শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর

বাংলাদেশে তিনদিনের সফর শেষ করে গত ২১ আগস্ট ঢাকা ছেড়ে চলে গেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শংকর। সফরকালে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আনুষ্ঠানিক বৈঠক ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন তিনি। যাওয়ার আগেরদিন এক সংবাদ সম্মেলনে ড. জয়শংকর জানিয়েছেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ‘ফলপ্রসূ আলোচনা’ হয়েছে। দেখে তার ভালো লেগেছে যে, দু’দেশের সম্পর্ক এমন ইতিবাচক পথে রয়েছে। 

ড. জয়শংকর আরো জানিয়েছেন, অভিন্ন ৫৪টি নদ-নদীর পানিবন্টনের নতুন উপায় বা ফর্মুলা খুঁজে বের করতে ভারত ও বাংলাদেশ সম্মত হয়েছে, যার মাধ্যমে উভয় দেশেরই লাভ হবে। তিস্তার পানিবন্টন প্রশ্নে ভারতের একটি অবস্থান ও প্রতিশ্রুতি আছে কথাটা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মন্ত্রী বলেছেন, এই অবস্থান ও প্রতিশ্রুতিতে কোনো পরিবর্তন হয়নি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশেষ করে জঙ্গী ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দমনসহ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সহযোগিতার উল্লেখ করে ড. জয়শংকর বলেছেন, এর ফলে উভয় দেশের জনগণই উপকৃত হয়েছে। তাছাড়া আকাশ, সড়ক ও নৌপথের যোগাযোগ দু’দেশের প্রবৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে। সে কারণে উভয় দেশই যোগাযোগের ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরো বাড়াতে আগ্রহী। 

এদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ভারতের সহযোগিতার প্রসঙ্গ টেনে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তার দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতার নতুন অংশিদারিত্বে পৌঁছাতে চায়। দু’দেশের এই সহযোগিতাকে প্রতিবেশীদের মধ্যে অংশিদারিত্বের ‘নতুন উদাহরণ’ হিসাবে উল্লেখ করেছেন তিনি। বলেছেন, এটা দক্ষিণ এশিয়া এবং বিশ্বের জন্য রোল মডেলের ভূমিকা পালন করবে বলে তিনি মনে করেন। বাংলাদেশের যে উন্নয়ন কর্মসূচিগুলোতে ভারতের স্বার্থও জড়িত রয়েছে সেগুলোর বাস্তবায়নে তার দেশ সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করবে বলেও অঙ্গিকার ব্যক্ত করেছেন ড. জয়শংকর।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অন্য কিছু বিষয়ে কথা বললেও মূলকথায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শংকর জানিয়ে গেছেন, তার সফরের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল আগামী অক্টোবর মাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের কর্মসূচি চূড়ান্ত করা। সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণপত্র তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। সানন্দে তার সম্মতিও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

সেদিক থেকে তো বটেই, সামগ্রিকভাবেও তিনদিনের সফরে ব্যাপক সফলতা অর্জন করে গেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। প্রসঙ্গক্রমে প্রাধান্যে এসেছে তিস্তাচুক্তিসহ অভিন্ন নদ-নদীর পানি বন্টনের বিষয়টি। কারণ, তিস্তাচুক্তির ব্যাপারে ভারতের দিক থেকে বহু বছর ধরেই বাংলাদেশের সামনে বিরাট এক মুলা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। সর্বশেষ ঘটনাপ্রবাহে পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অসম্মতি ও বিরোধিতাকে চুক্তি না হওয়ার কারণ হিসেবে সামনে এনেছে ভারত। 

ওদিকে গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশ। অনেক ধুমধাম করা হলেও ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বরে স্বাক্ষরিত ৩০ বছর মেয়াদি পানিবন্টন চুক্তিকে শুরু থেকেই অকার্যকর করে এসেছে ভারত। পরিণতিতে বাংলাদেশের বহু এলাকায় মরু প্রকৃতি প্রকট হতে শুরু করেছে। শুকিয়ে গেছে অনেক নদ-নদী ও খাল। বর্ষার ভরা মওসুমেও পদ্মার গভীরে পর্যন্ত সামান্য পানি থাকে না। সেখানে শিশু-কিশোররা বরং ফুটবল খেলে। সেই সাথে ফসলের আবাদ করে কৃষকেরা। এ ব্যাপারে বৈঠকে বাংলাদেশ পক্ষ কি বলেছেন, সেটা জানা যায়নি।

ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এবারের সফরে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের বিষয় নিয়ে আলোচনা হওয়া ছাড়াও ভারত আসামে তাদের নাগরিক নিবন্ধীকরণ (ঘজঈ) ও কাশ্মীর সমস্যা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় ব্যাপারে বাংলাদেশের সম্মতি বা সমর্থন তারা পেয়েছে বলে মনে করতে পারে। এটা তাদের বাড়তি, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ লাভ।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ