শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

বহিষ্কৃত আ’লীগ নেতা ডা. বাহারুল যা বললেন

খুলনা অফিস : ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক চুক্তিগুলো নিয়ে ফেসবুকে লেখা পোস্ট করায় খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্যপদ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হওয়া ডা. শেখ বাহারুল আলম প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘সম্পূর্ণ অগঠনতান্ত্রিকভাবে আমার বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমার ফেসবুক পোস্টে সরকার বা দলীয় প্রধানের নাম আমি উল্লেখ করিনি। আমি কেবল জনদাবির কথাগুলো বলার চেষ্টা করছি।’
ডা. শেখ বাহারুল আলম বলেন, ‘শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনতে হলে অবশ্যই অভিযুক্ত সদস্য বা নেতাকে নোটিশ দিতে হয়। কী বক্তব্যে গঠনতন্ত্রের কোন ধারা লঙ্ঘন করা হয়েছে, তা তাকে জানাতে হয়। তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হয়। প্রয়োজন হলে তার বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করতে হয়। এর কোনোটাই জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি করেননি। নির্ধারিত কোনো সভা ছিল না। ওইদিন যে সভায় সিদ্ধান্ত হয়, সে সভা পূর্বনির্ধারিত কোনো সভাও ছিল না। সভায় আমার বিষয়টি নিয়ে কোনো এজেন্ডাও ছিল না। অন্য একটি বিষয়ে সভা চলছিল। সেখানে থেকে নেতাকর্মীদের ডেকে এনে অগঠনতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পুরোটাই ওনার (সভাপতির) একতরফা কাজ। এক ধরনের স্বৈরাচারী প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়েই তিনি এ কাজ করেছেন। অভিযোগ আনতে হলে ওনার (সভাপতি) বিরুদ্ধেই অভিযোগ আনতে হয়। কারণ, উনি (সভাপতি) দলের গঠনতন্ত্র, নিয়মনীতি কিছুই মানেন না।’
ডা. বাহারুল আলম বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের একজন সদস্য তার দেশের স্বার্থ, তার দেশের বিষয় নিয়ে পররাষ্ট্র বা দেশের ভূমিকা নিয়ে কিছু কথা বলতেই পারেন। সে বিষয়ে ভিন্নমতও থাকতে পারে। ভারতের বিষয় নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন কথা বলার চেষ্টা করেছি। আমাদেরও কিছু স্বার্থ আছে। আমাদের জনগণের কিছু দাবি-দাওয়াও আছে, যা উপেক্ষিত হওয়া ঠিক না। এ বিষয় নিয়ে আমার ফেসবুক পোস্টে তিনি কোথায় আওয়ামী লীগের শৃঙ্খলাভঙ্গ পেলেন? আমার কোনো মতামতও তিনি নেননি। আমি কোনো চিঠিও পাইনি। তবে শুনেছি। বিষয়টি সত্য নয়। ফলে মোকাবিলা করার কিছু নেই। চিঠিও পাইনি এখনও। চিঠি পেলে প্রতিটি লাইন ধরে ধরে জবাব দেওয়া হবে।’
এদিকে আওয়ামী লীগ থেকে সাময়িক বহিষ্কার প্রসঙ্গে ডা. শেখ বাহারুল আলমের দেয়া এক বিবৃতিতে বলেন,  গত ১০ অক্টোবর স্থানীয় সংবাদপত্রে ‘জেলা আওয়ামী লীগের জরুরি সভায় ডা. শেখ বাহারুল আলম দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার’ শিরোনামে সংবাদ আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তার ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে আমার বিরুদ্ধে এই প্রতিহিংসামূলক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। উল্লেখিত ফেসবুক স্ট্যাটাস্ এ আমি আমার প্রাণপ্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বা খুলনা জেলা শাখার বিরুদ্ধে কোন কথা বলিনি। প্রধানমন্ত্রী ও দেশের বিরুদ্ধে কোন কথা বলার প্রশ্নই ওঠে না। বরং প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বৈষম্যমূলক আচারনের কথাই বলা হয়েছে। দেশের পক্ষে কথা বলা কখনই দলের বিরুদ্ধে কথা বলা এক নয়।
তিনি আরও বলেন, আমাকে বহিষ্কার করার পূর্বে উল্লেখিত বিষয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে কোন পত্র মারফত জানানো হয়নি। আমাকে মতামত প্রকাশের সুযোগ দেওয়া হয়নি, এমনকি এ বিষয়ে দলীয় কোন তদন্তও হয়নি। যে সভায় বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা পূর্ব নির্ধারিত ছিল না এবং কোন এজেন্ডাও ছিল না, থাকলে আমি সভায় উপস্থিত থেকে অভিযুক্ত বিষয়ে আমার বক্তব্য প্রদানের সুযোগ পেতাম।
ডা. বাহার আরও বলেন, সভাপতি উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে আমাকে আক্রমনের মত হিং¯্র সিদ্ধান্তের আশ্রয় নিয়েছে, যা অনভিপ্রেত। আসন্ন জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে সামনে রেখে সভাপতি তার একছত্র আধিপত্য নিশ্চিত করার মানসে বাংলাদেশ তথা দেশের সাধারণ মানুষের মঙ্গল কামনায় আমার ভাবনাকে বিকৃতভাবে সভায় উত্থাপন করা হয়েছে। আমার রাজনৈতিক ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে লিপ্ত হয়েছেন।
ডা. বাহার দলীয় গঠনতন্ত্র পরিপন্থি অসাংগঠনিক ও স্বেচ্ছাচারী এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত আমার স্ট্যাটাসটি পড়ে বস্তুনিষ্ঠভাবে এর অর্থ বুঝে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে উল্লেখিত অভিযোগ থেকে অব্যাহতি প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।
তিনি আরও বলেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, ৭১’ এর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, ১৯৭১ গণহত্যা আর্কাইভ  ও জাদুঘর, বঙ্গবন্ধু পরিষদ পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী থেকে শুরু করে দলীয় কর্মী, পেশাজীবী বুদ্ধিজীবী, শিক্ষার্থীসহ হাজার হাজার মানুষের মধ্যে  বঙ্গবন্ধু’র রাজনৈতিক দর্শন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সঞ্চলিত করতে পেরেছি।
ডা. বাহার বলেন, দলের জেলা সভাপতি কর্তৃক গৃহিত এই ধরনের অসাংগঠনিক ও অরাজনৈতিক  সিদ্ধান্ত  শুধুমাত্র আমার বিরুদ্ধেই নয়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ বলে প্রতীয়মান হয়।
অপরদিকে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান জামাল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতা ডা. বাহারুল আলম তার ফেসবুক পোস্টে যা লিখেছেন, সেখানে সরকার এবং দলের প্রধানবিরোধী বক্তব্য আসছে। আমাদের জানা মতে, দলীয় প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনা যা করেছেন তার সবই দেশের স্বার্থে, বাংলাদেশের স্বার্থেই করেছেন। এখানে দেশের স্বার্থ উপেক্ষিত হওয়ার বিষয়ে ডা. বাহারুল আলম যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা সঠিক নয়। জাতির জনক বাংলাদেশের জন্য আন্দোলন করে দেশকে স্বাধীন করেছেন। তার বাংলাদেশের কখনও স্বার্থসংশ্লিষ্টতা থাকবে না। এমন কোনো চুক্তি জননেত্রী শেখ শেখ হাসিনা করতে পারেন না। যার অনেক নজির আছে। বিগত দিনে দেশের কোনো সরকার বা দলীয় প্রধানের এ ধরনের নজির নেই। একমাত্র প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাই দেশের প্রথম, যিনি দেশের স্বার্থ একচুলও ছাড় দেন না। তার বিষয় নিয়ে ডা. বাহারুল আলম যে বক্তব্য দিয়েছেন তা নিন্দনীয় এবং দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। এ কারণেই দলীয় জরুরি সভা করে আমরা তাকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আজকের মধ্যে তিনি চিঠিও পেয়ে যাবেন। সদুত্তর না পেলে আমরা তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠাবো।’

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ