ-জামান বলেন, যে উদ্দেশ্য নিয়ে খুলনায় ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনের অফিস স্থাপন করা হয় সে উদ্দেশ্য এখনও সফল হয়নি বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। আগের চেয়ে এখন সমস্যা তৈরি হচ্ছে, ভিসা দেয়া হচ্ছে না, সহজের চেয়ে আরও বিড়ম্বনা বাড়ছে। খুলনাঞ্চলের মানুষের ভোগান্তি লাঘবে তিনি এ সমস্যার দ্রুত সমাধান দাবি করেন। কেননা বাংলাদেশ থেকে যারা ভারতে যায় তাদের অধিকাংশই গিয়ে থাকেন চিকিৎসার উদ্দেশ্যে। সুতরাং ভিসা প্রসেসিং প্রক্রিয়া সহজ করা হলে রোগীদের জন্যই মঙ্গলজনক হবে বলেও তিনি মনে করেন।
খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব এডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, ভারতীয় ভিসা প্রাপ্তির এমন জটিলতার জন্য বাংলাদেশ সরকারের নতজানু বৈদেশিক নীতিই দায়ী। যেহেতু বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশের সরকারই ভিসা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রাজস্ব পেয়ে থাকে সে জন্য উভয় দেশের সরকারকেই এ ব্যাপারে আন্তরিকভাবে পদক্ষেপ নেয়া উচিত। সেই সাথে তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও এ ব্যাপারে সক্রিয় হওয়ার আহবান জানান।
অবশ্য ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনের সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরলেন খুলনা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র সভাপতি কাজি আমিনুল হক। তিনি বলেন, যেহেতু নতুন অফিস এবং এর সেটআপও এখন পর্যন্ত পুরোপুরি হয়নি সেহেতু কিছুটা সমস্যা হতেও পারে। তাছাড়া সীমিত জনবল দিয়ে সম্পূর্ণ সার্ভিস দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে দ্রুত যাতে এ সমস্যা সমাধান হয় এমনটিও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। খুলনায় সহকারী হাই কমিশনের অফিস হওয়ায় জরুরি ক্ষেত্রে ভিসা পাওয়া যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সম্প্রতি খুলনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার এক কর্মকর্তাকে এক দিনের মধ্যেই ভিসা দেয়া হয়। এটি একটি ইতিবাচক দিক বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তবে অন্যান্য গৃষ্ট সমস্যা সমাধান করে খুলনাস্থ ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনের অফিসটি জনবান্ধব হয়ে উঠবে এমনটিও আশাবাদ ব্যক্ত করেন চেম্বার সভাপতি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ