শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

শেখ হাসিনার নির্দেশ ছাড়া খালেদা জিয়ার জামিনও মিলবে না

গতকাল শুক্রবার নয়াপল্টন বিএনপি কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ -সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার : দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে আতঙ্ক ও শঙ্কার কথা জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল শুক্রবার বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই উদ্বেগের কথা জানান। তিনি বলেন, দেশনেত্রীর জীবনের পরিণতি নিয়ে দেশবাসীর ন্যায় আমরাও এক অজানা আতঙ্ক ও শঙ্কার মধ্যে রয়েছি। কারাগারে নেয়ার সময় সুস্থ বেগম জিয়াকে এখন হুইল চেয়ারে চলাফেরা করতে হয়। অবস্থা এমন হয়েছে যে শেখ হাসিনার নির্দেশ ছাড়া বেগম খালেদা জিয়ার জামিনও মিলবে না। এদিকে প্রাণঘাতী ডেঙ্গুর বিস্তার নিয়ে স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যকে ‘টক অব দি সেঞ্চুরী’ মন্তব্য করে রিজভী বলেন, প্রতিমন্ত্রীর এহেন বক্তব্য শুনে একে ‘টক অব দি সেঞ্চরী’ বলবো নাকি ‘শক অব দি সেঞ্চরী’ বলব এ নিয়ে আমি এবং দেশের মানুষও দ্বিধায় পড়ে গেছে। কী বলব? মধ্য রাতের নির্বাচন করে আওয়ামী মন্ত্রিসভায় এডিস মশা বিস্তারের মতো গবুচন্দ্র মন্ত্রীদেরও বিস্তার ঘটেছে।
রিজভী বলেন, দেশব্যাপী যেমন এডিস মশার বিস্তারে কোনো বিরতি দেখা যাচ্ছে না ঠিক তেমনি নবকলবরে গবুচন্দ্র মন্ত্রীদেরও হাসি-তামাশা উদ্রেককারী কথা-বার্তার কমতি দেখা যাচ্ছে না। স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী কোন ব্যুরো থেকে তথ্যসমূহ সংগ্রহ করেছেন তা জানালে দেশবাসীর উপকার হতো। বৃহস্পতিবার গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় এক সেমিনারে স্থানীয় সরকার ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, দেশ যত উন্নত হবে মানুষের সমস্যা তত বাড়বে। যে দেশ যত উন্নত হচ্ছে, সে দেশে রোগের প্রভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডেঙ্গু এলিট শ্রেণির একটি মশা। এ মশা সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, কলকাতা শহরে দেখা যাচ্ছে। এখন বাংলাদেশ উন্নত দেশ হতে যাচ্ছে। তাই এখন দেশে ডেঙ্গু এসেছে। মানুষের যত অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে তত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
রিজভী প্রশ্ন রেখে বলেন, দেশ উন্নত হলে যদি প্রকোপ বৃদ্ধি পায় তাহলে লন্ডন, নিউইয়র্ক, প্যারিস, ডেনমার্ক- এই সমস্ত বড় বড় উন্নত দেশে ডেঙ্গুজ্বরে অথবা ম্যালেরিয়ায় অথবা কলেরায় একেবারে পাড়া-মহল্লায় একেবারে মানুষ মরে সাফ হয়ে যেতো। কৈ আমরা তো সেটা দেখিনি। কোনো কারণে যদি এলাকার জনগণের ক্ষতি হয় তাহলে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করে দেয়া হয় ওই সমস্ত দেশে। তবে মন্ত্রী বোধহয় আসল কথাটা বলতে চেয়েছেন একটু অন্যভাবে- উন্নয়নের নামে দুর্নীতির বিপুল পরিমান টাকা পকেটস্থ হলেই ডেঙ্গুর মতো প্রাণবিনাশী বালা মুসিবত দেশে বিস্তার লাভ করে। এটাই আসলে বলতে চেয়েছেন, বললে পরে তার মন্ত্রীত্ব চলে যাবে। তাই উনি ঘুরিয়ে বলেছেন যে, দেশ উন্নত হলে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বাড়বে।
ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে মানুষকে বাঁচাতে সরকারের ব্যর্থতার কঠোর সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ডেঙ্গু রোগীতে ছেয়ে গেছে সব হাসপাতাল। ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকেও রক্ত পরীক্ষা করতে পারছে না রোগীরা। কেউ কেউ অনেক কষ্টে রক্ত পরীক্ষা করেও রিপোর্ট পেতে হয়রানির শিকার হচ্ছে। যেদিন রিপোর্ট দেয়ার কথা, সেদিন রিপোর্ট পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, পরিস্থিতি সামাল দেয়ার সরকারের কোনো সক্ষমতা নেই। মশা নিধনে যদি সত্যিকারের কার্যকরী ঔষধ নিয়ে আনা হতো তাহলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পেতো না। মানুষকে বাঁচাতে তাদের (সরকার) কোনো দায়-দায়িত্ব নেই। তারা যেটি করছে সেটি হলো লোক দেখানো মশা নিধনের নামে ক্যামেরা শুটিং।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে স্ববিরোধী-বিপরীত ধর্মী কথা-বার্তা, রাতের কথার সাথে সকালের কথার গরমিল ইত্যাদি এই ধরনের কথা থেকে সিকি আধুলি গোটা মন্ত্রী কেউ কম যাচ্ছেন না। ওবায়দুল কাদের সাহেব ক‘দিন আগে বলেছেন যে, সবাই ঈদে বাড়ী যাবেন কোরো অসুবিধা নাই। বৃহস্পতিবার আবার বলেছেন, বাড়ী যাওয়ার আগে রক্ত পরীক্ষা করে যাবেন। আমার মনে হয় কি জানেন, সাধারণ মানুষ বা ঘরে ফেরা মানুষের রক্ত পরীক্ষার দরকার নাই। আসলে আওয়ামী মন্ত্রীদের মস্তিষ্কের পরীক্ষার দরকার আছে। সাংঘাতিক ধরনের গোলমাল এদের মাথায় বেঁধেছে। তাদের মন্ত্রীত্ব ও অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার জন্য এদের মাথা একেবারে এলোমেলো হয়ে পড়েছে। এজন্য এদের রাতের কথার সাথে দিনের কথার, পরশুদিনের কথার সাথে আজকের কথার কোনো মিল নাই।
বিএসএমএমইউতে চিকিসাধীন বন্দি খালেদা জিয়ার ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণহীন হওয়ায় সার্বিক শারীরিক অবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ঈদের আগেই তার মুক্তির দাবি জানিয়েছেন রিজভী। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখনও গুরুতর অসুস্থ। বারবার ইনস্যুলিন পরিবর্তন এবং ইনস্যুলিনের মাত্রা বৃদ্ধি করার পরেও কোন অবস্থাতেই তার সুগার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। কোন কোন সময় এটি ২৩ মিলিমোল পর্যন্ত উঠে যাচ্ছে। সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে খাবারের পরিমান অনেক কমিয়ে দেয়াতে শরীরের ওজন অনেকখানি হ্রাস পেয়েছে। যথাযথ চিকিৎসার বিষয়ে আমরা বারবার দাবি করা সত্বেও দেশনেত্রীকে উন্নতমানের যন্ত্রপাতি বিশিষ্ট দেশের কোন বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়নি। ব্যথার কারণে রাত্রে তার ঘুম হচ্ছে না এবং সারাক্ষণ তিনি অস্থির থাকছেন। দেশনেত্রীর সুস্থ জীবন প্রত্যাশা করছে দেশবাসী সবাই। কিন্তু সরকারের নির্মম আচরণে নিরাশ হয়ে পড়েছে তারা। কারাগারে নেয়ার সময় সুস্থ বেগম জিয়াকে এখন হুইল চেয়ারে চলাফেরা করতে হয়। দেশবাসী দেশনেত্রীর জীবনের পরিণতি নিয়ে এখনও অজানা আতঙ্ক ও শঙ্কার মধ্যে রয়েছে।
সরকার বেগম জিয়ার জীবন নিয়ে গভীর মাষ্টারপ্ল্যানে ব্যস্ত অভিযোগ করে রিজভী বলেন, এই মাষ্টারপ্ল্যান হচ্ছে-গণতন্ত্রের ধ্বংসস্তুপের ওপর জাতীয়তাবাদী শক্তিকে নির্মূল করে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে অন্যের কাছে বিকিয়ে দেয়া। এই মধ্যরাতের সরকার নতুন কাশিমবাজার কুঠি সৃষ্টি করে দেশের মানুষকে পরাধীন করতে এক সর্বনাশা পথে হাঁটছে বলেই গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে রোগে-শোকে-ব্যথা-বেদনায় জর্জরিত রেখে কারাগারে আটকিয়ে রেখেছে। তার জামিনে বাধা দেয়া হচ্ছে। আদালতের কথাতেই মনে হচ্ছে যে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ছাড়া কিছু হবে না। আপনারা দেখেছেন-বেগম জিয়ার আইনজীবীরা যখন আদালতে শুনানী করেন তখন তারা বলেছেন-সরকারের পক্ষ থেকে ওবায়দুল কাদেরসহ শীর্ষ নেতারা বলেছেন খালেদা জিয়ার জামিনে বাধা দেয়া হবে না। আদালত প্রতিউত্তরে বলেছেন-‘শেখ হাসিনার কথা আর ওবায়দুল কাদেরের কথা এক নয়, ওবায়দুল কাদেরের কথা রাস্তার কথা।’ এতে পরিস্কার প্রমানিত যে, শেখ হাসিনাই কারাগারে বেগম জিয়াকে আটকিয়ে রেখেছেন। শেখ হাসিনার নির্দেশ ছাড়া বেগম খালেদা জিয়ার জামিনও মিলবে না। দেশবাসীর প্রত্যাশা ছিল যে, ঈদুল আযহার আগেই দেশনেত্রী কারামুক্ত হবেন। কিন্তু মানুষের সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে দেশবাসী এবং বিএনপি ও অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদেরকে পবিত্র ঈদুল আযহার প্রাণঢালা শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ঈদুল আযহার পূর্বেই মুক্তি দিতে হবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ