রাজধানীতে গরু বেপারির ২৮ লাখ টাকা ছিনতাই
স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে থেকে এক গরুর বেপারির ২৮ লাখ টাকা ছিনতাই হয়েছে। রোববার সকাল ৮টায় এ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ক্ষতিগ্রস্ত বেপারির নাম মো. হানিফ শেখ। তেজগাঁওয়ের কলোনি বাজার পশুর হাটে বিক্রি করা টাকা নিয়ে ফিরছিলেন তিনি। এই ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন হানিফ। ঘটনার পর ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের একাধিক থানা একসঙ্গে অপরাধীদের ধরতে মাঠে নেমেছে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে শেরেবাংলা নগর ও মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। দুই থানার পৃথক টিম ছিনতাইকারীদের শনাক্ত করতে কাজ করছে।
শেরেবাংলা নগর থানার ওসি জানে আলম মুন্সি বলেন, ‘ঘটনাস্থল আসাদগেট বলছে ভুক্তভোগীরা। আমাদের ডিভিশনের ঘটনা হওয়ায় আমরা সবাই মিলে কাজ করছি। সিসি ক্যামেরা ফুটেজ সংগ্রহ করে অপরাধীদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।’
ভুক্তভোগী গরুর বেপারি মো. হানিফ শেখের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, তিনি ১৮টি গরু নিয়ে তেজগাঁওয়ের কলোনি বাজার পশুর হাটে এসেছেন। গত দুই/তিন দিনে তিনি ১৬টি গরু বিক্রি করেছেন। সেই টাকা নিজের কাছে না রেখে ছেলে, মেয়ে জামাই ও শেখ বাচ্চু নামে এক রাখালকে দিয়ে বাড়ি পাঠাচ্ছিলেন। তারা তিনজন তেজগাঁও থেকে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে গাবতলীর দিকে যাচ্ছিলেন। পথে আসাদগেটে অটোরিকশাচালক তাদের জানায় অটোরিকশার ইঞ্জিনে ত্রুটি দেখা দিয়েছে। সিএনজিটি সেখানে থামলে হুট করে দু’জন ব্যক্তি অটোরিকশাটিকে ঘিরে ধরে। তারা এসে অটোরিকশায় থাকা গরু ব্যবসায়ীদের ‘ছিনতাইকারী’ বলে। অটোরিকশা থেকে তাদের নামতে বলে। এসময় নিজেদের গরু ব্যবসায়ী পরিচয় দিলেও তাদের অটোরিকশা থেকে নামতে বলা হয়। তাদের তল্লাশি করা হবে বলে বিভিন্ন প্রশ্ন করা হয়। তিনজন অটোরিকশা থেকে নামার পর তাদের সড়কের পাশে নিয়ে যায় ওই দুই ব্যক্তি। তাদের সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাদের হাসপাতালের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। এই সুযোগে ব্যাগভর্তি টাকা ও তাদের মোবাইল ফোনগুলো নিয়ে চালক অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে যায়। তখন গরু ব্যবসায়ীরা চিৎকার দিলে ওই দুই ব্যক্তিও দ্রুত সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
ছিনতাইয়ের শিকার হওয়ার পর অটোরিকশায় থাকা বাচ্চু শেখ তেজগাঁও গিয়ে গরুর ব্যাপারী হানিফ শেখকে জানায়। হানিফ শেখ এরপর বিলাপ করতে করতে অচেতন হয়ে পড়েন। এসময় হাটের ইজারাদার ব্যক্তিরা তাকে সান্ত¡না দিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন। এই ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) নিয়ে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে।
এ বিষয়ে তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) শিবলী নোমান বলেন, ‘ঘটনাটি সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে। এটি শেরেবাংলা নগর থানা এলাকা। সেখানেই আইনি প্রক্রিয়া নেওয়া হচ্ছে। অটোরিকশাটি আসাদগেট দিক দিয়ে গেলেও সেটি মোড় নিয়ে সোহরাওয়ার্দীর মেডিক্যাল কলেজের ভেতরে যায়। সেখানেই ঘটেছে ঘটনা।’
দুই বাসের মাঝে চাপা পড়ে যুবক নিহত
বিমানবন্দর সড়কে দুই বাসের মাঝে চাপা পড়ে মো. সেলিম (৩৩) নামে যুবক নিহত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে বিমানবন্দর বাসস্টেশনে এ ঘটনা ঘটে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া এ খবর নিশ্চিত করেছেন।
নিহত সেলিম ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার আব্দুর রহিমের ছেলে। ময়নাতদন্তের জন্য তার লাশ বর্তমানে ঢামেক মর্গে রাখা হয়েছে।
মো. বাচ্চু মিয়া জানান, দুর্ঘটনার পর পথচারীরা সেলিমকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় এক হাসপাতালে নিয়ে যান। সংবাদ পেয়ে সেলিমের ভাই ওই হাসপাতালে যান এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভাইকে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসক রাত ৮টা ২০ মিনিটে সেলিমকে মৃত ঘোষণা করেন।
সেলিমের এক উদ্ধারকারীর বরাত দিয়ে আবু সায়েম বলেন, ‘বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে সেলিম বিমানবন্দর বাসস্টেশনে একটি বাসে ওঠার সময় পাশ দিয়ে যাওয়া আরেক বাস তাকে চাপা দেয়। এতে সেলিম দুইবাসের মাঝে চাপা পড়ে আহত হন।’ তিনি আরও বলেন, ‘সেলিম উত্তরা-৪ নম্বর সেক্টরের কর অঞ্চল-৯, ইনকাম ট্যাক্স অফিসে অফিস সহকারী হিসেবে চাকরি করতো। দক্ষিণ খান এলাকার দক্ষিণপাড়ায় তার বাসা ছিল।’
ইয়াবা-ফেন্সিডিল উদ্ধার
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একহাজার ৯শ’ ১৫ পিস ইয়াবাসহ মো. আবু সাইদ (২৮) নামের একজনকে আটক করেছে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ। রোববার বেলা ১টার দিকে বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালের বহিরাঙ্গন থেকে তাকে আটক করা হয়। বিমানবন্দর আর্মড পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপারেশন্স অ্যান্ড মিডিয়া) আলমগীর হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আটক আবু সাইদ দিনাজপুর জেলার সদর থানার হাজীপাড়া গ্রামের চশির উদ্দীনের ছেলে। তার কাছ থেকে জব্দ করা ইয়াবার বাজারমূল্য প্রায় ১০ লাখ টাকা।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, বেলা ১টার দিকে বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালের বহিরাঙ্গনে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করছিল আবু সাইদ। তার সন্দেহজনক চলাফেরা লক্ষ্য করেন বিমানবন্দর আর্মড পুলিশের সদস্যরা। এসময় কথা বললে সে পুলিশ সদস্যদের বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়। পরে তাকে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশের হেফাজতে নিয়ে তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আবু সাইদ তার কাছে ইয়াবা থাকার কথা স্বীকার করে। এপর্যায়ে তার দেহ তল্লাশি করে তার কাছ থেকে এক হাজার ৯শ’ ১৫ পিস ইয়াবা পাওয়া যায়। সে নভোএয়ারযোগে কক্সবাজার থেকে ঢাকায় আসে বলে জানিয়েছে সূত্র। আলমগীর হোসেন জানান, আটককৃতের বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এদিকে, কমলাপুর রেলওয়ে থানা এলাকা থেকে ৯ হাজার ৭শ’ পিস ইয়াবাসহ মিজানুর রহমান (২৬) নামে এক মাদক কারবারিকে আটক করেছে র্যাব। রোববার দুপুর একটার দিকে ঢাকা রেলওয়ে পার্সেল ইনওয়ার্ড অফিস থেকে পার্সেল নেওয়ার সময় তাকে আটক করা হয়।
র্যাব-৩ এর স্টাফ অফিসার (অপস) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ বি এম ফাইজুর রহমান জানান, কক্সবাজারের রামু থেকে একটি কাঠের তৈরি বক্স-খাটের ভেতর করে ইয়াবার একটি চালান কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ঢাকা রেলওয়ে পার্সেল ইনওয়ার্ড অফিসে আসে। এই সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৩ এর সদস্যরা অবস্থান নেয়। রোববার দুপুরে মিজানুর রহমান নামে একজন এই খাট ডেলিভারি নিতে এলে তাকে আটক করা হয়।
তিনি আরও জানান, আসামির সামনে ওই খাটের গোপন বক্সের ভেতর থেকে ৯ হাজার ৭শ’ পিস ইয়াবা এবং ৩টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। সে র্দীঘদিন ধরে ইয়াবা কারবারের সঙ্গে জড়িত বলেও প্রাথমিক জিজ্ঞাবাদে জানিয়েছে।
অপরদিকে , হাজারীবাগ থানা এলাকা থেকে ৩৮৪ বোতল ফেনসিডিলসহ ৩ মাদক কারবারিকে আটক করেছে র্যাব। ফেনসিডিল বহনকারী ওই ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে। শনিবার রাতে বেড়িবাঁধ রোডের কালুনগর সিটি ওভারসিজ সিএনসি রি-ফুয়েলিং স্টেশনের সামনে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। আটক মাদক কারবারিরা হলো- মুন্সিগঞ্জের মো. হেলাল (৩২), চাপাঁইনবাবগঞ্জের মো. লিটন (২৩) ও মো. কায়য়ুম ওরফে রেজা (১৮)। রোববার র্যাব-২ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) এএসপি মোহাম্মদ সাইফুল মালিক বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, আটক মাদক কারবারিরা এসব ফেনসিডিল বহন করে সদরঘাট এলাকার মাদক কারবারিদের কাছে সরবরাহ করতে যাচ্ছিলো। গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে হাজারীবাগের কালুনগর সিটি ওভারসিজ সিএনসি রি-ফুয়েলিং স্টেশনের সামনে ট্রাকটি থামানোর জন্য সিগন্যাল দেওয়া হয়। এসময় আসামিরা দ্রুত ট্রাক থেকে নেমে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে ধরে ফেলা হয়। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান এএসপি মোহাম্মদ সাইফুল মালিক।
এ ছাড়া, খিলগাঁওয়ে বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ এক দম্পতিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রোববার রাতে আটক ওই দম্পতি হলো আবুল কাশেম (৫০) ও ফাতেমা বেগম (৩৫)। এ সময় হাসান (৩০) নামে তাদের এক সহযোগীকেও গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ তাদের কাছ থেকে ৮ হাজার ২০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে। পরদিন সোমবার খিলগাঁও থানার পরিদর্শক (অপারেশন) সজীব দে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
খিলগাঁও থানা সূত্রে জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রোববার রাতে খিলগাঁও থানারে ৫৭/১ মেরাদিয়া নয়াপাড়ার বিসমিল্লাহ স্টোরের সামনে পাকা রাস্তার ওপর অভিযান চালিয়ে আবুল কাশেম ও হাসানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ সময় কাশেমের কাছ থেকে ২ হাজার ৫০০ পিস ও হাসানের কাছ থেকে ১ হাজার ৫০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যমতে রাতেই বনশ্রীতে কাশেমের বাসায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় কাশেমের স্ত্রী ফাতেমা বেগমের দেখানো ওয়্যারড্রোব থেকে আরও ৪ হাজর ২০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
খিলগাঁও থানার পরিদর্শক (অপারেশন) সজীব দে বলেন, ‘গ্রেফতারকৃতরা পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী। কক্সবাজার থেকে ইয়াবা এনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মাদকসেবীদের কাছে বিক্রি করতো তারা। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’