শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

মামলার তদন্ত পর্যায়ে গণমাধ্যমে পুলিশের বক্তব্য প্রচারে নীতিমালা তৈরির নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার: মামলায় তদন্তের অগ্রগতি বা গ্রেফতার হওয়া আসামীদের বিষয়ে গণমাধ্যমে কতটুকু প্রচার করা যাবে, সে বিষয়ে একটি নীতিমালা তৈরি করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ প্রধানকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। গতকাল বৃহস্পতিবার বরগুনার রিফাত হত্যা মামলায় তার স্ত্রী মিন্নির জামিন বিষয়ে আদেশ দেওয়ার সময় বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই নির্দেশ দেন।

আদালত বলেন, বর্তমান আসামী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি রিমান্ডে থাকা অবস্থায় বরগুনা জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন। মিন্নি দোষ স্বীকার করেছেন বলে বরগুনার এসপি যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা শুধু অযাচিত ও অনাকাক্সিক্ষত নয়, বরং ন্যায়নীতি, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের পরিপন্থীও। পরিস্থিতি ও বাস্তবতা যাই হোক না কেন, কোনও পুলিশ সুপারের মতো দায়িত্বশীল পদে থেকে এ ধরনের বক্তব্য জনমনে নানান প্রশ্ন জন্ম দিয়েছে।

বরগুনার এসপির সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নিজের দায়িত্বশীলতা ও পেশাদারিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন উল্লেখ করে আদালত বলেন, এটা দুঃখজনক ও হতাশাজনক। উচ্চপর্যায়ের একজন পুলিশ কর্মকর্তার কাছ থেকে এ ধরনের কাজ কাম্য নয়। তিনি ভবিষ্যতে দায়িত্ব পালনে আরও সতর্কতা ও পেশাদারিত্বের পরিচয় দেবেন, আদালতের এটাই কাম্য। মামলাটির তদন্ত কাজ যেহেতু এখনও চলমান, সে কারণে এই মুহূর্তে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে আদালত বিরত থাকছেন। তবে, বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক সময়মতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

আদালত বলেন, প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ করা সঙ্গত হবে যে, ইদানীং লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, সংঘটিত ঘটনা তদন্তের সময়ে পুলিশ, র‌্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার ও অভিযুক্তদের বিষয়ে প্রেস ব্রিফিং করা হয়। গ্রেফতার হওয়া সন্দেহভাজন বা অভিযুক্তদের কোনও নিয়মনীতি ছাড়াই গণমাধ্যমের সামনে হাজির করা হয়। যা অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। যদিও এ বিষয়ে আদালতের একটি রায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, তবু অনেক পুলিশ কর্মকর্তাকে তদন্ত বিষয়ে অতি উৎসাহ নিয়ে বিভিন্ন বক্তব্য দিতে দেখা যায়।

আদালত আরও বলেন, এ কথা আমাদের সবাইকেই মনে রাখতে হবে যে, যতক্ষণ পর্যন্ত কোনও অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য-প্রমাণের মাধ্যমে অভিযোগ প্রমাণিত না হচ্ছে, ততক্ষণ বলা যাবে না সে অপরাধী বা অপরাধ করেছে। তদন্ত বা বিচার পর্যায়ে এমনভাবে বক্তব্য উপস্থাপন করা উচিত নয় যে অভিযুক্ত ব্যক্তি অপরাধী। সে কারণে মামলার তদন্ত পর্যায়ে তদন্তের অগ্রগতি বা গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের বিষয়ে গণমাধ্যমে কতটুকু বিষয় প্রচার বা প্রকাশ করা যাবে, সে বিষয়ে একটি নীতিমালা করা উচিত। এই নীতিমালা প্রণয়ন ও প্রচারের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দেওয়া হলো।

এরপর মিন্নির জামিনের আদেশের অংশ পাঠ করে আদালত বলেন, এজাহারে আসামীর নাম উল্লেখ না থাকা, গ্রেফতারের পর দীর্ঘ সময়ে স্থানীয় পুলিশ লাইন্সে আটক ও গ্রেফতারের প্রক্রিয়া, আদালতে হাজির করে রিমান্ড শুনানির সময়ে আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ না পাওয়া, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আসামীর দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট লিপিবদ্ধ করার আগেই আসামীর দোষ স্বীকার সম্পর্কিত জেলা পুলিশ সুপারের বক্তব্য, তদন্ত কর্মকর্তার মতে মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে, এমন ঘটনা জনমনে নানা প্রশ্ন জেগেছে। সুতরাং আসামীর মাধ্যমে তদন্ত প্রভাবিত (রিফাত হত্যা মামলা) করার কোনও সুযোগ না থাকার বিষয়গুলো বিবেচনা করে আমরা তাকে (মিন্নিকে) জামিন দেওয়া ন্যায়সঙ্গত মনে করছি। একইসঙ্গে জারি করা রুলটি যথাযথ ঘোষণা করলাম। মিন্নি তার বাবার জিম্মায় থাকবেন।’ তবে, মিডিয়ার সামনে কোনও কথা বলতে পারবেন না বলেও আদালত নির্দেশনা দেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ