শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

এমবিবিএস পাস না করেও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার!

বেলকুচি (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতাঃ ডাক্তার কামরুল হাসান অপু। এমবিবিএস পাস না করলেও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হিসেবে এলাকায় নাম ডাকের কমতি নেই। তাকে দেখানোর সিরিয়াল নিতে তদবিরও করতে হয় রোগী ও স্বজনদের। ভুয়া এ ডাক্তার কমিশনের ভিত্তিতে দালালচক্রের মাধ্যমে গ্রামের গরিব-অসহায় রোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন তাদের কষ্টার্জিত টাকা।  ‘প্রেসক্রিপশন, ভিজিটিং কার্ড ও সাইন বোর্ডে লিখেছেন- এমবিএস (আরএমসি), পিজিটি (মেডিসিন), সিএমইউ আল্ট্রা, প্রাক্তন অনারারি মেডিকেল অফিসার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। শিশু, বাতব্যথা, মাথাব্যথা, বক্ষব্যাধি ও মেডিসিন বিষয়ে বিশেষ অভিজ্ঞ।’ টাঙ্গাইল জেলার বাসিন্দা ডাক্তার অপু প্রায় আড়াই বছর আগে এমবিবিএস ডাক্তার পরিচয়ে বিয়ে করেছেন সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার জামতৈল এলাকার বিশিষ্ট ঠিকাদার ও সাধারণ ব্যবসায়ী এসএম নজরুল ইসলামের একমাত্র মেয়ে নওরিনকে। থাকেন ঘর জামাই। শ্বশুরালয়ে গড়ে তুলেছেন ইবনেসিনা আস্থা ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্স। সেখানেই রোগী দেখেন তিনি। তবে প্যাথলজিটির নাম ইবনেসিনা আস্থা ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্স হলেও সিভিল সার্জন অফিসের তালিকায় দেখা যায় শুধু ‘আস্থা ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্স। ভিজিটিং কার্ড লেখা রয়েছে ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্সে ইসিজি, ৪ডি রঙিন আল্ট্রাসনোগ্রাফিসহ নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। প্রকৃতপক্ষে এখানে এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার কোনো সরঞ্জাম নেই। কোনো রোগীকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাজি করাতে পারলে কমিশনের ভিত্তিতে এগুলো পাঠিয়ে দেয়া হয় অন্য কোনো প্যাথলজি বা ক্লিনিকে।
এখানে উপজেলার চর কামারখন্দ গ্রামের জবা খাতুন নামে একজন কিশোরী অ্যাটেনডেন্ট হিসেবে কাজ করে। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও তাকে দিয়েই রোগীদের রোগ নির্ণয়ের জন্য রক্ত সংগ্রহ করানো হয়। আর ডাক্তার অপু নিজেই সেসব রক্ত পরীক্ষা করে রিপোর্ট তৈরি করে থাকেন। এভাবেই তিনি গ্রামের অসংখ্য অসহায়-গরীব মানুষের রক্ত-ঘামে ভেজা টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
চলতি বছরের ১৬ এপ্রিল পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে কামারখন্দে গিয়ে সাংবাদিক জেহাদুল ইসলাম শারীরিক অসুস্থতা বোধ করলে স্থানীয়দের পরামর্শে তিনি ডাক্তার কামরুল হাসান অপুর স্মরণাপন্ন হন। ডাক্তার সাহেব তাকে ডায়াবেটিস, লিপিট প্রফাইলসহ নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে বলেন।
এ সময় কথিত ডাক্তারের সঙ্গে আলাপচারিতার এক পর্যায়ে তার অসংলগ্ন কথাবার্তায় তার মনে সন্দেহের সৃষ্টি হলে তিনি টাকা না থাকার অজুহাত দেখিয়ে শুধু ডায়াবেটিস ও ব্লাড প্রেসার চেকাপ করে চলে আসেন। পরে ২৬ জুন ফের ওই ডাক্তারের কাছে গেলে তার অসংলগ্ন কথাবার্তা শুনে সাংবাদিক জেহাদুল ইসলাম তার বিএমডিসির নিবন্ধন নম্বর দেখতে চান। এ সময় ডাক্তার অপু ও তার স্ত্রী নওরিন নানা টালবাহানা করতে থাকেন।
এক পর্যায়ে ডাক্তার অপু জানান, তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ৪৭তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। কিন্তু চূড়ান্ত পরীক্ষায় পাস করতে পারেননি। পেটের তাগিদে ভুয়া ডাক্তার সাজতে বাধ্য হয়েছেন। এমন কাজ অপরাধ বলেও স্বীকার করেন তিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়দের অনেকেই জানান, ডাক্তার অপু নিজ এলাকায় ধরা খাবেন বলে এলাকা ছেড়ে ঘরজামাই থেকে প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসেছেন। তার শ্বশুর এসএম নজরুল ইসলাম অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে এলাকায় অত্যন্ত প্রভাবশালী। ভুয়া এ ডাক্তারকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তারা।
এ ব্যাপারে কথিত ডাক্তার কামরুল হাসান অপুর শ্বশুর এসএম নজরুল ইসলাম বলেন, জামাই ডাক্তার জেনেই মেয়েকে বিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া তিনি আর কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
সিরাজগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি কামরুল হাসান অপুকে বিএমডিসির সনদসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে দেখা করতে বলা হয়েছে। তবে তিনি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে দেখা করেননি।  তার ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়ে দ্রুতই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ