শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

ভালুক ছানা- একটা বিস্ময়

আহসান হাবিব বুলবুল : কারণ ছাড়া কোনো ঘটনা সংঘটিত হয় না। পুস্তকের ভাষায় একে বলে ‘কার্যকারণ সম্পর্ক’। প্রকৃতিতে আমরা এই কার্যকারণ সম্পর্ক লক্ষ্য করি। কারণ ছাড়া যেন কিছুই ঘটে না। একটা ঘটনা আমাদের অবাক করে। তবে পেছনের কারণ জানার ব্যাপারটা হলো ভালুক মায়ের বাচ্চার ওজনের অনুপাত নিয়ে যত কথা।

মানুষের বেলায় সদ্যজাত শিশুর ওজন হয় তিন-চার কিলোগ্রাম। গাভীর বাছুরের ওজন প্রায় এক মণ। ভেড়ার বাচ্চার ওজন হয় সাধারণ দুই কিলোমগ্রাম। এই অনুপাত সামনে রেখে যদি প্রশ্ন করা হয়, পাঁচ মণী ওজনের ভালুক এর ছানার ওজন কত হবে? তোমরা হয়তো চট করে বলে দিবে আট-নয় কিলোগ্রাম। উত্তরটা ঠিক হলো না। সত্যি ধারণা করা বেশ কঠিন যে, অতিকায় ভল্লুকীর সদ্যজাত বাচ্চার ওজন গড়ে মাত্র আধ কিলোগ্রাম। একটা ইঁদুরের সমান। নবজাতকের সঙ্গে তার মায়ের ওজন তুলনা করলে দেখা যাবে যে, ভালুক ছানা তার মায়ের ওজনের শূন্য দশমিক সাতাশ (০.২৭) শতাংশ। জেনে রাখা ভালো, জীবনের প্রথম দশ দিনে বেড়ালের বাচ্চার ওজন বাড়ে দৈনিক প্রায় ২৪ গ্রাম, সেবলদের প্রায় ১০ গ্রাম, ভেড়ার বাচ্চার প্রায় ১৮০ গ্রাম আর ভালুক ছানার মাত্র দুই দশমিক পাঁচ (২.৫) গ্রাম করে।

স্বভাবতই মনে প্রশ্ন জাগে, প্রকৃতিতে এমন বিচিত্র অনুপাত কেন? আমরা এখন সেই কারণটাই জানব।

ভালুক বাচ্চা দেয় শীতে। একেবারে বসন্ত না আসা পর্যন্ত সে গুহা থেকে বের হয় না। দেহের মধ্যে সেই শরতে সঞ্চিত চর্বি আর অন্যান্য পুষ্টি খরচ করেই সে দুধ খাওয়ায় বাচ্চাদের। শীতে ভল্লুকীর দেহে এসব জিনিসের জোগান হয় না একবারও। এমনকি সে পানিও খায় না।

এ থেকেই অনুমান করা যায় যে, এ অবস্থায় ভল্লুকী মায়ের পক্ষে বসন্ত পর্যন্ত দুধ খাইয়ে যাওয়া সম্ভব কেবল বাচ্চা ক্ষুদ্র বলেই। আর ভালুক ছানা যদি বাছুরের মত বড় হতো, তাহলে দৈনিক সে দুধ খেতে অন্তত পাঁচ কেজি। এতে দ্রুত শীর্ণ হয়ে পড়ত ভল্লুকী। গোটা সংসারই ধ্বংস হয়ে যেত।

বসন্তু পর্যন্ত ভালুক ছানা বাড়ে অতি ধীরে ধীরে। বসন্তে মায়ের সঙ্গে যখন তারা গুহা থেকে বাইরে বের হতে শুরু করে, নানা ধরনের খাদ্য খেতে থাকে, কেবল তখনই অবস্থাটা বদলায়। এই সময় তারা পিঁপড়ে, কেঁচো, শুঁয়োপোকা, ইঁদুর, মাছ প্রভৃতি প্রচুর খায়। ফলে ভালুক ছানারা দ্রুত বড় হয়ে উঠতে থাকে।

সাধারণভাবে তৃণভোজী জন্তুর ছানারা যে দুধ খেয়ে বড় হয়, তা সরাসরি উৎপাদিত হয় সারা বছর ধরে খাওয়া খাদ্য থেকে। তৃণভোজী প্রাণীদের ছানারা ঘাস খেতে শুরু করে তাড়াতাড়ি। সে জন্যই জন্মের প্রথমদিন থেকেই তারা বেড় উঠতে থাকে অনেক দ্রুত। যেটা মাংসাশী প্রাণিদের ক্ষেত্রে হয় না। দেখা যায়, প্রকৃতিতে জীবনের বিভিন্ন পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নেয় প্রাণীরা। তোমরা যদি প্রকৃতি-পরিবেশ নিয়ে একটু গভীরভাবে ভাবো, পড়াশোনা করো, দেখবে সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ কত বিজ্ঞ, কৌশলী ও মহাবিজ্ঞানী।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ