শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার হালচাল

অধ্যাপক এ, বি, এম ফজলুল করীম : সুশিক্ষাই শক্তি, সুশিক্ষাই মুক্তি, সুশিক্ষাই উন্নতি, আবার কুশিক্ষাই অবনতি, কুশিক্ষাই ধ্বংস। শিক্ষা মানুষের পরিপূর্ণ ব্যক্তিত্ব পরিগঠন করে এবং মানুষের চেতনাগত, ধারণাগত ও বুদ্ধি বৃত্তিক আবেগ-অনুভূতি বিকশিত করে। এছাড়া শিক্ষা মানুষের মধ্যে নৈতিক, মানবিক ও আধ্যাত্মিক গুণাবলির বিকাশ ঘটায়। ইংরেজীতে একটি উক্তি আছে, Education should aim at the baluneed growth of the total personality of man throwgh the trairing of mans spirit intellect, the rotional self, feelings and bodily senses. Edueation should there fore cates for the growth of man in all its aspects: spiritual, it intellectual, imagi native, physical, scientisic, linguistic, poth individudly and collectively and motivate all those aspects to words goodness and the atlainnert of perfection.
মূল্যবোধহীন শিক্ষা মূলতঃ কোন শিক্ষা নয়, যদি শিক্ষানীতি ও শিক্ষা ব্যবস্থায় সূনির্দিষ্ট মূল্যবোধ ও লক্ষ্য থাকে, কেবলমাত্র তখনই শিক্ষা হয় জাতির মেরুদন্ড। সুশিক্ষার অগ্রগতি ব্যতীত কোন দেশই উন্নতি ও অগ্রগতি লাভ করতে পারে না। একটি জাতির আশা আকাঙ্খার বাস্তব প্রতিফলন ঘটে তার শিক্ষা ব্যবস্থায়। তাই শিক্ষা ব্যবস্থা হচ্ছে, জাতির ভবিষ্যত কর্নধার ও ভবিষ্যত সমাজ নির্মাণের গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। আর তাই সুশিক্ষা প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে বাংলাদেশেও শিক্ষা কমিশন গঠন হয়েছে বারংবার কিন্তু তারা শিক্ষা কমিশন তৈরি করেও কিন্তু ফল ভাল হয়নি।
বাংলাদেশ শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট : অত্যন্ত দুঃখ জনক হলেও সত্য স্বাধীনতার দীর্ঘ দিন পরও আমাদের দেশে কোন সার্বজনীন আদর্শিক শিক্ষা নীতি প্রণীত হয়নি। বরং ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের লর্ড মেকেলে প্রণীত নি¤œগামী পরিস্রবণ নীতি ১৮১৩ এটা তৎকালীন সময়ে গ্রহনযোগ্য না হলেও এখন এর গুরুত্ব বহন করে। এরপর ১৮৮২ সালে উইলিয়াম অ্যাডাম শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়। এই শিক্ষা নীতি ও ব্যবস্থার উত্তরাধিকার নিয়ে ১৯৪৭ সালে যেমন পাকিস্তান জন্মলাভ করেছে তেমনি পাকিস্তানের শিক্ষা ব্যবস্থার উত্তরাধিকার নিয়ে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্ম হয়। বাংলাদেশের শিক্ষা নীতি মূলতঃ পাকিস্তান আমলের শিক্ষা নীতিরই রুপান্তর মাত্র। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর তখনকার দিনে পাঠ্য সূচীতে নামমাত্র সংস্কার বা পরিবর্তন হলেও বৃটিশ আমলের শিক্ষা দর্শন, মূল্যবোধ ও মূলনীতি অপরিবর্তিত রয়ে গেছে। উল্লেখ্য, ১৯৫২ সালে গঠিত “পূর্ববঙ্গ শিক্ষা কশিটি ” থেকে শুরু করে ১৯৬২ সালে প্রেসিডেন্ট আয়ূব খানের গঠিত বিচারপতি “হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন” এবং ১৯৬৯ সালে গঠিত “এয়ার মার্শাল নূর খান শিক্ষা কমিশন” পর্যন্ত সকল শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ মালাই মূল্য-বোধহীন ছিল। ফলে এদুটো শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে প্রচন্ড রাজনৈতিক আন্দোলন দানা বেঁধে ওঠায় বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পূর্ব পর্যন্ত প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমেই শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালিত হয়।
বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর ১৯৭২ সালের ২৬শে জুলাই আওয়ামী লীগ সরকার ডঃ কদরত-ই-খুদার নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করে। ১৯৭৩ সালের ৮ই জুন কমিশন অন্তর্বর্তীকালীন রিপোর্ট পেশ করেন এবং ১৯৭৪ সালের ৩০শে মে চূরান্ত রিপোর্ট পেশ করেন। অনেক সীমাবদ্ধতা ও সর্বজনগ্রাহ্য না হওয়ায় এই শিক্ষা কমিশনকে সার্বজনীন শিক্ষানীতি বলা যায় না। ১৯৭৫ সালের পটরিবর্তনের পর এই রিপোর্ট আর বাস্তবায়িত হয়নি। এরপর ১৯৭৬ সালে “জাতীয় কারিকুলাম ও সিলেবাস প্রণয়ন কমিটি” গঠিত হয়। ১৯৭৮ সালে “জাতীয় শিক্ষা উপদেষ্টা কমিটি” গঠন করেন। ১৯৮৩ সালে ডঃ মজিদ খানের নেতৃত্বে “মজিদ খান শিক্ষা কমিশন” গঠন করা হয়। এরপর ১৯৮৭ সালে “মফিজউদ্দীন আহমদ শিক্ষা কমিশন” গঠন হয়। এই ভাবে ১৯৯৭ সালে “শামসুল হক শিক্ষা কমিশন”। ২০০১ সালে “এম.এ বারী শিক্ষা কমিশন”। ২০০৩ সালে “মনিরুজ্জামান মিয়া শিক্ষা কমিশন” গঠন করা হয়। এই কমিটির রিপোর্টগুলো অসম্পূর্ণ এবং আদর্শভিত্তিক না হওয়ায় সর্বজনগ্রায্য হয়নি। ফলে শিক্ষা কমিশনের এই রিপোর্ট গুলো কার্যকর হবার সুযোগ পায়নি। কমিটি ও সফল হয়নি। ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সময় কালে গঠিত শিক্ষা কমিশন কমিটির সুপারিশ মালায় নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশী নাগরিক তৈরির মূল্যবোধ স্থান পেয়েছিল। দুর্ভাগ্যজনক হলে ও এটা সত্য যে, এ যাবৎ বহু শিক্ষা কমিশন এবং কমিটি গঠিত হলেও বাংলাদেশের উপযোগী কোন সুনির্দিষ্ট মূল্যবোধে যা দর্শনের আলোকে কোন শিক্ষানীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়িত হয়নি। যা একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের জন্য আদৌ কাম্য নয়। ২০০৯ সালে “কবির চৌধুরী শিক্ষা কমিশন” গঠন করা হয়। এই কমিশন পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন হচ্ছে। কার্যত এই শিক্ষানীতি পশ্চিমা ধ্যান-ধারনা, সমাজ ব্যবস্থা, দৃষ্টিভঙ্গী ও মূল্যবোধের আলোকে প্রণীত একটি নতুন সংস্করণ ও অনুকরণ মাত্র। ফলে বর্তমানে আমাদের কলিজার টুকরা সন্তানরা আদর্শ সোনার মানুষ রূপে গড়ে ওঠার সুযোগ পাচ্ছে না বরং ছাত্র-ছাত্রীরা নৈরাজ্যের মধ্যে তাদের সময় অতিবাহিত করতে বাধ্য হচ্ছে। তারা আজ ভয়াবহ সন্ত্রাসের শিকার হয়ে পড়ছে। এসব কারণে বর্তমানে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা নানা সমস্যায় জড়িয়ে পড়েছে।
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় সমস্যার কিছু কারণ নিম্নে উপস্থাপন করা হলো : প্রথম সমস্যার কারণঃ আমাদের শিক্ষার সকল স্তরেঃ অধিকাংশ ক্ষেত্রে আদর্শিক পাঠ্যবই প্রণীত না হওয়ায় আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা সুশিক্ষা লাভ করতে পারছেনা। বরং উল্টো সমাজতান্ত্রিক ধাপে পাঠ্য বই তৈরি করা হচ্ছে।
দ্বিতীয়তঃ আমরা ইংরেজী ও আরবী শিক্ষায় পিছনে পড়েছি। বাংলা আমাদের অবশ্যই শিখতে হবে। একই সাথে ইংরেজী এবং আরবী শিখতে হবে। কারণ ছাত্র-ছাত্রীরা যদি আমাদের দেশের কথাগুলো ভালোভাবে কমিনিকেট করতে না পারে, তা হলে আমাদের দেশের স্বার্থ সংরক্ষিত হবে কিভাবে? ইংরেজী ভালো না জানায় প্রশাসনের ক্ষতি হচ্ছে। ইংরেজী ও আরবী ভালো না জানায় জ্ঞান-বিজ্ঞানে অগ্রগতি ও বিদেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে নানা জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে।
তৃতীয়তঃ বিগত কয়েক বছর বি,এ ক্লাশের সিলেবাস থেকে ইংরেজী একেবারে তুলে দেয়া হয়েছিল। অথচ স্কুলে নামকাওয়াস্ত ইংরেজী আবশ্যিক বিষয়। যারা ইংরেজী বাদ দিয়ে গ্রাজুয়েট হয়েছেন তাদের উপর অনেক ক্ষেত্রে নাইন ও টেনে ইংরেজী পড়াবার ভার পড়ছে। অন্যদিকে টেকস্ট বুকেও অসংখ্য ভুল থাকছে। ইংরেজী ভাল না জানার কারণে অন্যদিকে শিক্ষকের অযোগ্যতার ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। প্রতি বছর শিক্ষার মান কয়েক ধাপ নেমে আসছে। অবশ্য আশার কথা বর্তমান সরকার ইংরেজী শিক্ষায় গুরুত্ব দিচ্ছে।
চর্তুথতঃ নৈতিক মুল্যবোধের অভাবঃ প্রচলিত শিক্ষার এ অভাব আরও প্রকট হচ্ছে। এখানে আদর্শ ভিত্তিক শিক্ষা না থাকার কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা আদর্শ মানুষ রূপে গড়ে উাঠার সুযোগ পাচ্ছে না।
পঞ্চমতঃ পরমত অসহিষ্ণুতাঃ অন্যের মত সইয়ে যাওয়ার মত মানসিক ব্যবস্থা আমাদের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা নেই। যার ফলে ছাত্র-ছাত্রীরা সব সময়ই চেষ্টা করে ভিন্ন মতাদর্শের লোকদের বিরুদ্ধে যে কোন প্রকারে কিভাবে টেকা যায়।
ষষ্ঠতঃ শ্রদ্ধাবোধের অভাবঃ আমাদের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় শ্রদ্ধাবোধ জাগাবার মত কারিকুলাম নেই এবং পরিবেশ ও নেই।
সপ্তমতঃ আদর্শিক শূন্যতাঃ শিক্ষার ক্ষেত্রে ও রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে সকল অঙ্গনে একটি আদর্শিক শূন্যতা বিরাজমান যা সকলের মন থেকে ক্রমবদ্ধ দায়িত্বানুতূতি দূর করছে।
অষ্টমতঃ বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষিতদেরকে চরিত্রবান রূপে গড়ে তোলায় সরকারী কোন প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা নেই। ফলে তাদের মধ্যে আল্লাহ ভীতি ও মানবতাবোধ সৃষ্টি হচ্ছে না।
নবমতঃ রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারঃ বর্তমান শিক্ষার সকল পর্যায় রাজনীতির ব্যপক ভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে। যার কারণে শিক্ষকরা শিক্ষাদান আর ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষা গ্রহণ থেকে সরে গিয়ে অপরাজনীতির সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে ফলে সন্ত্রাস ও মাস্তান তৈরি হচ্ছে।
দশমতঃ অযোগ্য কমিটিঃ অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান অযোগ্য, অদক্ষ পরিচালনা কমিটি দ্বারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয় ।
একাদশতঃ শিক্ষক নিয়োগঃ অনেক সময় শিক্ষক নিয়েগের সময় রাজনৈতিক দলীয়করণে ও অর্থের বিনিময়ে অদক্ষ, অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। ফলে এর মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থা কুলষিত হচ্ছে।
দ্বাদশতঃ প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাঃ শিক্ষকদের প্রশিক্ষনে জন্য পর্যাপ্ত যোগান না থাকার ফলেও শিক্ষা বিস্তারে বিঘ্ন ঘঠছে।
এ ব্যতীত শিক্ষার সমস্যার আরও কারণ রয়েছে যা আলোচনা দীর্ঘ না করার কারণে প্রধান প্রধান কারণগুলো কেবলমাত্র সংক্ষেপে ছোট করে উপরে উল্লেখ করা হলো। এখন এ সকল সমস্যার প্রতিকার নিম্নে সংক্ষেপে উপস্থাপন করা হলো।
আমাদের শিক্ষা সমস্যার প্রতিকারঃ
প্রথম প্রতিকারঃ সর্বাগ্রে আদর্শ ভিত্তিক ভাল টেকষ্টবুকস্ সৃষ্টি করতে হবে। যার মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীরা সুশিক্ষার সুযোগ লাভ করবেন। শিক্ষার বিষয় অবশ্যই আদর্শ ভিত্তিক হতে হবে। যাতে করে ছাত্র-ছাত্রীরা চরিত্রবান রূপে গড়ে উঠতে পারে।
দ্বিতীয় প্রতিকারঃ সুনাগরিক সৃষ্টি করতে হলে বিষয় ভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিক্ষকের অভাব দূর করতে হবে। চরিত্রবান শিক্ষকই পারেন আদর্শ মানুষ তৈরি করতে।
তৃতীয় প্রতিকারঃ বাংলা ভাষা শিক্ষা দেয়ার সাথে সাথে শিক্ষার্থীদেরকে ইংরেজী ও আরবী শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে তারা জ্ঞান-বিজ্ঞানে পান্ডিত্য অর্জন করতে পারে। তাছাড়া দেশ বিদেশে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালনে যোগ্য হয়ে গড়ে উঠতে পারে।
চতুর্থ প্রতিকারঃ আদর্শ ভিত্তিক শিক্ষা প্রদান করার মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে আল্লাহ ভীতি ও মানবতাবোধ জাগ্রত করার ব্যবস্থা করতে হবে। অন্য মতাদর্শের লোকদের উপর অন্যায়ভাবে আঘাত হানা অন্যায় এমন শিক্ষা প্রদান করা যাবে না। ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানবিকতা ধীরে ধীরে জাগ্রত হতে পারে।
পঞ্চম প্রতিকারঃ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি শর্ত সাপেক্ষ করতে দেওয়া। কোন অবস্থাতেই সন্ত্রাস করতে না দেয়া, প্রয়োজন হলে এক্ষেত্রে কঠোরতা অবলম্বন করতে হবে।
ষষ্ঠ প্রতিকারঃ শিক্ষার ক্ষেত্রে নি¤œমানের নোট বুক প্রকাশ করতে না দেওয়া। বরং ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সহায়ক গ্রন্থের সাহায্যে নোট তৈরি করতে উৎসাহ দেয়া।
সপ্তম প্রতিকারঃ কারিগরি শিক্ষাসহ বাস্তব মুখি শিক্ষার প্রসার করার মাধ্যমে বেকার সমস্যা দূর করা।
অষ্টম প্রতিকারঃ মাদরাসা শিক্ষাকে আরো কোরআন সুন্নাহ ভিত্তিক গতিশীল শিক্ষা চালু করা এবং বিষয় ভিত্তিক আদর্শিক শিক্ষা প্রধনের মাধ্যমে দেশে ধর্মীয় শিক্ষার বিস্তার করা। যারা শিক্ষিত হয়ে অশিক্ষিত মানুষের নিকট সৎচরিত্রবান মানুষ হবার দাওয়াত পৌঁছাইতে পারে।
আমাদের শিক্ষার সমস্যাঃ কারণ ও প্রতিকার প্রসঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলোচনার শেষ লগ্নে আমি এভাবে শেষ কথা বলতে চাই-যে শিক্ষা মানব জীবনের সাফল্যেও সহায়ক নয়, সে শিক্ষা আমাদের কাম্য হতে পারে না। আমাদের শিক্ষার সমস্যা সমূলে উৎপাটন করতে হলে শিক্ষার মূলে থাকতে হবে এমন অনুশীলনীর পরিচর্যা যাতে ঈমান ও আকিদার পরিপোষণে জীবনের সব চিন্তা ও কর্ম হবে নিয়ন্ত্রিত। আর এ শিক্ষাই জাতীয় জীবনে এনে দিতে সক্ষম হবে সাফল্যে ও সোনার কাঠি, তৈরি হবে দেরশর ভবিষ্যত কর্নধার বা সোনার মানুষরূপে। জ্ঞানের সাধনায় নিয়োজিত হয়ে প্রতিটি নাগরিক, তথা প্রতিটি মানুষ তার নিজের ও আর সবার অপশক্তির বিরুদ্ধে অজ্ঞতা ও মূর্খতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে এবং তাতেই জ্ঞান, বিজ্ঞান, দর্শন, কলা, শিল্প তথা জ্ঞানের সকল শাখায় এদেশের মানুষ মানব কল্যাণে ইতিবাচক অবদান রাখতে পারবে বলে আশা করা যায়। আর এ কাজ সুসম্পন্ন হবে যে শিক্ষায় সে শিক্ষাই হওয়া উচিত আমাদের দেশের জন্য। শিক্ষিক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, অভিভাবিকা তথা সমাজের সকল স্তরের মানুষের কল্যাণ বয়ে আনবে যে শিক্ষা সে শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হওয়া উচিত। শিক্ষিত, অল্প শিক্ষিত, কুমার, বুদ্ধিজীবী, ব্যবসায়ী, শিল্পী, চাকুরীজীবী সবার জন্য যে শিক্ষা সুপারিশ করা যায়। তা-ই হলো সার্বজনীন শিক্ষা, তাতে যেমন ধর্ম থাকবে, তেমনি থাকবে পার্থিব জীবনে চলার প্রশিক্ষণ। আর এ শিক্ষা যখন সমাজের সর্বস্তরের প্রতিটি মানুষের দেহ ও মনের উপর প্রভাব বিস্তার করবে এবং মন মস্তিস্ক, চিন্তা ও কর্ম নিয়ন্ত্রণ করবে, কেবল তখনই আমরা আশা করতে পারি শ্রেষ্ট জ্ঞানবান আদর্শ নাগরিকের। এবং যারা মানবিক গুণাবলির অধিকারী হবে।
লেখক : সাবেক সিনেট সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ