শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

রাজউক থেকে শতাধিক বহুতল ভবনের নথি গায়েবের তদন্তে নেই কোনো অগ্রগতি

তোফাজ্জল হোসেন কামাল : বহুতল শতাধিক ভবনের নকশাসহ বিভিন্ন দফতরের নথি গায়েব হয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কার্যালয় থেকে। কোথায় গেল এসব নথি , কারা এর সাথে জড়িত-তা খুঁজে বের করতে তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। সে তদন্ত কমিটির তদন্ত কাজে নেই কোনো অগ্রগতি।
অথচ ২০১৪ সাল থেকে এ বিষয়ে চিঠি চালাচালি হচ্ছে রাজউক ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মধ্যে। একটি বিষয়ে দুদকের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে নিম্নসারির এক কর্মচারির সাজার রায় হলেও বস্তুত বড় ধরনের অগ্রগতি নেই। ধরাছোঁয়ার বাইরে কুশীলবরা।
হারানো কিংবা গায়েবকৃত নথির বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে বারবার তাগিদ দেওয়া হলেও টনক নড়েনি রাজউকের। সর্বশেষ গত জুন মাসে এ বিষয়ে অগ্রগতি জানতে চেয়ে চিঠি দেয় সংস্থাটি। রাজউক চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো চিঠির সূত্রে দুদকের সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখতের সই করা সে চিঠিতে রাজউকের বিভিন্ন দপ্তরের হারানো নথির বিষয়ে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। যেখানে আরো বলা হয়, এক মাসের মধ্যে তদন্তক্রমে নথি হারানোর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের দায়-দায়িত্ব নিরূপণ করে তদন্ত প্রতিবেদন দুদকে প্রেরণ করতে হবে।
এর আগে চলতি বছরের ২৮ মার্চ ও ৩০ এপ্রিলে এ বিষয়ে রাজউককে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। যদিও দুদকের চিঠি অনেক ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার নিকট পৌছায় না বলে দাবি করেছেন রাজউক কর্তৃপক্ষ।
জানতে চাইলে এ বিষয়ে রাজউক পরিচালক (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ-১) ইঞ্জিনিয়ার তানজিলা খানম বলেন, নকশা হারানো নথির বিষয়ে আমাদের কাজ চলমান রয়েছে। আমি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারবো না। তবে আমার দপ্তরে দুদকের চিঠি আসেনি।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানোর চিঠি পাঠিয়ে জানতে চাইলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। এরপর কয়েকবার লিখিত ও মৌখিক তাগিদ দেওয়া হয়েছে। তবে রাজউকের সন্তোষজনক জবাব পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ বিষয়টি দুদক সচিব নিজে রাজউকের সাথে যোগাযোগ রাখছেন। যতদূর জানি এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই।
এর আগেও বহুতল ভবনের নকশা গায়েবের সত্যতা মিলেছে। চলতি বছরের ৩ মার্চ বহুতল ভবনের নকশা অনুমোদন সংক্রান্ত ৫৭টি নথি গায়েব করায় দুদকের দায়ের করা মামলায় রাজউকের কর্মচারী মো. শফিউল্লাহকে ১১ বছরের কারাদন্ড দেয় উচ্চ আদালত। যদিও এই মামলায় বিচারিক আদালতে নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে খালাস পেয়েছিলেন তিনি। রাজউকের সাবেক ইস্যু ক্লার্ক ও পরবর্তী সময়ে এস্টেট সেকশনের স্টেনো ক্লার্ক মো. শফিউল্লাহর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে রাজউকের বহুতল ভবনের নকশা অনুমোদন সংক্রান্ত ৫৭টি নথি অথরাইজড অফিসার-১ ও ৩ এর দপ্তরের রেকর্ড রুমে প্রেরণ না করে সেগুলো গায়েব করার অভিযোগ প্রমাণিত হয়।
অন্যদিকে হারানো সব ফাইলের ছায়া নথি খোলার বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় গত ২ এপ্রিলে রাজউকে অনুষ্ঠিত এক সভায়। বৈঠকে নেয়া সিদ্ধান্তের বিষয়ে রাজউক সূত্রে জানা যায়, গণপূর্ত মন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক রাজউকের আওতাধীন সব প্রকল্পের প্লটের হারানো নথির ছায়ানথি খোলার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উপ-পরিচালকরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন। এ বিষয়ে এস্টেট শাখার উপ-পরিচালকরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
রাজউক সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির গুলশান, বনানী, বারিধারা, উত্তরা, ঝিলমিল ও পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে কয়েক শতাধিক অবরাদ্দকৃত বাণিজ্যিক প্লট রয়েছে। এসব বাণিজ্যিক প্লট দখল করে রেখেছেন অনেক রাজনৈতিক নেতা নামধারী ভূমিদস্যুরা। রাজউকের আয়ত্বে নিয়ে এসব প্লট বিক্রি করলে হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করা সম্ভব। তবে হারানো নথি উদ্ধার ও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে কোনো অগ্রগতি মেলেনি।
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের-রাজউক কার্যালয় থেকে শতাধিক বহুতল ভবনের নকশা হারিয়ে যাওয়ার খবর প্রথম গণমাধ্যমে আসে। যেখানে ভবনের অধিকাংশই ছয়তলার অনুমোদন নিয়ে নয়তলা বা তারও বেশি উচ্চতায় নির্মাণ করা হয়েছে বলা হয়। এ জালিয়াতির তথ্য গোপন করতেই ‘অনুমোদনপ্রাপ্ত ভবন মালিকদের যোগসাজশে রাজউকের একশ্রেণীর কর্মকর্তা’ নকশা অনুমোদনের নথি গায়েব করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
দুদক রাজউকের কাছে সংশ্লিষ্ট ভবনগুলোর নথি চাইলেও ‘গায়েব হয়ে যাওয়ায়’ তা দিতে ব্যর্থ হয় গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থাটি। তারও আগে ২০১১ সালে সংসদে এক প্রশ্নের জবাবেও তৎকালীন গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান খান রাজউকের নথি গায়েবের কথা স্বীকার করেছিলেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ