শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিলে পরিণাম হবে ভয়াবহ

বিএনপি চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার নয়াপল্টনে স্বেচ্ছাসেবক দলের বিক্ষোভ মিছিল -সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার : কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিলে তার পরিণতি ভয়াবহ হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিএনপি। গতকাল মঙ্গলবার তার নি:শর্ত মুক্তি এবং সুচিকিৎসার দাবিতে রাজধানীতে অনুষ্ঠিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ হুশিয়ারি দেয়া হয়। দলটির অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে এ বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে মিছিলে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েলসহ সংগঠনটির শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন। বেলা ১১টার দিকে স্বেচ্ছাসেবক দলের বিক্ষোভ মিছিলটি নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে আবারও বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কাছে এসে শেষ হয়।
মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, লুটপাটের উন্নয়নের কথা শুনতে শুনতে জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। রিজভী বলেন, দেশে লাখ লাখ তরুণ বেকার, কর্মসংস্থান নেই, ধানের ক্ষেতে আগুন, দূষিত পানি সরবরাহ, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিতে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। অথচ সরকারের তথাকথিত উন্নয়নের গলাবাজি থামছে না, লুটপাটের উন্নয়নের কথা শুনতে শুনতে জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। চাপাবাজি দিয়ে জনগণের ক্ষোভকে নেভানো যাবে না।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী ভয়াবহ দুঃশাসন ও বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ওপর যে হিংস্র আচরণ চালাচ্ছে, তাতে বিশ্বের সব স্বৈরাচারের ইতিহাস হার মেনেছে। বিএনপির এ নেতা বলেন, নারী-শিশু নির্যাতনকারী ও দখলবাজ-লুটেরারা দেশব্যাপী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। বেপরোয়া নারী-শিশু নির্যাতন থেকে শুরু করে গুম, খুন, অপহরণ, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুপ্তহত্যা এবং জানমালের নিরাপত্তাহীনতায় দেশের মানুষ এখন সর্বদা আতঙ্কিত জীবনযাপন করছে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে রিজভী বলেন, গণতন্ত্রের প্রতীক খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা না করলে দেশ খাদের কিনারা থেকে পড়ে গিয়ে অতলে তলিয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিহিংসার আগুন নেভাতে হলে আমাদের রাজপথে আসন গ্রহণ করতে হবে।
মিছিলে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সহ-সভাপতি গোলাম সরোয়ার, সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াছিন আলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদরেজ জামান, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি ফখরুল ইসলাম রবিন, সাধারণ সম্পাদক গাজী রেজওয়ান হোসেন রিয়াজ, দক্ষিণের সিনিয়র সহ-সভাপতি রফিক হাওলাদার, উত্তরের সিনিয়র সহ-সভাপতি হারুন অর রশিদ, সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদ বিন ইমতিয়াজ বকুল, সহ-সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল হক সোহাগ, সাবেক দফতর সম্পাদক আক্তারুজ্জামান বাচ্চু, তাঁতী বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মনির, সাবেক সম্পাদক মাহবুবুল আলম মন্টু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক শফিউদ্দিন সেন্টু, স্বেচ্ছাসেবক দল উত্তরের সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদুর রহমান সাঈদ, দক্ষিণের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর কাদির ঝিলন, ঢাকা জেলার সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হোসেন অভি, যুগ্ম সম্পাদক আশরাফুল আলম সুমন, মুন্সিগঞ্জ জেলার সভাপতি ইদ্রিশ মিয়াজী ভিপি মোহন, সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিক মোল্লা, নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি আনোয়ার সাদাৎ সায়েম, সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক সালাহ উদ্দিন সালু, গাজীপুর জেলার সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম, সহ-সভাপতি মোঃ নয়ন, সাংগঠনিক সম্পাদক আপেল মাহমুদ প্রমুখ।
সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে রিজভী আরও বলেন, মধ্যরাতের ভোটের সরকারের প্রতিহিংসা এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, দেশের চারবারের প্রধানমন্ত্রী ও গণমানুষের ভরসাস্থল বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে জীবন বিপন্ন করার পাঁয়তারা করছে। দেশনেত্রীকে কারাগারে রেখে আমরা বাইরে বসে থাকতে পারিনা, তার মুক্তির জন্য দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে আওয়াজ তুলতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যে এটি সুষ্পষ্টভাবে প্রমানিত হয়েছে যে, তার ইচ্ছাতেই বেগম জিয়াকে কারাগারে রাখা হয়েছে। শারীরিকভাবে ভীষণ অসুস্থ বেগম জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘আয়েশ-পায়েশ’ ইত্যাদি ব্যাঙ্গাত্মক রসিকতায় প্রধানমন্ত্রী তার নিষ্ঠুর মনেরই পরিচয় দিয়েছেন। যে নেত্রী গণতন্ত্রের পক্ষে, মত প্রকাশের পক্ষে সেই দেশনেত্রীকে নির্যাতন করে শেখ হাসিনা আনন্দ পান। গণতন্ত্রের প্রতীক বেগম খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা না করলে দেশ খাদের কিনার থেকে পড়ে গিয়ে অতলে তলিয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিহিংসার আগুন নেভাতে হলে আমাদেরকে রাজপথে আসন গ্রহণ করতে হবে। যে দেশনেত্রী স্বৈরশাসকদের বন্দীশালা থেকে বারবার অবরুদ্ধ গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে আপোষহীন সংগ্রাম চালিয়েছেন সেই দেশনেত্রী ‘গণতন্ত্রের মা’-কে বন্দী রেখে বর্তমান সরকার যে নিষ্ঠুর খেলা খেলছে তার পরিণাম শুভ হবে না।
তিনি বলেন, বর্তমান আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী ভয়াবহ দু:শাসন ও বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর যে হিং¯্র আচরণ চালাচ্ছে তাতে বিশ্বের সকল স্বৈরাচারের ইতিহাস হার মেনেছে। নারী-শিশু নির্যাতনকারী ও দখলবাজ-লুটেরারা দেশব্যাপী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। বেপরোয়া নারী-শিশু নির্যাতন থেকে শুরু করে গুম, খুন, অপহরণ, বিচার বহির্ভূত হত্যা, গুপ্ত হত্যা এবং জানমালের নিরাপত্তাহীনতায় দেশের মানুষ এখন সর্বদা আতঙ্কিত জীবন-যাপন করছে। এই ভয়াবহ নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে জনগণ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করতে চূড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।
এছাড়া সোমবার শান্তিপূর্ণ মিছিল থেকে গ্রেফতারকৃত যুবদল কেন্দ্রীয় নেতা মোঃ সিরাজুল ইসলাম সিরাজ এবং ময়মনসিংহ জেলাধীন গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানা বিএনপি নেতা ও উস্থি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কবির সরকারকে গ্রেফতারের ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে তাদের নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবি জানান তিনি।
শফিউল বারী বাবু তার বক্তব্যে বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকতে হবে। বিভিন্ন জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশনেত্রীর এখন সংকটাপন্ন অবস্থা। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে সরকার প্রধান শেখ হাসিনা রসিকতা করছেন। বিশ্বের সকল স্বৈরশাসকদের নিষ্ঠুরতাও শেখ হাসিনার নিষ্ঠুরতার কাছে পরাজিত হয়েছে। দেশকে আওয়ামী দু:শাসনের কবল থেকে এখনই উদ্ধার করতে না পারলে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব চরম হুমকির মুখে পড়বে। তাই দেশ রক্ষার্থে দেশনেত্রীর মুক্তির জন্য আমাদেরকে রাজপথে নেমে আসতে হবে। অবিলম্বে দেশনেত্রীকে মুক্তি দেয়া না হলে জনগণের ক্ষোভের আগুন থেকে রেহাই পাবে না সরকার। শফিউল বারী বাবু তার বক্তব্যে দেশনায়ক তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারেরও দাবি জানান।
আব্দুল কাদির ভুইয়া জুয়েল তার বক্তব্যে বলেন, মিথ্যা মামলায় কারাগারে আটক ‘গণতন্ত্রের মা’ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বর্তমানে চরম পর্যায়ে উপনীত হলেও সরকার প্রধানের অমানবিক রসিকতায় দেশের মানুষ স্তম্ভিত। জামিনযোগ্য মামলায় প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গুলি হেলনে আজ দেশনেত্রীর জামিন হচ্ছে না, এমনকি সুচিকিৎসা নিশ্চিতে বেগম খালেদা জিয়ার পছন্দের হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে বক্তব্যে উল্লেখ করেন আব্দুল কাদির ভুইয়া জুয়েল। এছাড়া দেশনায়ক তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ