ছড়া
গেঁয়ো ভূত
সায়ীদ আবুবকর
গেঁয়ো ভূত
অদ্ভুত
দাঁতগুলো ওঁচা,
নাক বোঁচা বোঁচা
আর চোখ ট্যারা;
সেই চোখে এরা
সবই দ্যাখে ফুটো,
একটাকে দুটো,
খোলাকে যে ঢাকা,
কাঁচাকে যে পাকা,
পাকাকে যে কাঁচা,
চাচীকে যে চাচা।
তো এক ভূত
গেছে এক বাড়ি;
লালপেড়ে শাড়ি
পরে এক চাচী
রাঁধছিল মাছ;
ভেবে সাত-পাঁচ
বললো, “ও চাচা,
রাঁধতেছো হাঁচা,
করবো না মিচ,
দাও এক পিচ।”
এই শুনে চাচী,
ছিলো কাছাকাছি
বাসি এক ঝাঁটা,
তাই তুলে “ বেটা,
আমি তোর চাচা?”
বলে দিলো মার
গোটা তিন-চার।
“বাঁচা! বাঁচা! বাঁচা!”
বলে সেই ভূত
প্রাণ নিয়ে ছোটে
যেন বিদ্যুত।”
গেঁয়ো ভূত
অদ্ভুত,
কুমড়োর পেট,
মূর্খ নিরেট;
ব্যাঙের ছাতা
তার গোটা মাথা;
সে-মাথায় ভরা
কেবলি গোবর।
হতবাক করা
শোনো হে খবর:
বুদ্ধির ঢেঁকি
সেই ভূত নাকি
জোচ্চুরি করে
ঢুকেছে শহরে।
সাবধান ভাই!
মনে রাখা চাই
গেঁয়ো ভূত এরা,
চোখ ট্যারা ট্যারা,
সবই দ্যাখে ফুটো,
একটাকে দুটো।
গ্রীষ্মের ফল
নাহিদ নজরুল
আম পাকে লাল হয়ে কালো হয়ে জাম
লিচু ফল ছোট তবু বেশি তার দাম।
কাঁঠালটা ভারি-ভুরি মোটা তার চাম
শোনা যায় মুখে মুখে জাতীয় সে নাম।
আরেকটা ভারি ফল উপরে সবুজ
ভিতরটা লালে লাল নাম তরমুজ।
পেয়ারা ডালিম আর পেঁপে জামরুল
এ সকল ফলগুলো স্বাদেও অতুল।
দুপুরের ক্লান্তি করে দেয় দূর
স্বস্তি ফিরিয়ে আনে যেন ভরপুর।
গ্রীষ্মের ফল খুব উপকারী ফল
খেলে হয় শরীরটা সুস্থ সবল।
বর্ষা এলে
শেখ বিপ্লব হোসেন
রিনিঝিনি ছন্দ তুলে
বর্ষা এলে ওই,
কদম ফুলের মিষ্টি মধুর
গন্ধে আকুল হই।
আষাঢ় এলে খালে- বিলে
উপচে পড়া জল,
ঝিলের জলে ট্যাংরা পুটি
করে কোলাহল।
টাপুরটুপুর মধুর সুরে
বৃষ্টি যখন পড়ে,
খোকাখুকি ভীষণ খুশি
রয় না যে আর ঘরে।
ক্ষণেক্ষণে বৃষ্টি ঝরে
আষার মাসে নিত্য,
স্নিগ্ধ শীতল মিষ্টিহাওয়া
জুড়ায় সবার চিত্ত।
দূরের বনে কেয়া, বেলি,
হরেক ফুলের মেলা,
কী যে দারুণ গন্ধ ছড়ায়
জুড়ে আষাঢ় বেলা।
মাগো তুমি
জান্নাতা নিঝুম শিল্পী
মাগো তুমি প্রাণ জুড়ানো আমার চোখের ঘুম
চপল আঁখি ঘুম না এলে দাও বুলিয়ে চুম।
মাগো তুমি স্বর্ণ গাঁথা গায়ের অলঙ্কার,
পুষ্পরেণু হাসির মাঝে নেই তুলনা যার।
মাগো তুমি প্রবাল দ্বীপের ঝিরিঝিরি হাওয়া
স্বর্গ যেন এই ধরাতে আমার খুঁজে পাওয়া।
মাগো তুমি নীল আকাশের একটি তারার কণা
দাও ছড়িয়ে জোসনা রঙিন আমায় ডাকো মনা।
সকল গুণের উৎস তুমি কথায় ঝরে ফুল,
তোমার বলা শতো কথা আমার কাছে মূল।
মাগো তুমি ময়ূর পাখার রঙিন ছবি আঁকা
তোমার মায়ার আঁচল ঘেঁষে স্বপ্ন মেলে পাখা।
সবার চেয়ে সেরা তুমি আমার সুখের সাথী,
তুমি ছাড়া এই জীবনে নিভে আলোর বাতি।
ফরিয়াদ
সামিমা বেগম
চোখ কান খোলা রেখে প্রহর যে গুণি
‘আজান’ টা দিনেরাতে পাঁচবার শুনি।
তোমার মধুর ডাকে সাড়া দিতে মন
কখনোবা চুপিসারে ভাবি অনুক্ষণ।
আজান-ধ্বনিতে হই কাজেতে বিরত
রুকু আর সিজদায় নত অনুগত।
জায়নামাজের ছোঁয়া জুড়ায় এ প্রাণ
তোমারই যে নাম জপি ও গো মহীয়ান ।
মন সদা যেতে চায় সত্যের এ ডাকে
মনের গভীরে যেন আঁধার না থাকে।
ও গো দয়াময় প্রভু করি গুনগান
মজবুত করে দাও ঠুনকো ঈমান।
মানুষে মানুষে মিল কামনা যে করি
অন্যায় ও প্রতিবাদে একসাথে লড়ি।
মামার বাড়ি
শাফায়েত হোসেন
মামার বাড়ি তালগাছেতে
ধরছে কত তাল,
পুকুর ঘাটে ঠোঁট ভেজিয়ে
উড়ছে পাখির পাল।
সারি-সারি ফলের বাগান
ফল ধরেছে গাছে,
লেবই গাছে চুড়ূই পাখি
হেলেদুলে নাচে।
মামার বাড়ি পুকুর জলে
পানকৌড়িরা খেলে,
রোদ বৃষ্টির ছোঁয়া পেয়ে
শালুক পাখনা মেলে।
মামা বাড়ির উঠোন জুড়ে
ফুলের সারি-সারি,
ফলের গাছে ঘেরা আছে
মামার পুরো বাড়ি।
ফুল ফসলে ঘেরা হলো
মামার বাড়ি দেশ,
জোসনা ঝরে মামার বাড়ি
রঙিন পাতায় বেশ।
গাঁয়ের নদী
নূর হোসেন
আমার গাঁয়ের পাশে নদী
বয়ে চলে সে নিরবধি
তিস্তা যে তার নাম,
তিনটি মাসে যৌবন থাকে
বাকী ন‘মাস স্বপ্ন আঁকে
থাকে না তো দাম।
বর্ষাকালে ভাঙে দু‘পার
শীত কালে ধু-ধু বালুচর
সাদা কাশের বন,
ব্যারাজ আছে অনেক বড়
পানি বিহীন জড়োসড়ো
দুই পারে ঝাউবন।
মামার দেশ
বাসুদেব নাথ
খোকা নাচে, খুকী নাচে
যাবে মামার দেশ
চড়বে গাড়ি, দিবে পাড়ি
পথটা লম্বা বেশ।
গ্রীষ্মের ছুটি মামার বাড়ী
আম-জাম আছে ভারী
আছে কতো সুস্বাদু ফল
কাঠাঁল সারি সারি।
খোকা বসে আম গাছে
খুকী ভরে ঝুড়ি
ছোট মামা তেড়ে আসে
হাতে আছে খড়ি।
খোকা খুকীর দুষ্টুমিতে
কাটে মামার দেশ
এবার বারেক ফিরে-যাবে
মনে কষ্ট বেশ।
বাবুইপাখি
মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান
আমাদের ছোট গাঁয়ে
আছে বহু গাছ,
সেই গাছের ডালে করে
বাবুই পাখি বাস।
দেখতে অতি ছোট পাখি
বুদ্ধিতে সে সেরা,
লতা পাতা দিয়ে তাদের
বাসাখানি গড়া।
ঝর এলে, বৃষ্টি এলে
নাহি ভিজে জলে,
হাওয়া এলে বাসাখানি
শুধু হেলেদুলে।
নিপুণ শিল্পী বাবুই পাখি
অসাধারণ তার কাজ,
বুদ্ধি দেখে ইচ্ছে করে
মাথায় পড়াই তাজ।