শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

ফায়ারম্যান সোহেল রানাকে অশ্রুভেজা বিদায়

স্টাফ রিপোর্টার : মানুষকে বাঁচানোর দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে না ফেরার দেশে চলে যাওয়া ফায়ার সার্ভিস কর্মী সোহেল রানাকে চোখের জলে বিদায় জানালেন তার সহকর্মীরা। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ঢাকায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদর দপ্তরে রানার জানাজা হয়। তারপর রানার কফিন নিয়ে কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার চৌগাংগা গ্রামের উদ্দেশে রওনা হয় একটি গাড়ি। সেখানে গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যাওয়া ২৫ বছর বয়সী এই উদ্ধারকর্মীকে।
গত ২৮ মার্চ বনানীর এফ আর টাওয়ারে আগুন লাগার পর উদ্ধার অভিযানে যোগ দিয়েছিলেন কুর্মিটোলা ফায়ার স্টেশনের ফায়ারম্যান রানা। ২৩ তলা ওই ভবনে আটকা পড়া মানুষদের ল্যাডারের মাধ্যমে নামাচ্ছিলেন তিনি। এক পর্যায়ে ল্যাডারে পা আটকে তিনি দুর্ঘটনায় পড়েন। তার ডান পা কয়েক জায়গায় ভেঙে যায়, সেফটি বেল্টের চাপে পেটের একটি অংশ থেঁতলে যায়। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি করে কয়েক দিন চিকিৎসা দেয়ার পর রানাকে পাঠানো হয় সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার গভীর রাতে মারা যান রানা।
সোমবার রাতে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে রানার কফিন দেশে আসার পর তা সিএমএইচের হিমঘরে রাখা হয়। তার আগে বিমানবন্দরেই রানার কফিনে বাহিনীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। সকালে তার মরদেহ ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরে নেয়া হলে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বাহিনীর কমলা রঙের পতাকায় মোড়া সোহেল রানার কফিনের সামনে সহকর্মীদের অনেকেই আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। জানাজার আনুষ্ঠানিকতায় স্বজনদের পক্ষ থেকে বক্তব্য দিতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন রানার ছোট ভাই। পরিবারের অবলম্বন হারিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চান তিনি।
জানাজা শেষে সোহেল রানার পরিবারকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
ফায়ার সার্ভিসের সদ্য সাবেক মহাপরিচালক আলী আহমেদ খান, লালবাগ বিভাগের পুলিশ উপ-কমিশনার মোহাম্মদ ইব্রাহীম খানসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা রানার জানাযায় অংশ নেন।
রানার পরিবারে কেউ উপযুক্ত থাকলে চাকরি পাবেন : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
নিহত ফায়ারম্যান সোহেল রানার পরিবারে কেউ উপযুক্ত থাকলে তার জন্য চাকরির ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। রানার প্রথম জানাজা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন সোহেল রানার সর্বোচ্চ চিকিৎসা আমরা নিশ্চিত করেছি। তাকে সুস্থ করতে যা যা করা দরকার সবই করা হয়েছিল। উন্নত চিকিৎসার পরও তাকে বাঁচানো যায়নি। সরকার তার পরিবারের জন্যও করবে। ফায়ার সার্ভিস এবং আমরা তার পরিবারের পাশে আছি। আমরা জানতে পেরেছি সোহেল রানা পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। ফায়ার সার্ভিসসহ আমরা সবাই তার পরিবারের প্রতি লক্ষ্য রাখবো। তার পরিবারে কেউ যদি উপযুক্ত থাকে তবে তাকে চাকরি দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’
সোহেল রানার দেশপ্রেম ও মানুষের প্রতি ভালোবাসার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘সোহেল রানা জনগণকে ভালোবাসতো, দেশকে ভালোবাসতো, তারই প্রমাণ তিনি রেখে গেছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এফ আর টাওয়ারে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার করতে গিয়ে তিনি মারা গেছেন। তার মৃত্যুর জন্য আমরা গভীরভাবে দুঃখিত ও মর্মাহত।’ এ সময় মন্ত্রী সিলেটে জঙ্গি হামলায় ফায়ার সার্ভিসের নিহত কর্মকর্তার কথাও স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ‘শুধু সোহেল নয়, আমি স্মরণ করতে চাই সিলেটে জঙ্গি হামলার সময় নিহত ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তাকে। আমাদের যেখানে প্রয়োজন অগ্নিসেনারা সেখানে গিয়ে কাজ করছেন। দুর্ঘটনাস্থল থেকে জানমাল রক্ষা করছেন।’
সোহেল রানার পরিবার কোনও ক্ষতিপূরণ পাবে কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ক্ষতিপূরণ নয়, আমরা তাকে সহযোগিতা করবো। এরইমধ্যে ফায়ার সার্ভিস তাকে সহযোগিতা করেছে। প্রধানমন্ত্রীও সহযোগিতা করবেন। ভবিষ্যতে আপনারা তা দেখতে পারবেন।’

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ