শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

রাজধানীর হাসপাতালের ভেতরেই ভয়ঙ্কর এডিস মশার লার্ভা

মোহাম্মদ জাফর ইকবাল : ডেঙ্গু মশার চিকিৎসা নিতে নাগরিকরা ছুটছেন রাজধানীর নামিদামী হাসপাতালগুলোতে। কোথাও তিল ধারণের টাই পর্যন্ত নেই। ডেঙ্গু চিকিৎসায় নিজেদের জাত চেনাতে অনেকেই মিডিয়ায় জানানও দিচ্ছে। কিন্তু যারা নিজেদের ডেঙ্গু প্রতিরোধে অগ্রগামী বলে দাবি করছে তাদের ঘরেই জন্ম নিচ্ছে জীবননাশক এই ডেঙ্গু মশা। শুধু জন্মই নিচ্ছেনা উল্টো চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদেরও অসুস্থ করে তুলছে। জানা গেছে, রাজধানীর উত্তরাসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় নামী দামী সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল এবং প্রভাবশালীদের স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানে ভেতরেই ভয়ঙ্কর এডিস মশার লার্ভা রয়েছে। আর ওইসব লার্ভা থেকেই প্রতিদিন উৎপন্ন হচ্ছে হাজার হাজার এডিস মশা। প্রতিদিনই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। এমনকি বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত মৃত্যুর সংখ্যাও। ফলে এডিস মশা উৎপাদনের ফ্যাক্টরী ওইসব হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তার ,নার্স ,কর্মকর্তা- কর্মচারী, রোগী এবং রোগীর অভিভাবকরাই ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে রয়েছেন। সরেজমিন খোঁজ নিয়ে হাসপাতালের ভেতরেই এডিস মশার লার্ভার ভয়ঙ্কর তথ্য পাওয়া যায়। সরকারি হাসপাতাল পুরান ঢাকায় মিটফোর্ড হাসপাতাল এডিস মশার ঝুকিতে। ইমামদের সাথে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকনের মতবিনিময় এবং বিনামূল্যে অ্যারোসেল স্প্রে বিতরণ অনুষ্ঠানে মিটফোর্ড হাসপাতালের ভেতরে এডিস মশার উৎপাতের বিষয়টি উল্লেখ করনে এক ইমাম। এমনকি ওই হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সরাই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন বলেও মেয়রকে জানানো হয়।
এদিকে গত ৮ আগস্ট উত্তরায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাজিদ আনোয়ারের নেতৃত্বে কয়েকটি হাসপাতালে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকালে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। এরমধ্যে কবি জসিমুদ্দিন রোডে পপুলার হাসপাতালের বেইজমেন্টে এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটিকে ২ লাখ টাকা, সাবেক রাষ্ট্রপতি বি চৌধুরীর মালিকানাধীন উইমেন মেডিকেল কলেজের ভিতরের ড্রেনে এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, গরিব নেওয়াজ এভিনিউর লুবনা হাসপাতালে এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় ৩০ হাজার টাকা এবং উত্তরা ৪নং সেক্টরে জাপান কাগুচি হাসপাতালে এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এইসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা এএসএম মামুন। তিনি আরো জানান, হাসপাতালের পাশাপাশি প্রভাবশালী লোকজনের বাসা বাড়ি ও প্রতিষ্ঠানের ভেতরেও এডিস মশার লার্ভা ও এডিস মশার বংশবিস্তারের উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যাওয়া যাচ্ছে। ইতোমধ্যে মহাখালী অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হেমায়েত হোসেন বারিধারার ১১টি বাড়ির মালিককে মোট ১ লাখ টাকা জরিমানা করেন।
ডিএনসিসি কারওয়ান বাজার অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মীর নাহিদ আহসান ৭ বাড়ি কনস্ট্রাকশন সাইটের ভিতরে এডিস মশার লার্ভা খুজে পান। তিনি প্রতিষ্ঠানটিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এই ধরনের আরো অনেক তথ্য ঢাকা দুই সিটিতেই রয়েছে। আর দুই সিটির একাধিক ভ্রাম্যমান আদালত প্রতিদিন এডিস মশার লার্ভা ধ্বংস এবং সংশ্লিষ্ট স্থাপনার মালিকদের জরিমানা করেই যাচ্ছেন।
এদিকে ডিএনসিসির মেয়রের নির্দেশে উত্তরায় ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জনাব আফছার উদ্দিন খান, ৪ নং সেক্টর কল্যাণ সমিতির সভাপতির মেজর আনিসুর রহমান (অবঃ) , বাংলাদেশ সরকারের অতিরিক্ত সচিব খান মোহম্মদ বেলাল , ডিএনসিসির কর কর্মকর্তা মো. লিয়াকত আলী মিয়ার নির্দেশনার আলোকে বিভিন্ন সেক্টর ও এলাকার ন্যায় ৪ নং সেক্টরে মশা নিধন জোরদার কার্যক্রম করা হয়েছে। ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে সচেতনা কার্যক্রমের উদ্বোধনে পর বিভিন্ন রোড ভিত্তিক মশা নিধনকারিদের মাঝে দায়িত্ব বন্টন করা হচ্ছে এছাড়াও ডিএনসিসির উপ প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মহসিন আলীর সার্বিক সহযোগতায় রাজস্ব আদায় এরং ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রনে মাঠে কাজ করছেন মিয়া মিরপুরে করকর্মকর্তা সানোয়া হোসেন, মিজানুর রহমান, কাওরানবাজারে মহিউদ্দিন, মহাখালীতে তনলিম উদ্দিন এবং রাজস্ব বিভাগের কর্মচারীরা।
হাসপাতালের পাশাপাশি বাড়ির ছাদ নোংরা থাকায় এবং এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাওয়ায় গুলশানে এক ব্যক্তিকে জরিমানা করা হয়েছে। ১৪ আগস্ট দুপুরে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাজিদ আনোয়ারের নেতৃত্বে গুলশানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকালে গুলশান-২ এর ৪৪ নং রোডের প্লট নং এন ডাব্লিউ বি ২৮(১১৯) এর ছাদে প্রচুর এডিস মশার লার্ভা এবং এডিস মশা বংশবিস্তারের অনুকূল পরিবেশ পাওয়া যায়। বাড়িটির ছাদের পরিবেশ ছিল অত্যন্ত নোংরা। সেখানে পানি জমে থাকা প্রচুর মাটির পাত্র, ছাদে এবং ড্রেনে জমে থাকা পানি, আগাছার জঙ্গল, পরিত্যক্ত খোলা টিন, কমোড ইত্যাদি পাওয়া যায়। এ সকল স্থানে প্রচুর এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। এ সকল অপরাধে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাজিদ আনোয়ার বাড়ির মালিককে স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯ অনুযায়ী ২ লক্ষ টাকা জরিমানা করেন।
তথ্য জানা যাবে মোবাইলে: এখন থেকে মোবাইলে জানা যাবে ডেঙ্গুর প্রজনন ক্ষেত্র ডেঙ্গুর প্রজনন ক্ষেত্র জানতে ‘স্টপ ডেঙ্গু মোবাইল অ্যাপ’ চালু করা হয়েছে। ফলে এখন থেকে ডেঙ্গুর প্রজনন ক্ষেত্র জানা যাবে মোবাইল অ্যাপে। শনিবার জাতীয় স্কাউট ভবনে পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ সমঝোতা স্বাক্ষর ও অ্যাপ উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে এই অ্যাপ চালু করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন- ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল প্রমুখ। স্টপ ডেঙ্গু নামে একটি বিশেষায়িত অ্যাপ প্রকাশ করা হয়। ই ক্যাব বাংলাদেশের সার্বিক তত্ত্বাবধানে অ্যাপটি তৈরিতে কারিগরি সহায়তা প্রদান করে ই পোস্ট ও বিডি ইয়ুথ। অ্যাপটির ব্যবহার ও কার্যকারিতার ওপর ই-ক্যাব সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মাদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, ‘স্টপ ডেঙ্গু অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে যে কেউ সারা দেশের যেকোনো স্থানে মশার প্রজনন স্থান স্বয়ংক্রিয়ভাবে শনাক্ত করতে পারবেন। এর মাধ্যমে পুরো দেশের মশার প্রজনন স্থানের ম্যাপিং তৈরি হবে। ফলে সিটি করপোরেশন এবং স্থানীয় সরকার খুব সহজেই কোন এলাকায় কতজন লোক নিয়োগ করতে হবে তা মশার জন্ম স্থানের ঘণত্ব দিয়ে নির্ধারণ করতে পারবে। তিনি আরও বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণে কি পরিমাণ ওষুধ কিনতে হবে বা ব্যবহার করতে হবে সে বিষয়টিও জানা যাবে অ্যাপের মাধ্যমে। একইসঙ্গে পরবর্তী বছরের জন্য পূর্বের থেকে সতর্কতামূলক প্রস্তুতি গ্রহণ করা যাবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ