শনিবার ০৪ মে ২০২৪
Online Edition

ফুল ও দুর্লভ বৃক্ষে ভর্তি ঐতিহাসিক বলধা গার্ডেন

মুহাম্মদ নূরে আলম : ঢাকার ঐতিহাসিক স্থানগুলোর একটি বলধা গার্ডেন। দেশে-বিদেশে এর পরিচিতি রয়েছে। এ দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক-বাহক হিসেবে কালের সাক্ষী হয়ে আছে এ উদ্যানটি। এ উদ্যানকে বলা হয় ফুল ও উদ্ভিদের জীবন্ত জাদুঘর। নগরজীবনের ব্যস্ততা ভুলে একটু প্রশান্তির আশায় একান্তে সময় কাটাতে অনেকেই এক সময় এখানে ছুটে আসতেন। দেশি-বিদেশি প্রকৃতিপ্রেমীরা এখানে ভিড় করতেন নির্মল হাওয়ায় নির্জনে একটু সময় কাটাতে। এ উদ্যানটিতে স্বাধীনতার আগে ও পরে বাংলাদেশে আগত যে কোনো বিদেশি পর্যটকের পছন্দের তালিকায় রাজধানীর ওয়ারীর বলধা গার্ডেনের নামটি প্রথমেই থাকত। উনিশ শতকে বিদেশ থেকে আনা বহু রকম ফুল ও দুর্লভ গাছ নিয়ে সৃজন করা বলধা গার্ডেন সময় ও প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে যুদ্ধে এখন ধুঁকছে। আশপাশের বহুতল ভবনের কারণে সূর্যের আলো আর এই বাগানে ঢুকতে পারে না। এই কারণে বাগানটি আজ অস্তিত্ব সংকটে। আশপাশের বহুতল ভবনের কারণে সূর্যের রশ্মি পড়ছে না বাগানে। গত এক মাস ধরে গাছে পানি দেওয়া বন্ধ রয়েছে। ধূলিকণা পড়ে গাছ ও ফুল তার শ্রী হারাচ্ছে। বলধা গার্ডেনকে বাঁচাতে এবং অনুরূপ আরেকটি গার্ডেন তৈরির পরামর্শ দেন পরিবেশকর্মীরা।
বলধা গার্ডেনে শুধু পর্যটকরাই নন, দেশি-বিদেশি বরেণ্য ব্যক্তিরাও এসেছেন এ উদ্যানটিতে। তাদের অনেকেই নিজ হাতে নানা প্রজাতির বৃক্ষরোপণ করে উদ্যানের ইতিহাসে রেখেছেন অনন্য দৃষ্টান্ত। এদের মধ্যে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও  নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনসহ অনেকের নাম স্বর্ণাক্ষরে জড়িয়ে আছে। যান্ত্রিক এ শহরের মানুষগুলো সারা দিন কর্মব্যস্ততার মাঝে নিজের মতো করে সময় কাটাতে চান। কিন্তু সবাই পারেন কি। তাদের কেউ কেউ ছুটে আসেন এই প্রকৃতির কাছে। ঘুরে বেড়াতে চান একটু খোলামেলা গাছ-পাছালির ছায়ায় আলো-বাতাসে। আর বলধা গার্ডেন সেই অভাবকে ঘোচাতে বিচিত্র সব গাছের সমাহারে রাজধানীর বুকে সবুজ বৃক্ষের স্বর্গ হয়ে বসে আছে।
বলধার জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী ৩ দশমিক ৩৮ একর জমির ওপর ১৯০৯ সালে উদ্যানটি নির্মাণের কাজ শুরু করেন। শেষ হতে সময় লেগেছিল প্রায় ৮ বছর। বিরল প্রজাতির ৮০০ গাছসহ বাগানে প্রায় ১৮ হাজার গাছ শোভা পাচ্ছে। বাগানে এমন অনেক প্রজাতির গাছ রয়েছে, যা বাংলাদেশের অন্য কোথাও নেই। এখানে শুধু ক্যাকটাসই রয়েছে ৭০ প্রজাতির। এ ছাড়াও যেসব প্রজাতির গাছ নিয়ে গড়ে উঠেছে এ বাগান, সেগুলো হলো- অর্কিড, জলজ উদ্ভিদ, শিলালগ্ন প্রজাতি দেয়াল লতা, বৃক্ষশালাসহ বিবিধ গাছপালা। জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী ওয়ারী, টিকাটুলী ও নারিন্দার ঠিক মাঝখানে দুটি ভাগে বলধা গার্ডেন তৈরি করেন। বলধা গার্ডেনের এক পাশের নাম সাইকি, অপর পাশের নাম সিবিলি। ‘সাইকি’ অর্থ আত্মা এবং ‘সিবিলি’ ছিল গ্রিকের প্রকৃতি দেবীর নাম।
সাইকি অংশে সবার যাওয়ার অনুমতি নেই। এটা বন্ধ করে রাখা হয়। কারণ, এখানে এমন কিছু দুর্লভ প্রজাতির গাছ রয়েছে যা মানুষের আনাগোনায় নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। শুধু গবেষকরাই এখানে যেতে পারেন। সাইকিতে রয়েছে নীল, লাল ও সাদা শাপলাসহ রঙিন পদ্মা, তলা জবা, অপরাজিতা, ক্যাকটাস, পাম গাছ, আমাজান পদ্ম, জবা প্রভৃতি। এখানে রয়েছে সেঞ্চুরি প্লান্ট নামক শতবর্ষে একবার ফোটা ফুলের গাছ। রয়েছে বাওবাব নামক এক ধরনের গাছ। এ গাছের খোঁড়লের মধ্যে আফ্রিকার আদিবাসীরা মিসরের ফারাউনদের মৃতদেহ রেখে মমি বানাত। এ অংশের দুটি গ্রিন হাউসের একটিতে আছে নানা প্রজাতির অর্কিড এবং অন্যটিতে রয়েছে ঔষধি ও ইনডোর উদ্ভিদ। এখানেই ছিল বলধার জমিদার বাড়ি। বলধা গার্ডেনের সিবিলি অংশটি সবার জন্য উন্মুক্ত। উদ্যানের এ অংশে রয়েছে সূর্যঘড়ি। যার মাধ্যমে সূর্য নিজেই সময় বলে দেয়। এ বাগানের সৌন্দর্য ও আকর্ষণের শেষ নেই। সূর্যঘড়ি সে রকমই একটি। ঘড়িটি প্রথম থেকে চালু রয়েছে। সূর্যের সঙ্গে মিলিয়ে এ ঘড়ির সময় ওঠে। দর্শনার্থীরা শঙ্খনদ, জয় হাউস এবং বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ও ফুল দেখার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যঘড়িটির দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকান।
ঐতিহ্যবাহী বলধা গার্ডেন পরিবেশগত সৌন্দর্য, গৌরব সবই প্রায় হারাতে বসেছে। এখন পুরো বাগানজুড়ে অযতœ আর অবহেলার ছাপ। শিক্ষার্থীদের শিক্ষাসফরের আদর্শ স্থানের বৈশিষ্ট্য হারিয়ে বাগানটি এখন বখাটেদের আড্ডাখানা। গত মঙ্গলবার বাগান এলাকা ঘুরে এমন অবস্থাই দেখা যায়। বেলা ১১টা থেকে একটা পর্যন্ত বাগান এলাকায় কোনো নিরাপত্তাকর্মীকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বলধা গার্ডেনকে ঘিরে এলাকায় অসামাজিক কার্যক্রম বেড়েছে। বাগানের বাইরে পুলিশ থাকলেও নিয়মিত ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। ১৫ টাকায় টিকিট কেটে নিরাপদ স্থান হিসেবে তরুণ-তরুণীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা অবস্থান করে। তবে কিছু বখাটে এদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে মুঠোফোন, ঘড়ি, টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয়।
বলধা গার্ডেন-সম্পর্কিত বিভিন্ন ইতিহাসগ্রন্থ থেকে জানা যায়, বিখ্যাত এই বাগানের মালিক ছিলেন বলধার জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী। উনিশ শতকের শেষের দিকে এটি ছিল সেই জমিদারের বাগানবাড়ি। বলধা নাম থেকেই বলধা গার্ডেনের নামকরণ বলে ধারণা করা হয়। দুটি ভাগে বিভক্ত বলধা গার্ডেনের আটশ প্রজাতির প্রায় ১৮ হাজার গাছ ছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজেও বিভিন্ন গাছের বাংলা নামকরণ করেছিলেন। জানা যায়, নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে নানারকম ফুলগাছ ও অন্যান্য উদ্ভিদ এনে রোপণ করেন এ বাগানে। যার জন্য বাগানটি প্রকৃতপক্ষে হয়ে ওঠে ফুল ও উদ্ভিদের জাদুঘর।
প্রতিদিন সকাল ৮.০০টা থেকে দুপুর ১২.৩০টা এবং দুপুর ২.০০টা থেকে বিকাল ৬.২০টা  পর্যন্ত খোলা থাকে। এই বাগান সবার জন্য উন্মুক্ত। সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত খোলা থাকে বলধা গার্ডেন। টিকিট কেটে সিবিলী অংশেই ঢোকা যায়। দেখা যায়, চলাচলের পথেই ধুলোবালিতে ভর্তি পাতার স্তূপ। জানা গেল, পরিষ্কারের দায়িত্ব যাঁদের, তাঁরা বাগানের বাইরে দোকান খুলে বসেছেন। সূর্যঘড়ি কাজ করছে না। কারণ, সূর্য ও আলো আড়াল করে আশপাশে বিশাল অট্টালিকা গড়ে উঠেছে।
প্রকৃতি নিয়ে কাজ করেন মোকারম হোসেন। তিনি জানান, সঠিক পরিচর্যার অভাবে প্রতিবছরই এ বাগানের বিরল প্রজাতির দু-চারটি গাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এসব গাছ রক্ষা করতে পরিচর্যা ছাড়াও ঢাকার বাইরে এগুলোর চারা দিয়ে আরেকটি বলধা গার্ডেন করার প্রস্তাব করেন তিনি।
বাগানের অপর অংশ ‘সাইকী’র (আত্মা) প্রধান আকর্ষণ ছিল নানা বর্ণের শাপলায় ভরা শাপলা হাউস, বিরল প্রজাতির দেশি-বিদেশি ক্যাকটাস, অর্কিড, অ্যানথুরিয়াম, ভূজ্জপত্রগাছ, বিচিত্র বকুল, আমাজান লিলি, সুড়ঙ্গসহ একটি ছায়াঘেরা ঘর। কিন্তু অনেক দিন ধরে এই অংশটি বন্ধ করে রাখা হয়েছে। ভেতরেই ঢাকা ওয়াসার পানির পাম্পস্টেশন বসানো হয়েছে। ভেতরে ফুল ও অন্যান্য গাছ সুরক্ষার সম্পূর্ণ বাইরে। একটি বেঞ্চ রয়েছে বসার কিন্তু এর এমন দশা হয়েছে বসলেই পড়ে যেতে হবে। এখানে-সেখানে জন্মেছে বেঢপ কচুগাছ।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনসহ (পবা) বিভিন্ন পরিবেশবান্ধব সংগঠন কয়েক বছর আগে বাগানের চারদিকে বড় অট্টালিকা না করার দাবিতে বিক্ষোভ করেছিল। পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, তাঁদের আন্দোলনকে মূল্য দিলে বলধা গার্ডেনকে সুরক্ষা করা যেত। বিরল প্রজাতির অনেক গাছ হারিয়ে যেত না। ১৯৬২ সালে বন বিভাগ বাগানটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পায়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর একে জাতীয় উদ্যানের সমান গুরুত্ব পাওয়ার যোগ্য বলেও মনে করা হতো। বন বিভাগের প্রধান বন সংরক্ষক ইউনুস আলী গণমাধ্যমকে বলেন, বলধা গার্ডেনের বিষয়ে অভিযোগগুলো পর্যালোচনা করতে তিনি শিগগিরই সেখানে যাবেন। দেখেশুনে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মোহাম্মদ আলী খান তাঁর এক  প্রবন্ধে বলধা গার্ডেন প্রতিষ্ঠার ইতিহাস, এর প্রতিষ্ঠাতা এবং দুর্লভ বৃক্ষের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। এতে উল্লেখ করা হয়, ১৯০৯ সাল থেকে বলধা বাগানের দুটি অংশে কাজ শুরু হয়। ১৯৪০ সাল পর্যন্ত চলে সেই সৃষ্টিকর্ম। এই বাগানের জন্য প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ রায় চৌধুরী জাপান থেকে এনেছেন ক্যামেলিয়া। শ্রীলঙ্কা থেকে কনকসুধা, গায়ানা থেকে আনেন দুষ্প্রাপ্য নাগলিংগম ফুল, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আফ্রিকান টিউলিপ, মাদাগাস্কার থেকে বার্ডস অব প্যারাডাইস, যুক্তরাজ্য থেকে গোলাপ ও অর্কিড। বলধা গার্ডেনে এখন প্রায় ১৮ হাজার উদ্ভিদ রয়েছে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেনকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে এই গার্ডেনে। আইনুন নিশাত ঢাকার এক সেমিনারে বলেন, বলধা গার্ডেনের জন্য গাজীপুরে পাঁচ থেকে ছয় একর জায়গা পাওয়া কঠিন বিষয় হবে না। আমাদের এই ধরনের দুর্লভ জিনিস রক্ষা করা জরুরি। তিনি আরো বলেন, বলধা গার্ডেনে যেসব দুর্লভ গাছ আছে সেগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে। এর রেপ্লিকার নাম যাতে বলধা গার্ডেনই থাকে সেটি নিশ্চিত করার অনুরোধ করেন তিনি। একই অভিমত ব্যক্ত করেন অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন।
মিহির লাল সাহা বলেন, ১১০ বছর আগে নরেন্দ্র নারায়ণ রায় যেভাবে প্রকৃতিকে ভালোবেসে গাছ লাগিয়েছেন, বাগান তৈরি করেছেন, এখন সেই ধরনের মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। চারপাশের আগ্রাসন থেকে বাগানকে রক্ষায় তিনিও বলধা গার্ডেনের একটি প্রতিরূপ অন্যত্র তৈরি করার দাবি জানান।
সিবিলী অংশের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে শংখনদ পুকুর, ক্যামেলিয়া, স্বর্ণ অশোক, আফ্রিকান টিউলিপ আরও আছে সূর্যঘড়ি, জয় হাউজ ও ফার্ন হাউজ। এছাড়া বলধা গার্ডেনে ৬৭২ টি প্রজাতির ২৫,০০০ উদ্ভিদ আছে। বিশ্বের প্রায় ৫০টি দেশের গাছ এখানে। শুধু গোলাপই ছিল ২০০ জাতের। ক্যাকটাসের একটি আলাদা সংগ্রহ ছিল। এছাড়া আছে কৃষ্ণবট, ক্যামেলিয়া, ভূর্জপত্র, আমাজান, লিলি প্রভৃতি। গার্ডেনের নিরাপত্তার বিষয়টি কর্তৃপক্ষ দেখে। অনেক সময় পুলিশ এনেও নিরাপত্তা রক্ষা করা হয়। এছাড়া বাগানের নিরাপত্তা ও অন্যান্য কাজের জন্য প্রায় ১০ থেকে ১৫ জন লোক নিয়োজিত রয়েছে। বন বিভাগের হিসাব অনুযায়ী ১৩ জন লোক এখানে রয়েছে।
বেড়াতে আসার কারণ : অনেকে সময় কাটানোর জন্য পরিবারের সদস্যদের সাথে এখানে আসে। আবার বিভিন্ন উদ্ভিদের উপর এসাইনমেন্ট করার জন্য কলেজের অনেক ছাত্র-ছাত্রী আসে। তবে অনেক প্রকৃতি প্রেমিক আসে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এবং ছেলে মেয়েদের বিভিন্ন গাছ সম্বন্ধে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য।
এই গার্ডেনের আরেকটি বিশেষ দিক হল বিশ্ববিখ্যাত নোবেল বিজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর বিখ্যাত কবিতা ক্যামেলিয়া লিখেছেন এই গার্ডেনে বসে। বলধা গার্ডেনের আগের জৌলুস আর নেই। অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে। বাগান সংরক্ষণের জন্য যতটুকু যত্নের প্রয়োজন তাও ঠিকমত নেওয়া হয় না। তারপরও বর্তমান ঢাকায় খানিকটা স্বস্তি, খানিকটা আনন্দের জন্য এখনও বলধা গার্ডেনই ভরসা।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ