আলুপট্টি-তালাইমারী সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্প নিয়ে রহস্য
সরদার আবদুর রহমান : রাজশাহী মহানগরীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আলুপট্টি-তালাইমারী সড়ক প্রশস্তকরণ ও চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প নিয়ে রহস্য দানা বেঁধেছে। প্রকল্পের কাজ শুরুর লক্ষ্যমাত্রার চার বছর পার হয়ে গেলেও তা আজো শুরু হয়নি। ফলে এনিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্প শেষ করতে না পারায় রাজশাহীর অনেক প্রকল্পের অর্থ ফেরৎ যাবার ঘটনা আছে। এক্ষেত্রেও তেমন আশঙ্কা করছেন নগরবাসী। যদিও এই প্রকল্প অনুমোদনের কৃতিত্ব নিয়ে টানাটানির শেষ নেই সরকারসংশ্লিষ্ট লোকদের মধ্যে।
আলুপট্টি-তালাইমারী সড়কটি অনেকটা নগরীর প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত হয়ে আসছে। ‘নাটোর রোড’ নামে খ্যাত এই সড়ক দিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য শহর থেকে রাজশাহীতে প্রবেশ করা যায়। ব্রিটিশ যুগ থেকে এই সড়কটি অপ্রশস্ত। এর এক পাশে ‘রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধ’-এর অবস্থান। সময়ের চাহিদা ও চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় এটি প্রশস্ত করার প্রয়োজন দীর্ঘদিন ধরেই অনুভূত হয়ে আসছে। সে মোতাবেক রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) সড়কটিকে ফুটপাতসহ ৬৭ ফুট চওড়া করার জন্য প্রকল্প গ্রহণ করে। এ সড়কটি প্রশস্ত হলে রাজশাহী নগরীর যোগাযোগের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন সূচিত হবে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। উল্লেখ্য, রাজশাহী নগরীর প্রাণকেন্দ্র সাহেব বাজার ও রাজশাহী কোর্ট এলাকা থেকে পূর্বপ্রান্তে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় প্রভৃতির সংযোগ সড়ক হিসেবে উল্লিখিত রাস্তাটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ফলে এতে নিত্য যানবাহনের চাপ অব্যাহত থাকে।
সূত্রমতে, ২০১২ সালে এসংক্রান্ত প্রকল্প প্রণয়ন ও মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করা হয়। সেই প্রকল্প ২০১৫ সালে একনেকে ‘চারলেনে উন্নীতকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্প’ হিসেবে পাস হয়। ভূমি অধিগ্রহণসহ এই প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয় ১২৭ কোটি ৪৯ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক)-এর উদ্যোগে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন ২০১৫-এর জানুয়ারিতেই শুরু করার কথা ছিলো। কিন্তু এ পর্যন্ত একপাশের ফুটপাত ছাড়া কোনো কাজ হয়নি। কথা ছিলো সড়কের প্রথম কাজই হবে ভূমি অধিগ্রহণ। কারণ ভূমি অধিগ্রহণের ওপরই নির্ভর করছে সড়ক প্রশস্তকরণের ভবিষ্যৎ। অথচ ইতোমধ্যে ৪ বছর পার হয়ে গেলেও এ পর্যন্ত ভূমি অধিগ্রহণের কাজে হাতই দেয়া হয়নি। ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু না হওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে সড়কের মূল কাজ। এর ফলে অনিশ্চয়তায় ঝুলে রয়েছে আলুপট্টি-তালাইমারী সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পটি। রাসিকের প্রকৌশল বিভাগ ২০১৮-এর ডিসেম্বরের মধ্যে ভূমি হুকুম-দখল করে ২০১৯-এর ডিসেম্বরের মধ্যে সড়কটির প্রশস্তকরণের কাজ শেষ হওয়ার কথা। এসব কারণে সড়কটির প্রশস্তকরণ আদৌ হবে কি না তা নিয়ে নগরবাসীর মাঝে সন্দেহ ও নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সড়কটির এক পাশে ফুটপাত নির্মাণ করে একটা উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যবহার করে ফেলা হয়েছে। তিন কিলোমিটার সড়কের দক্ষিণ পাশ দিয়ে সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয়ে নর্দমা ও ফুটপাত তৈরি করা হয়েছে। এতে সড়কের দৈর্ঘ্য ৬ ফুট কমে ১২ ফুটে এসে ঠেকেছে। ফলে বিদ্যমান সড়কটি আরো সংকীর্ণ হয়ে পড়ায় জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে। এই সড়কপথ দিয়েই নগরীতে যাতায়াত করে চলেছে অসংখ্য ছোট-বড় গাড়ি। শহরের পূর্ব প্রান্তে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শত শত শিক্ষার্থীকে ঝুুঁকি নিয়ে এই পথ পাড়ি দিতে হয়। যানজটের কারণে স্বাভাবিকভাবে চলাচল করাই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর সংকীর্ণ মোড়গুলোতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে।
প্রকল্পের কাজ শুরু হচ্ছে না কেন, এর রহস্য কি- সেবিষয়ে খোলাসা করে কেউ কিছু বলে না। এবিষয়ে রাসিকের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে বলা হয়, ভূমি হুকুম-দখল সংক্রান্ত কিছু জটিলতার জন্য প্রক্রিয়াটি এগুতে সময় লাগছে। এনিয়ে দু’একটি মামলা হলেও তাকে ধর্তব্যের মধ্যে নিতে চাচ্ছে না সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ। তাদের দাবী, আগামী জুলাইয়ের মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু করা যাবে। অন্যদিকে দীর্ঘসূত্রতার কারণে সড়ক নির্মাণ কাজের ব্যয় আরো বেড়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। এর ফলে সড়কটির নির্মাণ কাজ ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। রাসিকের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ভূমি অধিগ্রহণখাতে প্রায় ৬০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদও বাড়ানো হয়েছে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত। এদিকে প্রকল্পের কাজ শুরু করতে না পারলেও এর সরকারি অনুমোদন হওয়ার পর এর কৃতিত্ব দাবি করা নিয়ে রীতিমত রশি টানাটানি চলে। শুরুতে প্রকল্পের অনুমোদনের খবর প্রকাশ হওয়া মাত্র সরকারি দলের স্থানীয় নেতারা নিজেদের ছবিসহ বিরাট আকারের বিল বোর্ড স্থাপন করে স্ব স্ব কৃতিত্ব জাহির করতে নেমে পড়েন। এই প্রকল্প দেখিয়ে ভোটও দাবি করা হয়। অন্যদিকে মেয়র এক দলের এবং এমপি অন্য শরিক দলের হওয়াতেও জটিলতা তৈরি হয়। একজন যেন আরেকজনের কৃতিত্ব দখল করে নিতে না পারে এনিয়েও চলে পাল্লা দিয়ে প্রচারণা। বিষয়টি নগরবাসীর কাছে বেজায় দৃষ্টিকটূ হয়ে দেখা দেয়।