শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

বাজেটকে পরিবেশবান্ধব ও পরিবেশ সুরক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি

স্টাফ রিপোর্টার: পরিবেশ খাতে বাজেটে বরাদ্দ ও ব্যবস্থাপনায় পরিবেশবান্ধব দিকগুলোর প্রতি বিশেষ নজর দেয়া উচিত। পাশাপাশি বাজেটকে পরিবেশবান্ধব এবং বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)। পরিবেশ সুরক্ষায় জাতীয় বাজেট বসছে এবং উন্নয়নের নামে দেশের প্রকৃতি ও বৈচিত্র্যকে বিনষ্ট করা হচ্ছে। জাতীয় বাজেট, ব্যয়, প্রকল্প ও ব্যবস্থাপনাকে পরিবেশবান্ধব হওয়ার দাবি জানিয়েছেন রক্তারা।
গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় বাজেট ২০১৯-২০:পরিবেশ ও উন্নয়ত বিতর্ক’ শীর্ষক নাগরিক সংলাপে এ দাবি জানানো হয়। পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে ও সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বলের সঞ্চালনায় সংলাপে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সদস্য রেজাউল করিম বাবলু, প্রতিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ বিষয়ক গবেষক পাভেল পার্থ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. শফিক উজ জামান, বিশিষ্ট আইনজীবী হাসান তারিক চৌধুরী, প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ, কবি শাহেদ কায়েস, মেনন চৌধুরী প্রমুখ। নাগরিক সংলাপে মূল প্রবন্ধ  উত্থাপন করেন  প্রতিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ বিষয়ক গবেষক পাভেল পার্থ।
বক্তারা বলেন, পরিবেশ রক্ষা করেই জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে। সরকার পদ্মাসেতু ও রূপপুর পারমানবিক কেন্দ্রের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ রেখেছেন কিন্তু পরিবেশ রক্ষায় কতটা বাজেট রেখেছেন সে প্রশ্ন জাতির সামনে চলে আসে। পরিবেশকে সমুন্নত রাখতে উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবেশের উন্নয়নও করতে হবে। শুধুমাত্র কাঠামোগত উন্নয়ন হলে তার মানুষ ও প্রাণ প্রকৃতির জন্য নিরাপদ হবে না।
মূল প্রবন্ধে গবেষক জানান, পরিবেশ খাতে বাজেট বাড়ছে না কমছে এই বিতর্কের চেয়েও গুরুত্ব দেয়া দরকার বাজেট বরাদ্দ ও ব্যবস্থাপনায় পরিবেশবান্ধব দিকগুলো। শালবন ও জলাভূমি বিনাশ  করে গার্মের্ন্টস তৈরি করে  কিছু কর্মসংস্থান হয়। কিন্তু  এতে দেশের ভবিষ্যৎ বিকাশ রুদ্ধ হয়ে যায়।  জাতীয় বাজেটকে পরিবেশবান্ধব  হতে হবে, পরিবেশ সুরক্ষার বাজেট বাড়ানো দরকার।
অধ্যাপক সফিক উজ জামান বলেন, প্রবৃদ্ধি বাড়লেই উন্নয়ন হয় না। যত প্রবৃদ্ধি তত পরিবেশ দূষণ। পরিবেশ রক্ষা করেই  আমাদের জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে। সরকার পদ্মাসেতু ও রূপপুর পারমানবিক কেন্দ্রের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ রেখেছেন কিন্তু পরিবেশরক্ষার জন্য কতটা বাজেট রেখেছেন সে প্রশ্ন জাতির সামনে চলে আসে। তিনি পরিবেশকে সর্বোচ্ছ গুরুত্ব দিয়ে দেখার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।
মো: রেজাউল করিম বাবলু এমপি বলেন, আমি পরিবেশের উপর শাতধিক পতিবেদন লিখেছি সাংবাদিক হিসেবে। ২০০৮ সালে পলিথিন উৎপাদন নিষিদ্ধ হলেও দেশে বর্তমানে ২ লাখ ৬৫ হাজার  মে.টন পলিথিন উৎপাদন হচ্ছে। আজ পরিবেশ বিধ্বংসীরাই দেশের সবচেয়ে বড় ক্ষতি করছে। কীটনাশক দিয়ে আমরা মাটির উর্বরতা নষ্ট করছি ও প্রাকৃতিক মাছ ধ্বংস করছি। কীটনাশক থেকে বের হয়ে আমাদের প্রাকৃতিক উপায়ে কৃষি উন্নয়নের চিন্তা করতে হবে। আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করার জন্য বিদেশী ষড়যন্ত্র আছে, এটি আমাদের বুঝতে হবে। আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি কিন্তু পরিবেশ ভারসাম্যের ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছি। পরিবেশ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে ব্যক্তি থেকে সমাজ পর্যন্ত।
অ্যাডভোকেট হাসান তারিক চৌধুরী বলেন, আমরা আইনজীবীরা কখনও পরিবেশ নিয়ে মামল্ ালড়তে গেলে পরিবেশ বিষয়ক তেমন তথ্য পাইনা। তাই পরিবেশ নিয়ে আরো কাজ হওয়া জরুরি । আর বাজেট সহ রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে পরিবেশকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা উচিত। বাজেটেও পৃথক বরাদ্দ ও তা কার্যকর করা দাবি জানান তিনি।
সংলাপের সভাপতি পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, পরিবেশকে  সমুন্নত রাখতে উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবেশের উন্নয়নও করতে হবে। শুধুমাত্র কাঠামোগত উন্নয়ন হলে তার মানুষ ও প্রাণ প্রকৃতির জন্য নিরাপদ হবেনা। আর যে উন্নয়ন মানুষমুখী নয় তা কখনও প্রকৃত উন্নয়ন নয়। তিনি সরকারকে পরিবেশ উন্নয়নে আরো ইতিবাচক পদক্ষেপের আহবান জানান এবং পরিবেশবাদীরা সরকারকে সকল ধরনের সহযোগিতা করবেন বলে আশ^াস প্রদান করেন।
সংলাপে বক্তাবা আরো বলেন, পরিবেশ ও উন্নয়ন যৌথসারথী। সত্যিকারের উন্নয়ন মানেই যেখানে পরিবেশ সুরক্ষার তৎপরতা গুলো জেগে থাকে। আবার অপরদিকে পরিবেশ সুরক্ষা মানেই সত্যিকারের উন্নয়ন। উন্নয়নের নামে পরিবেশকে কোনোভাবেই প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানো যায় না, জোর জবরদস্তিতে প্রাণ ও প্রকৃতি সুরক্ষা করা যায় না।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ