শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

সূচনা বক্তব্যেই অবৈধ সংসদ বাতিলের দাবি রুমিন ফারহানার

সংসদ রিপোর্টার : গতকাল বিএনপির সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি রুমীন ফারহানা পয়েন্ট অব ওর্ডারে দাড়িয়ে বলেন, একাদশ সংসদ জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়, নির্বাচনের পরেই যদি আপনারা টিআইবি রিপোর্ট দেখেন, যদি আপনারা বিদেশী গণমাধ্যম ও বিদেশেী পর্যবেক্ষকদের রিপোর্ট দেখেন তাহলে বুঝবেন এ সংসদ জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি। এ সংসদের মেয়াদ যেন একদিনের বেশী না হয় বলে তিনি দাবি জানালে সংসদে সরকার দলীয় এমপিরা এর প্রতিবাদ জানাতে তাকে থামানোর জন্য চিৎকার চেচামেচি করতে থাকেন। সংসদ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরে অবশ্য স্পিকার তাদের শান্ত হতে অনুরোধ জানান।
রুমীনের বক্তব্যের শুরুতে স্পিকার তাকে ২ মিনিটে তার বক্তব্য শেষ করার কথা বললেও রুমীন তা না করে তার বক্তব্য চালিয়ে যেতে থাকেন। ২ মিনিট পরে স্পিকার তার মাইক বন্ধ করে দেন এবং সংসদ সদস্যদের শান্ত হতে বলেন।
বক্তব্যে রুমীন বলেন, আজকে সংসদে আমার প্রথম দিন। যে কোনো রাজনীতিবিদের মতোই সংসদে আসা, সংসদে দেশের কথা, মানুষের কথা বলা আমার স্বপ্ন ছিল। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য, আমি এমন একটি সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছি যেই সংসদটি জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। নির্বাচনের পরপরই যদি আপনারা টিআইবির রিপোর্ট দেখেন, যদি আপনারা বিদেশী গণমাধ্যম দেখেন, যদি আপনারা বিদেশি পর্যবেক্ষকদের দেখেন, আপনারা দেখবেন এই সংসদটি জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। সুতরাং আমি খুশি হবো যদি এই সংসদের মেয়াদ আর একদিনও না বাড়ে।
তিনি বলেন, আমি এমন একটি সংসদে দাঁড়িয়ে আছি যেই সংসদে তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, আপোষহীন নেত্রী, গণতন্ত্রের জন্য যিনি বারবার কারাবরণ করেছেন, বাংলাদেশের মানুষের, গণমানুষের নেত্রী যে জীবনে কোনো দিন, কোনো আসন থেকে কোনো নির্বাচনে পরাজিত হন নাই। সেই বেগম খালেদা জিয়া এই সংসদে নাই। তাকে পরিকল্পিতভাবে একটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যামামলায় তাকে আজকে কারাগারে ১৬ মাসের অধিক সময় আটকে রাখা হয়েছে। একজন আইনজীবী হিসেবে আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই যে, বেগম খালেদা জিয়ার মামলার যে ম্যারিট, তার শারীরিক অবস্থা, তার সামাজিক অবস্থান এবং তার যে বয়স সবকিছু বিবেচনায় তিনি তাৎক্ষণিক জামিন লাভের যোগ্য। সরকারের হুমকিতে আমাদের অ্যাকটিং চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারেন না। আমাদের শীর্ষ থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত একেকজনের নামে শতশত মামলা। মাননীয় স্পিকার তিনি দলমত নির্বিশেষে সবার কাছে একজন স্বজ্জন রাজনীতি বিদ হিসেবে পরিচিত এই পর্যন্ত বক্তব্য দিলে সময় শেষ হওয়ায় স্পিকার তাকে ধন্যবাদ দিয়ে বক্তব্য শেষ করতে বলে জানান, বক্তব্য শেষ করুন। পরে আবার বলার সুযোগ পাবেন।
এসময় অন্যান্য সংসদ সদস্যরা হৈ চৈ শুরু করেন। তখন সংসদ সদস্যদের ধৈর্য ধারণ করার জন্য আহ্বান জানান স্পিকার।
পরে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন পয়েন্ট অব ওর্ডারে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘উনি (রুমীন) নিজে সংসদে এমপি হিসেবে শপথ নিয়ে সেই সংসদকে অবৈধ বলায় সংবিধানকে কটাক্ষ করেছেন , গণতন্ত্র ও দেশের ১৬ কোটি মানুষকে অসম্মান করা হয়েছে। তিনি রুমীনের বক্তব্যে এসব অংশ এক্সপাঞ্চ করার দাবি জানালে স্পিকার তাতে সম্মতি দিয়ে তার বক্তব্যের বিতর্কিত অংশ বাদ দেয়া হবে বলে জানান। স্পিকার বলেন, সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির ৩০৭ ধারা অনুযায়ী রুমীনের বক্তব্যের এ অংশটি এক্সপাঞ্চ করা হবে।
সরকারি দলের পংকজ দেবনাথ বলেন, জনমতের চাপে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এদিন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল। সম্পূর্ণ বিনা অপরাধে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। বিএনপি-জামায়াত জোটের দুঃশাসন-লুটপাটের কারণেই এই ওয়ান ইলেভেনের সৃষ্টি হয়েছিল।
এর আগে ফ্লোর নিয়ে জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, টাকার অভাবে অনেক হাসপাতালে মানুষকে সুচিকিৎসা দিতে পারি না। অথচ পত্রিকায় দেখলাম, যেখানে হাসপাতাল নেই অথচ যন্ত্রপাতি কিনতে জার্মান যাচ্ছে একটি প্রতিনিধি দল। আবার অনেক যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে কিন্তু সেগুলো ব্যবহার করার সুযোগ না থাকায় পড়ে আছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রীর কাছে অনুরোধ যেসব যন্ত্রপাতি পড়ে আছে দয়া করে আমাদের দিয়ে দেন।
জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বলেন, দেশে আসলে হচ্ছেটা কি? নির্বাচনের আগে এই সরকারের একটি প্রতিশ্রুতি ছিলো দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র। এখন দেখতে পাচ্ছি কিছুই হচ্ছে না। ব্যাংক থেকে অনেক টাকা গায়েব হয়ে গেছে। এত টাকা গেল কোথায়? বলা হচ্ছে প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ ছড়িয়েছে তাহলে ব্যাংকের টাকা গেল কোথায়। ঋণের টাকা ফেরত আসছে না। আসলে টাকা যাচ্ছে কোথায় সরকারের সেটা খতিয়ে দেখা উচিত।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ