বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

ড্রেন-বক্সকালভার্ট ও স্টর্ম স্যুয়ারেজ লাইনগুলোর ৮০ শতাংশই ভরাট

গতকাল মঙ্গলবারের বৃষ্টিতে রাজধানীর মিরপুর কাজীপাড়া এলাকার চিত্র -সংগ্রাম

মোহাম্মদ জাফর ইকবাল : মাত্র এক ঘন্টার বৃষ্টিতেই অচল হয়ে পড়ে পুরো রাজধানী। বিভিন্ন সড়কে জমে যায় হাঁটুপানি। এতে করে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। নগরবাসী পড়েন চরম ভোগান্তিতে। এটি গত সোমবারের চিত্র। গতকাল মঙ্গলবারও দুই দফা রাজধানীতে বৃষ্টি হয়েছে। এতেও পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার ৪৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। সামান্য এই বৃষ্টিতেই হাঁটুপানি জমে বিভিন্ন সড়কে। অবস্থা এতটাই খারাপ যে, সামান্য এই বৃষ্টিতেই কোথাও হাঁটু পরিমাণ আবার কোথাও বুক পরিমাণ পানি দেখা যায়। রাজধানীর বিভিন্নস্থানে নৌকা চলাচল করতে দেখা গেছে। এতো অল্প পরিমাণ বৃষ্টিতেও কেন ভয়াবহ এই পানিবদ্ধতা, এই প্রশ্ন নগরবাসীসহ সংশ্লিষ্টদের। তারা বলছেন, এতো কেবল বর্ষার আগমনী বার্তা। এরপর আসল বর্ষা শুরু হলে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, তা আঁচ করতে বেশিদিন অপেক্ষার বোধ হয় প্রয়োজন নেই। আগামী মাসেই পবিত্র মাহে রমজান। রোজা-রমজানের মাসে যদি এভাবে সামান্য বৃষ্টিও হয় তাহলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হবে। নগরবিদরা বলছেন, রাজধানীর ড্রেনেজ ব্যবস্থার দুরাবস্থার পাশাপাশি পানি নিষ্কাষণের পথগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে।
সামান্য বৃষ্টিতে পানিবদ্ধতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ মাজহারুল ইসলাম বলেন, সাবেক এলজিআরডি মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন দুই বছর আগে বলেছিলেন, রাজধানীতে আর পানিবদ্ধতা হবে না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে তার উল্টোটা। এর প্রধান কারণ- রাজধানীর পানি নিষ্কাশন পয়েন্ট অর্থাৎ খালগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে পানি বের হতে পারছে না। তিনি আরও বলেন, ঢাকার খাল ও পানি নিষ্কাশন নালাগুলোকে প্রবাহমান করা না গেলে পানিবদ্ধতার সমাধান হবে না। এ ব্যাপারে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ঢাকার খালগুলো খনন করে সচল করতে হবে। খালগুলো যাতে পুনর্দখল না হয়, সে ব্যাপারেও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
জানা গেছে, রাজধানীতে মেট্টোরেলের জন্য রাস্তাকাটা, মহানগরীজুড়ে রাস্তাঘাট খোঁড়াখুঁড়ি, অলিগলি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ, অবৈধভাবে খাল দখলের কারণে পানি সরতে পারছে না। এর ফলে পয়ঃনিষ্কাশন ড্রেনগুলো প্রায়ই বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে বিভিন্ন প্রকল্পের নির্মাণকাজ সময়মতো সম্পন্ন না হওয়ায় যেখানে-সেখানে পানি জমে থাকছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকার পানিবদ্ধতাকে পাশ কাটানোর জন্য অনেক সময় পৃথিবীর দামি দামি শহরের উদাহরণ টেনে আনা হয়। এটা কোনো যুক্তি হতে পারে না। মনে রাখা দরকার, দেড় কোটির ওপর জনসংখ্যার এ শহর শুধু বাংলাদেশের রাজধানীই নয়, এটি ১৬ কোটি মানুষের সব কর্মকা-ের কেন্দ্রভূমি। প্রতিনিয়ত সারা দেশের লাখ লাখ মানুষকে এ শহরমুখী হতে হয়। ছোট্ট একটা কাজের ফয়সালার জন্য পড়িমরি করে ঢাকায় আসতে হয়। প্রতিদিনের আহার জোগানোর জন্য লাখ লাখ মানুষকে ঘরের বাইরে যেতে হয়। পৃথিবীর কোনো শহরের এ বৈশিষ্ট্য নেই। তাই সর্বোচ্চ শ্রম, প্রচেষ্টা, আন্তরিকতা দিয়ে ঢাকাকে পানিবদ্ধতামুক্ত রাখতেই হবে।
সূত্র মতে, ঢাকার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা এমন পর্যায় পৌঁছেছে যে, ঘণ্টায় ১০ মি.লি. বৃষ্টিতে প্রধান সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টির পানি প্রথমত ভূগর্ভ শোষণ করে নেয়। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, অপরিকল্পিত নগরায়নে উন্মুক্ত জমি, দালান ও কংক্রিটে ঢেকে যাওয়ায় পানি চুয়ে নিচে যেতে পারছে না। ‘রান অব ওয়াটার’ এ পরিণত হওয়া এ পানি সিটি কর্পোরেশনের ২ হাজার ৫০০ কিলোমিটার উন্মুক্ত ড্রেন দিয়ে বয়ে ১০ কিলোমিটার বক্সকালভার্ট ও ৩৫০ কিলোমিটার স্টর্ম স্যুয়ারেজ হয়ে নদীতে গিয়ে পড়ার কথা। একসময় এ নগরীর পাশ দিয়ে প্রবাহিত হওয়া ৪টি নদী ও ৬৫টি খাল পানি নিষ্কাশনে বিশেষ ভূমিকা রাখত। ২০১০ সালে প্রণীত ড্যাপ (ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান)-এ ঢাকা মহানগরীতে ৫ হাজার ৪২৩ একর জায়গা জলাশয়, ২০ হাজার ৯৩ একর খাল-নদী, ৭৪ হাজার ৫৯৮ একর বন্যা প্রবাহ অঞ্চল হিসেবে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কিন্তু ১৯৭৮ সালে ঢাকার ২৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের নদী-খাল দখল হয়ে ২০১৪ সালে ১০.২০ বর্গকিলোমিটার পরিণত হয়েছে। ফলে পানিবদ্ধতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এগুলো দখলমুক্ত করে বৃষ্টির পানি খাল ও নদীতে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। শহরের অভ্যন্তর ও ঢাকার চারপাশের খাল, নদী পুনরুদ্ধার করে সার্কুলার ওয়াটারওয়ে তৈরি করতে হবে।
নগরবিদরা বলছেন, রাস্তা তৈরি, মেরামত এবং রাস্তার ধারে স্থাপনা নির্মাণের জন্য ইট, বালু, সিমেন্ট, রড ও অন্যান্য দ্রব্যাদি রাস্তার ওপরে ও পাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এতে যানবাহন ও পথচারীদের চলাচলে যেমন অসুবিধা হয়, একইভাবে ওই সরঞ্জামগুলো ড্রেন, নালার পানি প্রবাহকে রুদ্ধ করে পানিবদ্ধতা তৈরি করে। তাই সব সময় রাস্তা ও এর আশপাশ এবং ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের আওতায় সব ড্রেন-নালা নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ড্রেন পরিষ্কারের নামে ময়লা তুলে ড্রেনের পাশে রাখা চলবে না। ঝড়বৃষ্টি, বাতাসে ওগুলো কিন্তু আবার ড্রেনেই ফিরে যায়।
সিটি কর্পোরেশনের এক কর্মকর্তা বলেণ, পানিবদ্ধতার সব দায়-দায়িত্ব শুধু সরকার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওপর চাপিয়ে দিলেই চলবে না। নগরে বসবাসকারীদেরও কিছু দায়-দায়িত্ব পালন করতে হবে। ময়লা-আবর্জনা, পলিথিন, অন্যান্য অপচনশীল ও কঠিন বর্জ্য যেখানে-সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ফেলা চলবে না। অনেক বাড়ির মালিক তাদের বাসাবাড়ি ও স্থাপনার সামনের রাস্তা, ড্রেন কেটেখুঁড়ে এবং ম্যানহোলের ঢাকনা উন্মুক্ত করে নিজের সমস্যার ফয়সালা করতে গিয়ে পুরো সিস্টেমকেই ঝামেলায় ফেলে দেয়। যে কোনো সমস্যায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে সমাধান চাওয়াই সঠিক পন্থা। আমাদের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। একইভাবে সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে তৎপর থাকতে হবে; কোথাও কোনো সমস্যা তৈরি হলে তাৎক্ষণিকভাবে তা নিরসনের উদ্যোগ নিতে হবে।
সূত্র মতে, রাজধানীতে পানিবদ্ধতা নিরসনে সংশ্লিষ্টদের প্রস্তুতি চলছে যথেষ্ট ঢিমেতালে। পানি নিষ্কাশনের কাজে ব্যবহূত ড্রেন-খাল পরিষ্কারেও নেই জোর তৎপরতা। এ নিয়ে সিটি করপোরেশন আর ওয়াসার মধ্যে রশি টানাটানি তো আছেই। রাজধানীর পানিবদ্ধতা নিয়ে গবেষণা করা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সিপ ইন্টারন্যাশনালের ‘জার্নি টুওয়ার্ডস ডিসাস্টার রেসিস্টেন্ট ঢাকা সিটি’ প্রকল্পের সমন্বয়ক সাইফুন নাহার বলেন, এবার বর্ষা মওসুমে রাজধানীবাসীর যে কী অবস্থা হবে সেটা বলে বোঝানো যাবে না। পরিকল্পনাহীনতা, সমন্বয়হীনতা, কাজে গাফিলতি, ড্রেন পরিষ্কার না করেই বিল তুলে খেয়ে নেওয়াসহ উন্নয়নমূলক কাজগুলো এবার খুবই ভোগাবে। ড্রেনগুলো এখনো ঠিকমতো পরিষ্কার করা হচ্ছে না। রাজনৈতিক কর্মীদের এসব কাজ দেওয়া হচ্ছে। ফলে তারা কাজ না করেই বিল তুলে নিচ্ছে। আমরা দেখছি, সিটি করপোরেশন ও ওয়াসা দৈনন্দিন কাজের বাইরে কিছুই করছে না। মেট্রোরেলসহ একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থার যেমন দুরবস্থা, তেমনি পানি নিষ্কাশনের প্রধান এই মাধ্যম ড্রেন নিয়েও চলছে সিটি করপোরেশন ও ঢাকা ওয়াসার মধ্যে আছে রশি টানাটানি। ১৯৯৬ সালের পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ আইনের ১৭ ধারায় বলা আছে, ঢাকা ওয়াসা পানি নিষ্কাশনের জন্য বড় ড্রেন নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও খাল দেখভাল করবে। অন্যদিকে সিটি করপোরেশন আইন ২০০৯-এর তৃতীয় তফসিলে বলা হয়েছে, ছোটখাটো নালা, ড্রেন নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করবে সিটি করপোরেশন। এই আইনের সুযোগে তারা পরস্পরের ওপর দোষ চাপিয়ে যাচ্ছে।
ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান বলেন, আমাদের তো মূল কাজ ভিন্ন। আমরা সেটা করি। পাশাপাশি বর্ষা মওসুমের প্রস্তুতি হিসেবে আমাদের যতটুকু করা দরকার, আমরা সেটা করছি। পুরো ড্রেন পরিষ্কার রাখার কাজটা সিটি করপোরেশনের। তারা নিশ্চয় সেই কাজটা করছে। আর খালগুলোর মধ্যে ২ হাজার কিলোমিটার পরিষ্কার রাখবে সিটি করপোরেশন। ওয়াসা শুধু ৩০০ কিলোমিটার খাল পরিষ্কার রাখবে। আমাদের যেটা পরিষ্কার রাখার কথা, সেটা পরিষ্কারে আমরা কাজ শুরু করেছি। পাশাপাশি ঢাকা শহরে বৃষ্টিতে জমে যাওয়া পানি পাম্প করে সেচে ফেলতে হয়। আমাদের পাম্পগুলো আমরা রক্ষণাবেক্ষণ করে ঠিক রাখার চেষ্টা করছি। মোট কথা আমাদের প্রস্তুতি আমরা নেওয়ার চেষ্টা করছি।
অনেক আগে থেকেই ঢাকা ওয়াসা বলে আসছে, ড্রেন দেখভালের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। আর সিটি করপোরেশন বলছে, ওয়াসার ম্যান্ডেটের মধ্যেই ড্রেনের মালিকানা দেওয়া আছে। এ অবস্থায় পানিবদ্ধতার ক্ষেত্রে দুই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের মধ্যে আছে ব্যাপক সমন্বয়হীনতা। এবার এই সংকট আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে। ওয়াসার অভিযোগ, সিটি করপোরেশন সারফেস (উন্মুক্ত) ড্রেনগুলো পরিষ্কার রাখে না। সিটি করপোরেশন বলে ওয়াসা বক্সকালভার্ট ও স্টর্ম স্যুয়ারেজ ড্রেন পরিষ্কার রাখে না। পরিষ্কারের নামে প্রকৌশলী-ঠিকাদার টাকাগুলো লুটে নেয়। এই ঠেলাঠেলিতে পড়ে কাজগুলো ঠিকভাবে এগুচ্ছে না।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গত মাসেই আমরা ওয়াসা আর পানি উন্নয়ন বোর্ডÍ সবাই মিলে বৈঠক করেছি। এখানে ঠেলাঠেলি নয়, সবাই মিলেই একসঙ্গে কাজ করব। ওয়াসার সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে, তারা বলেছে, সবকিছু একসঙ্গেই হবে। সামনেই বর্ষা মওসুম, এখন আর দেরি করার সময় নেই। সবাই মিলেই কাজটা করতে হবে। আমরা সিটি করপোরেশনের কাজটা শুরু করেছি, ওয়াসাও তাদের কাজটা শুরু করবে। আমরা চেষ্টা করব যতটা কম রাখা যায় পানিবদ্ধতা।
জানা গেছে, রাজধানীতে প্রায় ১০ কিলোমিটার বক্সকালভার্ট রয়েছে। এই বক্সকালভার্ট বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের অন্যতম মাধ্যম। এছাড়া রয়েছে সাড়ে তিনশ কিলোমিটার স্টর্ম স্যুয়ারেজ লাইন। এ দুটি মাধ্যমেই বৃষ্টির পানি বিভিন্ন জলাশয়, খাল বা নদীতে পড়ে। এগুলো দেখভাল করে ঢাকা ওয়াসা। এছাড়া ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের রয়েছে ২ হাজার ৫১ কিলোমিটার উন্মুক্ত (সারফেস) ড্রেন। মূলত বৃষ্টির পানি ওই সারফেস ড্রেন দিয়ে বক্সকালভার্ট বা স্টর্ম স্যুয়ারেজ লাইনে প্রবেশ করে। স্টর্ম স্যুয়ারেজ লাইন বা বক্সকালভার্ট দিয়ে সরাসরি সেই পানি নিচু জলাশয়ে গিয়ে জমা হয়। কিছু পানি পাম্প করেও বের করা হয়। জানা যায়, প্রতিবছর বর্ষা মওসুম শেষে দেখা যায় বক্সকালভার্ট ও স্টর্ম স্যুয়ারেজ লাইনগুলোর অন্তত ৮০ শতাংশই ভরাট হয়ে যায়। সেগুলো পরিষ্কারের জন্য প্রতি বছর অক্টোবর মাস থেকেই নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এবার সেই উদ্যোগ নিতে বেশ দেরি হয়ে গেছে। এখনও সেই কাজ পুরোপুরি শুরু হয়নি।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানান, স্টর্ম স্যুয়ারেজ ও বক্সকালভার্ট পরিষ্কারের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার। আর সারফেস ড্রেন পরিষ্কারের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। সারফেস ড্রেনগুলো পরিষ্কারের ব্যাপারে দুই সিটি করপোরেশন কাজ করছে। কিন্তু বক্সকালভার্ট ও স্টর্ম স্যুয়ারেজ যদি পরিষ্কার করা না হয় তাহলে সারফেস ড্রেন পরিষ্কার করে কোনো লাভ হবে না। তারা বলেন, কারণ সারফেস ড্রেনের পানি বক্স কালভার্ট ও স্টর্ম স্যুয়ারেজ ড্রেন দিয়েই যায়। সেগুলো পরিষ্কার না হলে বৃষ্টির পানি রাস্তার ওপরেই ভাসতে থাকবে। তবে সিটি করপোরেশন সারফেস ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করে। এবারও সেটা করছে।
জানা গেছে, পানিবদ্ধতা নিরসনের জন্য ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে তিনটি প্রকল্প স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায় ওয়াসা। সেগুলো পরিকল্পনা কমিশনে দুবছর পড়ে ছিল। এর মধ্যে আছে ৫০০ কোটি টাকায় রাজধানীর পাঁচটি খাল উদ্ধার প্রকল্প। মূলত চারটি খাল হাজারীবাগ, মুগদা-বাসাবোর মান্ডা, মিরপুরের বাইশটেকি ও সাংবাদিক কলোনি খাল। খালগুলো উদ্ধার করে পাড় বাঁধাই করলে বৃষ্টির পানি নদীতে চলে যাবে। বেগুনবাড়ি খালটি হাতিরঝিলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ায় প্রকল্প থেকে বেগুনবাড়ি খালটি বাদ দেওয়া হয়। নাম পাঁচ খাল উদ্ধার প্রকল্পই থেকে যায়। আরেকটি ছিল ২৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা শহরের বিদ্যমান পানিবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্প। এ প্রকল্পের মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে বিভিন্ন এলাকার পানিবদ্ধতা নিরসনের কথা বলা হয়। তৃতীয়টি ছিল ২৪ কোটি টাকার আগারগাঁও এলাকার পানিবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্প। এই প্রকল্পগুলো পরবর্তীতে অনুমোদন পেলেও কার্যত উন্নতি বলতে কিছুই দেখা যাচ্ছেনা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পানিবদ্ধতার সমস্যা সমাধানে স্যুয়ারেজ ও ড্রেনেজ সিস্টেমকে একক কর্তৃত্বে নিয়ে আসতে হবে। সংশ্লিষ্ট ১৪টি সরকারি সংস্থাকে নিয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠনের মাধ্যমে মহাপরিকল্পনা তৈরি এবং সে অনুযায়ী কাজে নেমে পড়তে হবে। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের নেতা আবু নাছের খান বলেন, যানজটের ভয়াবহ নগরী ঢাকায় পানিবদ্ধতার কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যায়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য খালগুলো দখলমুক্ত করতে হবে। পানিপ্রবাহ সুগম না হলে এ নগরীতে মানুষ বসবাস করতে পারবে না। স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, এই সমস্যা নিয়ে বহু আলোচনা-পর্যালোচনা হয়েছে। সম্ভাব্য সমাধানও ঠিক করা আছে। তবে সমাধানের জন্য সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
রাজধানীর পানিবদ্ধতা ও নাগরিক ভোগান্তি নিয়ে গেল বছর সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন সংসদ সদস্যরা। তারা এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরেন। তাদের প্রশ্নের জবাবে তৎকালীন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন দ্রুত পানিবদ্ধতা নিরসনের আশ্বাস দিয়ে বলেন, আগামী ৩ বছরের মধ্যে আমরা ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়েছি। বাস্তবে চিত্র কি সেটি নগরবাসীরা দেখতে পাচ্ছে।
পানিবদ্ধতা নিরসনসহ রাজধানীর সমস্যাগুলো নিরসনে ঢাকা সিটির মতো রাজউক, ওয়াসা, তিতাসের মতো রাজধানীর সরকারি সেবা সংস্থাগুলোকেও উত্তর-দক্ষিণে বিভাজনের সময় এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন। তিনি বলেন, রাজধানীতে যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে, সে হারে সরকারি সেবা সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়নি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ