মায়াবী ঝর্ণা দেখতে সিলেটের জাফলং ছুটছেন ভ্রমণ পিপাষুরা
কবির আহমদ, জাফলং (সিলেট) থেকে ফিরে : মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটিতে লাখো পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত আধ্যাত্মিক নগরী সিলেট। প্রবাসী অধ্যুষিত এই সিলেট পর্যটকদের স্থান করে দিতে রীতিমত হিমসীম খাচ্ছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি ট্যুরিষ্ট পুলিশ ভ্রমণ পিপাষুদের সেবা দিতে কোন কার্পণ্য করছে না। সিলেটের ছোট ছোট আবাসিক হোটেল থেকে নিয়ে থ্রী স্টার মানের হোটেলগুলোতেও সিট নেই। বড়ই বিপাকে পড়েছে সিলেটে আসা পর্যটকরা। মায়াবী ঝর্ণা দেখতে প্রকৃতি কন্যা সিলেটের জাফলং প্রতিদিনই ছুটছেন হাজারো ভ্রমণ পিপাষু। হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার, হযরত শাহ পরাণ (রহ.) মাজার, সিলেটের সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত প্রকৃতি কন্যা জাফলং, বিছনাকান্দি, জৈন্তাপুরের লালাখাল, পান্তুমাই, ভোলাগঞ্জ জিরো পয়েন্ট, সাদা পাথর, রাতারগুল, চা বাগান, মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায় দেশের সর্ববৃহৎ জলপ্রপাত মাধবকুন্ড, সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর দৃষ্টিনন্দন শিমুল বাগান, টাঙ্গুয়ার হাওর দেখতে পর্যটকরা ভীড় করছেন সিলেট মহানগরীর বিভিন্ন হোটেল-মোটেলে। আর এই সিলেট থেকেই মাইক্রো, হাইয়েস, নোহা গাড়ী করে বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় ঘুরতে যান এসব পর্যটকরা।
প্রকৃতি কন্যা হিসেবে বিশ্বব্যাপি পরিচিত সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং। কয়েকযুগ ধরে সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলোর প্রাণ ছিল জাফলং। কিন্তু গত কয়েক বছরে সিলেটে বিছনাকান্দি, রাতারগুল, সাদা পাথরের মতো নতুন স্পট আলোচনায় আসায় আর জাফলংয়ের যাতায়াত ব্যবস্থা নাজুক থাকায় পর্যটক বিমুখ হয়ে পরেছিল জাফলং।
কিন্তু এখন জাফলংয়ে মায়াবী ঝর্ণা নামে নতুন একটি ঝর্ণার টানে আবারো জাফলংয়ে ভিড় করছেন পর্যটকরা। এবারের ঈদের ছুটিতে তাই সবচেয়ে বেশী পর্যটকের দেখা মিলেছে জাফলংয়ে। একই যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতি হওয়াও জাফলংমুখি হয়েছেন পর্যটকরা।
ভারতের মেঘালয় পাহাড় থেকে নেমে আসা মায়াবী ঝর্ণা জাফলং জিরো পয়েন্টের খুব কাছেই অবস্থিত। জিরো পয়েন্ট থেকে নৌকাতে করে পিয়াইন নদী পার হয়ে মাত্র ১০ মিনিটের হাটলেই এই ঝর্ণা।
কয়েকশ ফুট উঁচু কালো পাথরের গা ভেসে আসা স্বচ্ছ পানির এ ঝর্ণা এবার সিলেটের সবকটি পর্যটনকেন্দ্রকে পেছনে ফেলেছে।
এদিকে ঈদুল ফিতরের ছুটিতে চায়ের দেশ সিলেটে ঘুরতে এসেছেন লক্ষাধিক পর্যটক। কিন্তু পর্যাপ্ত হোটেল রিসোর্ট না থাকায় বিপাকে পড়তে হয়েছে তাদের। সিলেট শহর ও শহরতলীর বেশীরভাগ হোটেলে ঈদের পরদিন থেকে সিট খালি নেই। কেউ কেউ হোটেলের সামনে নোটিশ টানিয়ে রেখেছেন সিট নেই বলে।
কিন্তু, সুনামগঞ্জ মৌলভীবাজারের পর্যটকরাও থাকেন সিলেটের হোটেল গুলোতে। এতে করে সিলেটে হোটেলের চাপ আরো বেড়ে যায়।
গত শুক্রবার ও গতকাল শনিবারের মত সাধারণ ছূটির দিনগুলোতেও মাঝে মধ্যে সিলেটের হোটেলগুলোতে সিট সংকট দেখা দেয়। আর এবারের ঈদে লম্বা ছুটিতে একসাথে লক্ষাধিক পর্যটক সিলেটে এসেছেন। ফলে হোটেলে ব্যপক সিট সংকট দেখা দিয়েছে।
মিরবক্সটুলায় একটি হোটেলে সিট না পেযে ঘুরে যাচ্ছিলেন ঢাকা থেকে আসা একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্র। তারা বলেন- ভোরে সিলেটে নেমে হোটেল খোঁজা শুরু করেছেন। বেলা ১২টা পর্যন্ত কোন হোটেলে সিট পাননি।
তাদের আরেকজন বলেন- আগে সিলেটে আসলেও এভাবে হোটেল সংকট দেখেননি। আর আর হোটেলে সিট সংকটের পাশাপাশি সিলেটে বিভিন্ন এলাকায় চলমান উন্নয়ন কাজের জন্য রাস্তাঘাটের অবস্থা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন এই পর্যটক।
মিরবক্সটুলার হোটেল সিলেট ইনের পরিচালক সাদমান রিজা নিবরাস জানান- আমাদের হোটেলে ঈদের পরদিন থেকে অন্তত অর্ধশত পর্যটক এসে সিট না পেয়ে ঘুরে গেছেন। আগামী ১৩ জুন পর্যন্ত তাদের হোটেলে কোন রুম খালি নেই বলে জানান তিনি। শুধু সিলেট ইন নয়, এভাবে নগরীর প্রায় হোটেলে রুম না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজার হাজার পর্যটক। সিলেটে হোটেল সংকট এখন প্রায়ই হচ্ছে। নগরীর সোবহানীঘাটে বেলী গার্ডেনের (আবাসিক হোটেল) পরিচালক মো: রাজন দৈনিক সংগ্রামকে জানান, ঈদের ১৫/২০ দিন আগ থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা হোটেল বুকিং দিয়ে রেখেছেন এবং ইতিমধ্যে তারা এসেও গেছেন। আবার অনেকে এখন এসে হোটেলে ভীড় করছেন। হোটেলে রুম না থাকায় পরিচিত কাস্টমারদের ফিরিয়ে দিতে খুব কষ্ট লাগছে বলে জানালেন এই উদীয়মান ব্যবসায়ী রাজন।
জিন্দাবাজার এলাকার হোটেল গ্র্যান্ড ভিউর পরিচালক ইশতিয়াক হামিদ ইফতি বলেন- ঈদের ছুটির সময়ে তার হোটেলের রুমগুলো আগেই বুকিং হয়েগেছে। এখন অনেকেই আসছেন, ফোনে যোগাযোগ করছেন কিন্তু তাদেরকে ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে।