শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

চিংড়ি ঘেরের বেড়িবাঁধে সবজি চাষে কৃষকের পারিবারিক পুষ্টি ও আর্থিক সামর্থ বাড়ছে

খুলনা অফিস : খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সেলের অর্থায়নে এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিন পরিচালিত একটি গবেষণা প্রকল্পের ফলাফল উপস্থাপন উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে তথ্য উপস্থাপন করা হয় যে, বাগেরহাটের ফ্রেস ওয়াটার (মিঠা পানি) এলাকার গলদা চিংড়ি চাষিরা ঘেরের বেড়িবাঁধে যে সবজি চাষ করেন তাতে তাদের পারিবারিক পুষ্টির যোগান বেড়েছে এবং আর্থিকভাবেও তারা লাভবান হচ্ছেন। অনেক সময় ঘেরে মড়ক বা অন্য কোনো কারণে গলদা চিংড়ির উৎপাদন আশানুরূপ না হলেও বছরব্যাপী সবজি চাষের মাধ্যমে তাদের যে আয় হয় তাতে সে ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে। তা না হলে কেবল চিংড়ি চাষ তাদের জন্য আর্থিকভাবে বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হতো। গবেষণায় আরও বলা হয় এখনও এসব ঘেরের বেড়িবাঁধে সবজি চাষ ঠিক পরিকল্পিতভাবে হয় না। পরিকল্পিতভাবে তা করা গেলে উৎপাদন ও আয় দুইই বাড়তে পারে। বেড়িবাঁধে সবজি চাষকে বহুমুখী ও বছরব্যাপী করার প্রযুক্তি উদ্ভাবনের তাগিদ দিয়ে বলা হয়, পদ্মা সেতু চালু হলে রাজধানীতে টাটকা সবজির সরবরাহে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে এবং চাহিদা ও দরও বাড়তে পারে। সারাবছর যাতে ঘেরের ভেড়িতে সবজি উৎপাদন করা যায় এ জন্য একটি ফসল পঞ্জিকা অনুসরণেরও তাগিদ দেওয়া হয়। গবেষণায় দেখা যায়, যেসব কৃষক কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ বা অন্যান্য এ ধরনের প্রতিষ্ঠান থেকে কারিগরি জ্ঞান নিয়ে সবজি চাষ করেন তারা বেশি লাভবান হচ্ছেন। বিশেষ করে সার প্রয়োগ, বালাই নাশক ব্যবহার, সেচ ও অন্যান্য কারিগরি বিষয়ে কৃষকের মধ্যে এখনও জ্ঞানের অভাব রয়েছে। আবার সময়মতো ভালো বীজ, সার, কীটনাশক প্রাপ্তি ও প্রয়োগের অভাবও রয়েছে। দেশের মোট জমির শতকরা ২০ এবং চাষাবাদযোগ্য জমির ৩০ ভাগ উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থিত বলে তথ্য উপস্থাপন করে বলা হয়, বন্যা খরা ঝড় বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে যখন সবজি চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তখনও বেড়িবাঁধের সবজী উৎপাদন অব্যাহত থাকে এবং তা এ ক্রান্তিসময়ে রাজধানীসহ বিভিন্ন অঞ্চলের অনেকটাই চাহিদা মেটায়। বাগেরহাটসহ এতদাঞ্চলে ঘেরের বেড়িবাঁধে সবজি চাষ ও উৎপাদন বাড়ছে বলে উল্লেখ করে বলা হয় এখন এক শতক বেড়িবাঁধের জমি থেকে বছরে ২১৮ কেজি সবজি পাওয়া যাচ্ছে যা আরও বাড়ানো যায়। চিংড়ি ঘেরের এই সবজি চাষে ব্যবস্থাপনাগত ও কারিগরি বিষয়ে কৃষককে আরও দক্ষ করে তুলতে পারলে আর্থ-সামাজিকভাবে তা আরও ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে বলেও উল্লেখ করা হয়। সেমিনারে এ ব্যাপারে বেশ কয়েকটি সমস্যা তুলে ধরে সম্ভাবনা ও সুপারিশের কথাও উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া বাগদা চিংড়ির ঘেরের ভেড়িবাঁধেও সবজি চাষের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে বলা হয় ওই এলাকার জন্যও টেকনিক্যাল সাপোর্ট প্রয়োজন।  বাগেরহাটের মোল্লাহাটের তিনটি ইউনিয়নের চিংড়ি ও একই সাথে ঘেরের বেড়িতে সবজি চাষিদের ওপর এ গবেষণা সমীক্ষা পরিচালিত হয়। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রধান প্রফেসর ড. সরদার শফিকুল ইসলাম। প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জীববিজ্ঞান স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. মো. রায়হান আলী ও গবেষণা সেলের পরিচালক প্রফেসর এ কে ফজলুল হক। সূচনা বক্তব্য রাখেন গবেষণা প্রকল্পের প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ বশীর আহমেদ। পাওয়ার পয়েন্টে গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করেন প্রকল্পের সহযোগী ইনভেস্টিগেটর প্রফেসর ড. মো. মতিউল ইসলাম। সেমিনারে ডিসিপ্লিনের শিক্ষক, পিএইচ. ডি ও মাস্টার্সরত শিক্ষার্থী ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ অংশ নেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ