বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

জনগণের নির্বাচনবিমুখতা

ভোটারদের অংশগ্রহণ এবং নির্বাচনবিমুখতাসহ নির্বাচন নিয়ে নতুন পর্যায়ে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে ঘটনাক্রমে একই সময়ে ভূমিকা রেখেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। 

দু’জনের বক্তব্য রাখার উপলক্ষ অবশ্য এক ছিল না। মাহবুব তালুকদার বলেছেন উপজেলা নির্বাচনের পঞ্চম তথা শেষ ধাপ সম্পন্ন হওয়ার পর। গত ১০ মার্চ শুরু হওয়া পাঁচ ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শেষ হয়েছে ১৮ জুন। এ উপলক্ষে আয়োজিত এক ব্রিফিং-এ নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার শুনিয়েছেন হতাশা ও উদ্বেগের কথা। তিনি বলেছেন, এবারের উপজেলা নির্বাচনে সবচেয়ে আশংকার দিক হচ্ছে ভোটারদের নির্বাচনবিমুখতা। 

এই নির্বাচনবিমুখতা জাতিকে গভীর খাদের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিমত প্রকাশ করে জনাব তালুকদার বলেছেন, বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে কর্তৃত্ববাদী শাসনের অনিশ্চিত গন্তব্যে। এমন অবস্থা কখনো কাম্য হতে পারে না। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন কতটা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে জানতে চাওয়া হলে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার একাদশ সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে নিজের বক্তব্য স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছেন, তিনি তখন যা বলেছিলেন এখনো সেটাই বলবেন। জনাব তালুকদার প্রসঙ্গক্রমে বলেছেন, তখনও বলেছিলাম, আজ আবারও বলছি, আপনারা নিজেদের বিবেককে জিজ্ঞাসা করলেই জবাব পেয়ে যাবেন। 

ওদিকে রাশেদ খান মেননের বক্তব্যেও নির্বাচন কামশনার মাহবুব তালুকদারের বক্তব্য প্রতিধ্বনিত হয়েছে। গত ১৯ জুন জাতীয় সংসদের বক্তৃতায় জনাব মেনন বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে জনগণ আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। এর প্রমাণ পাওয়া গেছে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে। কারণ, স্থানীয় বিভিন্ন মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে ও আহবান জানিয়েও ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনা যায়নি। এমন অবস্থা শুধু নির্বাচন নয়, গণতন্ত্রের জন্যও বিপদজনক বলে মন্তব্য করেছেন রাশেদ খান মেনন। 

 তিনি বলেছেন, রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন অংশ দেশের ওপর নির্বাচনের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করলে রাজনৈতিক দল শুধু নির্বাচন নয়, রাষ্ট্র পরিচালনায়ও প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে ফেলবে। ‘রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন অংশ’ নির্বাচনের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করছে কথাটার মধ্য দিয়েও জনাব মেনন প্রকৃতপক্ষে স্বীকার করে নিয়েছেন যে, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জনগণকে ভোট দেয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। নৌকা মার্কায় সিল মেরে ভোটের সব বাক্স ভরেছিল আসলে ‘রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন অংশ’।

ওদিকে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের মূল কথাগুলোকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। তিনি বলেছেন এবং একথা সত্যও যে, উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে সবচেয়ে আশংকার দিক হচ্ছে ভোটারদের নির্বাচনবিমুখতা। এই নির্বাচনবিমুখতা জাতিকে গভীর খাদের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। সরকারের উচিত কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য খোঁজার পরিবর্তে জনাব তালুকদারের পরামর্শ অনুযায়ী সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করার লক্ষ্যে অবিলম্বে উদ্যোগী হয়ে ওঠা। না হলে রাশেদ খান মেননের এই কথাটাও সত্যে পরিণত হতে পারেÑ যেখানে তিনি বলেছেন, এভাবে চলতে থাকলে অন্য দলগুলোর সঙ্গে আওয়ামী লীগও সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 

আমরা আশা করতে চাই, রাশেদ খান মেনন এবং নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের বক্তব্যকে যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেয়া হবে। একথা বুঝতে হবে যে, কর্তৃত্ববাদী শাসনের অনিশ্চিত গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা অব্যাহত রাখা হলে দেশ, জাতি ও গণতন্ত্রের সর্বনাশ তো ঘটবেই, অতি অশুভ পরিণতি থেকে ক্ষমতাসীনরাও রেহাই পাবেন না।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ