চট্টগ্রাম ওয়াসার উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম খতিয়ে দেখার আহ্বান ক্যাবের
চট্টগ্রাম ব্যুরো: প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতায় চট্টগ্রাম ওয়াসায় ১৩ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প নেয়া হলেও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ১০ বছর পার করলেও প্রশাসনে গতিশীলতা আনতে পারেন নি। অধিকন্তু অনিয়ম, প্রকল্পে বার বার বাজেট সংশোধন, অদক্ষ প্রশাসন, স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, আত্মীয়করণ ও গ্রাহক স্বার্থকে উপেক্ষা করার কারণে চট্টগ্রাম ওয়াসা নগরবাসীর শুধু চাহিদা পুরণে ব্যর্থ নয়, যন্ত্রণারও কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় ঢাকা ওয়াসার আদলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, বাস্তবায়ন ও পরীবিক্ষণ বিভাগ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার আহবান জানিয়েছেন দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণকারী জাতীয় প্রতিষ্ঠান কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।
চট্টগ্রাম ওয়াসার নানা অনিয়ম নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে প্রকাশিত নানা অনিয়ম খতিয়ে দেখার দাবিতে দেয়া বিবৃতিতে ক্যাব নেতৃবৃন্দ বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পরামর্শে উন্নয়ন প্রকল্পে বাজেট বার বার পূণঃ সংশোধন করে দ্বিগুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে রাষ্ট্রীয় সম্পদের লুন্টন হলেও কেউ এ পর্যন্ত সুনিদিষ্ট ব্যাখ্যা চায়নি। তদুপরি উন্নয়ন প্রকল্পের নজরদারিতে বোর্ড সদস্যদেরকেও সম্পৃক্ত করা হয়নি। ফলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক তার ইচ্ছানুসারে উন্নয়ন প্রকল্পের বাজেট বৃদ্ধি ছাড়া আর কিছু করেননি। পানি সমস্যা যে তিমিরে ছিলো সেখানেই আছে। অন্যদিকে উন্নয়ন প্রকল্পে নাগরিক পরীবিক্ষণ করা হলে এখাতে দুর্নীতি ও অনিয়ম অনেকাংশে কমানো সম্ভব হতো। বিবৃতিদাতারা হলেন, ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসসিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, যুগ্ন সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম ও ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আবদুল মান্নান।
বিবৃতিতে ক্যাব নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নগরে পানি সংকট হলেই ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বারংবার বিভিন্ন প্রকল্পের দোহাই দিয়ে থাকেন। কিন্তু প্রতিশ্রুত সময়ের পর তাদের সেই প্রতিশ্রুতির কোনো ফল নগরবাসী পায় না। এর মূল কারণ হলো অপরিকল্পিত ও ঠিকাদার নির্ভর উন্নয়ন প্রকল্প, এক জায়গায় ১০-১২ বার পর্যন্ত খোড়াখুড়ি, নি¤œমানের উপকরণব্যবহার ও মানহীন উন্নয়ন প্রকল্প, সরবরাহ লাইনে ত্রুটি, লিকেজ, পানি চুরি বন্ধ, বিলিং ব্যবস্থার ত্রুটি দূর না করে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বারংবার নতুন নতুন প্রকল্পের উপর জোর দিয়ে আসছে। ফলে ওয়াসা তলাবিহীন জুড়ির ন্যায়, যা-ই ঢালা হচ্ছে সবই খালে গিয়ে পড়ছে। অধিকন্তু প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আগ্রহে চট্টগ্রাম মহানগরীতে পানি ও পয়ঃপ্রনালী উন্নয়নে বর্তমান সরকারের আমলে বিভিন্ন প্রকল্পে ১৩ হাজার কোটি টাকার বরাদ্ধ দিলেও চট্টগ্রাম ওয়াসার অদক্ষ ও অুদরদর্শী নেতৃত্ব, অনিয়ম, স্বেচ্ছাসারি ও আত্মীয়করণের কারণে নগরবাসী কোন সুফল পায়নি। অধিকন্তু পুরো নগরে পানির জন্য হাহাকার, নগরজুড়ে রাস্তা খোড়াখুড়ি, পানির লিকেজ ও বিপুল পরিমান পানি প্রতিদিন নালা, নর্দমায় পড়ে গিয়ে অপচয় হচ্ছে। চট্টগ্রাম ওয়াসার দাবি, পানির উৎপাদন দৈনিক ৩৫-৪০ কোটি লিটার। যার কোন বৈজ্ঞানিক সত্যতা নাই। কারণ রাঙ্গুনিয়ায় শেখ হাসিনা পানি শোধানাগার, মদুনাঘাট পানি শোধনাগার ও পাম্প হাউজে কোন ডিজিটাল মিটার নাই। ফলে কত লিটার পানি উৎপাদন হচ্ছে তার সত্যতা যাচাই করার জন্য ওয়াসার ডাটাবেস নাই। আর নগরীর পানির চাহিদা ২০ কোটি লিটার তাহলে আরও ১৫-২০ কোটি লিটার হয় অপচয় হচ্ছে, না হলে পানি চুরি হচ্ছে। তাই পানি উৎপাদন ও বিতরণে ডিজিটাল মিটার না থাকায় পানির প্রকৃত উৎপাদন খরচ নিয়ে শুভংকরের ফাঁকি ও বিশাল অনিয়ম হচ্ছে। উৎপাদন খরচের গড়মিল দেখিয়ে অনিয়মের বিশাল সম্ভাবনা।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, সেবার মান উন্নয়নে গ্রাহকদের সাথে মতবিনিময়ের কথা বলে নগরীর বিলাসবহুল পাঁচ তারাকা হোটেলে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের আত্মীয়স্বজন, ঠিকাদার ও দু’একজন অনুগত গ্রাহকদের নিয়ে গ্রাহক সভা আয়োজন করে প্রকৃতপক্ষে গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা করেছেন। যা গ্রাহক সভার নামে গ্রাহকদের সাথে তামাসার সামিল ও রাস্ট্রীয় অর্থের অপচয় ছাড়া কিছুই নয়।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, চট্টগ্রাম নগর জুড়ে পানির জন্য হাহাকার, যা বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে প্রচারিত হচ্ছে। কিন্তু ওয়াসা কর্তৃপক্ষ তা স্বীকার করতে নারাজ। পানি সঙ্কটের কারণে সর্বত্রই গ্রাহকদের উদ্যোগে টিউবওয়েল স্থাপন যেরকম প্রকট আকারে বেড়েছে, তেমনি ড্রিংকিং ওয়াটার ফ্যাক্টরীর সংখ্যাও বেড়েছে ব্যাপকহারে। তারপরও নগরবাসীর জন্য সুপেয় পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত হয়নি। সিটি কর্পোরেশন এলাকার একটি বড় অংশে এখনও পানির জন্য হাহাকার। অন্যদিকে ওয়াসা দাবি করছে, তাদের উৎপাদন ৩৫-৪০ কোটি লিটার। নগরীতে পানির চাহিদা ২০ কোটি লিটার। পানির লিকেজ এর কারনে বিপুল পানি রাস্তায় ও নালায় অপচয় হলেও ওয়াসা কর্তৃপক্ষ পানির লিকেজ নাই বলে দাবি করছে। নতুন ভাবে সংযুক্ত পাইপগুলি বুয়েট কর্তৃক মান পরীক্ষা ছাড়াই যুক্ত করা হচ্ছে ফলে পানির প্রেসার ঠিকমতো নিতে না পারায় প্রতিনিয়তই লাইনে ত্রুটি দেখা দিচ্ছে, গ্রাহকরা পানি পাচ্ছে না এবং গ্রাহকরা পানির সঠিক প্রেসারের কারণে পানি পাচ্ছে না।