শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

খুলনার তিন কলেজের ২৭ শিক্ষার্থী এখনো এইচএসসির ফল পাননি!

খুলনা অফিস : যশোর বোর্ডের এইচএসসি পরীক্ষার রেজাল্টে খুলনার তিনটি কলেজের ২৭ জন শিক্ষার্থীর ফলাফল প্রকাশ না করায় (রিপোর্টেড) তাদের শিক্ষাজীবন হুমকির মুখে পড়েছে। পরীক্ষার রেজাল্ট না পাওয়ায় উক্ত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হয়েছেন। গত রোববার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার আবেদনের তারিখও শেষ হয়ে গেছে। ফলে উক্ত শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা চরমভাবে হতাশ হয়ে পড়েছেন। ফলাফল প্রকাশ না হওয়া শিক্ষার্থীদের পক্ষে অভিভাবক প্রণব কুমার নন্দী প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার চাঁদখালী ও রাড়ুলি কলেজ এবং পার্শ্ববর্তী সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার শালিখা কলেজের শিক্ষার্থীরা বিগত এইচএসসি পরীক্ষায় রাড়ুলি (৩৮৪ নম্বর) কেন্দ্র থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। তারা পরীক্ষায় যথানিয়মে অংশগ্রহণ করেন এবং কোনো প্রকার অনিয়মের আশ্রয় নেননি। গত ১৭ জুলাই সকল বোর্ডের পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলেও উক্ত তিনটি কলেজের ২৭ জন শিক্ষার্থীর ফলাফল রিপোর্টেড (প্রকাশ করা হয়নি) করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কলেজের প্রিন্সিপালের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তারা কোনো সদুত্তোর দিতে পারেননি। পরে কেন্দ্র সচিবের কাছে রিপোর্টেডের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনিও সন্তোষজনক কোনো জবাব দিতে পারেননি। এরপর গত ২৩ জুলাই যশোর শিক্ষা বোর্ডের কন্ট্রোলার মাধবচন্দ্র রুদ্রর সঙ্গে তারা দেখা করেন। এ সময় তিনি তাদের জানান, ইংরেজি প্রথম পত্রের পরীক্ষায় হাতের লেখা দু’রকম থাকায় তাদের রিপোর্টেড করা হয়েছে।
চাঁদখালী কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী সাদিয়া তানজির, আরাফা খাতুন, পিংকী নন্দী, মানছুরা, ইব্রাহিম, লিটন হোসেন, নাইম হাসান, নমিতা হালদার এবং শালিখা কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী তিন্নি রানী কর্মকার, সুফিয়া খাতুন, শারমিন, জুলি খাতুন, সুমন ও রাহাত বলেন, ‘আমরা যথানিয়মে নিজেরাই খাতায় উত্তর লিখেছি ও নির্দোষ দাবি করলে কন্ট্রোলার মাধবচন্দ্র রুদ্র বিষয়টি তদন্ত করবেন বলে তাদের আশ্বস্ত করেন। পরবর্তীতে কেন্দ্র সচিব ও কলেজের শিক্ষকরা আমাদেরকে জানান, ৩ আগস্ট বোর্ড কর্তৃপক্ষ তদন্তে আসবেন। এরপর গত ১ আগস্ট আমাদেরকে চাঁদখালী কলেজে ডেকে নিয়ে সকল শিক্ষকের সামনে তদন্তের বিষয়ে সেই কলেজের অধ্যক্ষ বিল্লাল হোসেন ব্রিফিং দিয়ে বলেন যে, ‘আমরা যেন তদন্ত কর্মকর্তাকে বলি নিজেরা অন্যের খাতা দেখে লিখতে গিয়ে তাড়াহুড়োয় হাতের লেখা দুই রকম হয়ে গেছে। এটা বললে বোর্ড মার্সি (করুণা) করে তোমাদের রেজাল্ট দিয়ে দিবে। তখন আমরা মিথ্যা বলতে অস্বীকৃতি জানাই। শিক্ষকদের এই আচরণে আমরা বুঝতে পারি তারা এ কাজের সঙ্গে জড়িত।’
তারা বলেন, ‘এরপর গত ৩ আগস্ট বোর্ড কর্তৃপক্ষ তদন্ত করেন। তারপর দীর্ঘ দুই মাস পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এখনো আমরা আমাদের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল জানতে পারিনি। এ অবস্থায় আমাদের ভবিষ্যৎ শিক্ষা জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।’
চাঁদখালী কলেজের কমার্স বিভাগের এইচএসসি পরীক্ষার্থী সাদিয়া তানজির বলেন, ‘আমার রেজাল্ট প্রকাশ না হওয়ায় আমি চরমভাবে হতাশ হয়ে পড়েছি। রেজাল্ট জানার জন্য আমি এ পর্যন্ত চারবার বাড়ি থেকে যশোর বোর্ডে গিয়েছি। প্রতিবারই আমাকে বোর্ড থেকে বলা হয়েছে, আমরা দ্রুত মিটিং করে সিদ্ধান্ত জানাবো। কিন্তু এখনো আমাদের বোর্ড থেকে কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।’
তিনি বলেন, এ্যাকাউন্টিংয়ে অনার্স পড়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু রেজাল্ট না পাওয়ায় কোথাও ভর্তি পরীক্ষার জন্য আবেদন করতে পারিনি। আমি এখন খুব হতাশ হয়ে পড়েছি।’
এ ব্যাপারে যশোর শিক্ষা বোর্ডের কন্ট্রোলার মাধবচন্দ্র রুদ্র বলেন, ‘উক্ত পরীক্ষার্থীর খাতায় মারাত্মক কিছু অসংলগ্নতা রয়েছে। ফলে পরীক্ষকরা তাদের রিপোর্টেড করেছে। এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে তদন্ত হয়েছে। কেন্দ্র ও পরীক্ষা কমিটির সঙ্গে কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কি না সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আশা করছি, এ ব্যাপারে আগামী সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ