শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

খোরস্রোতা চিত্রায় নেই পানি

এফ,এ আলমগীর,চুয়াডাঙ্গা : নদীমাতৃক বাংলাদেশ। দেশে শতাধিক বড় নদী জালের মত ছড়িয়ে রয়েছে দেশ জুড়ে। নদীগুলোর দুপাশেই গড়ে উঠেছে অজস্র নগর ও বন্দর।  দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে অবস্থিত চিত্রা নদীও তেমনি একটি নদী যা বছরের পর বছর ধরে বয়ে চলেছে তার অববাহিকায় গড়ে ওঠা নানান সভ্যতার স্মৃতি নিয়ে।
সাম্প্রতিক সময়ে পত্র-পত্রিকা,সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কিংবা ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার দিকে দৃষ্টি রাখলে দেখা যাবে দেশের নি¤œঅঞ্চল নদীর পানিতে ভেসে যাওয়ার খবর। তবে এর একেবারে ভিন্ন দৃশ্য চুয়াডাঙ্গা জেলায়। দর্শনা-চুয়াডাঙ্গার নি¤œ অঞ্চল থেকে উৎপন্ন হওয়ায় এক সময়ের খোরস্রোতা চিত্রা নদীতে ভরা মৌসুমেও পানি নেই। প্রভাব খাটিয়ে ইচ্ছামত নদীর জায়গা দখল করে পুকুর খনন, বাঁধ নির্মান করে চাষাবাদ করার কারণে নবত্য হারিয়ে অস্তিত্ব হারিয়েছে খুলনা বিভাগের অন্যতম নদী চিত্রা। দীর্ঘ সময় ধরে চিত্রা দখল হলেও দখল মুক্ত করণ ও নদীর নাবত্য ফিরিয়ে আনার জন্য খনন কাজ কিছুই হয়নি। এই নদী রক্ষায় বিন্দুমাত্র মাথাব্যাথা নেই সংশ্লিষ্টদের।
জানা গেছে, ঐতিহাসিকভাবে পরিচিত চিত্রা নদীটির উৎপত্তি ও বিস্তারে রয়েছে বৈচিত্রময়তা। কোন কোন গবেষণা সংস্থা ও গবেষকদের মতে চিত্রা নদী পূর্বে ইছামতী নদীর একটি শাখা নদী ছিল ।
আবার কোন কোন তথ্যমতে পাওয়া যায় চিত্রা চুয়াডাঙ্গা জেলার মাথাভাঙ্গা নদীর একটি শাখা যা পূর্বে মহেশ্বর নদী নামে পরিচিত ছিল এবং নদীটি দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে নড়াইল জেলার মাইজপাড়া-মাগুরার মধ্য দিয়ে নড়াইল জেলায় প্রবেশ করে। ১৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদীটি
চুয়াডাঙ্গা ও দর্শনার নিম্নস্থল থেকে উৎপন্ন হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে কালীগঞ্জ, শালিখা ও কালিয়া উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গাজীরহাটে নবগঙ্গা নদীর সাথে মিলেছে এবং এই মিলিত স্রোত খুলনার দৌলতপুরের কাছে ভোরব নদীতে গিয়ে পড়েছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনার নিন্মস্থল থেকে উৎপত্তি হলেও এর কিছু দুরে কুন্দিপুর ও উক্ত গ্রামের সন্নিকটে নদীটি বর্তমানে বিলিন হয়ে গেছে। এখানে নদীর কোন অস্তিত্ব নেই। ঐতিহাসিকদের মতে এই নদীর তীরে গড়ে ওঠে চুয়াডাঙ্গা সদরের কালুপোল গন্ধব রায়ের রাজ্য। এই নদীর তীরে গড়ে ওঠা জনবসতির মানুষ নদী কেন্দ্রীক বিভিন্ন পেশায় আতœনিয়োগ করে জীবিকা নির্বাহ করতো। খোরস্রোতা চিত্রা নদী বর্তমানে স্বচোখে দেখলে বোঝার উপায় নেই এটি একটি নদী না খাল। নদী দখল করে অধিকাংশ স্থানে খনন করা হয়েছে পুকুর। কোথাও উচু বাধ দিয়ে নদীর প্রবাহ বন্ধ করে করা হচ্ছে ধান চাষ। নদীর পাড়ে বারো মাসই করা হয় বিভিন্ন সবজি চাষ।
চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের কুন্দিপুর, দোস্ত, উকতো, কুকিয়াচাঁদপুর, শ্রীকোল, বোয়ালিয়া, নেহালপুর, জালশুকা, ফুলবাড়ী,বড়শলূয়া গ্রামের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নদীর জমি দখল করে পুকুর খনন ও বাধ দিয়ে নদীর গতি পথ বন্ধ করা হয়েছে। বর্ষা কিংবা শীত কোন মৌসুমেই এই নদীতে স্রোত থাকে না। বর্তমানে নদী না থাকায় নদীর তীরে গড়ে ওঠা জেলে পরিবারদের অনেকেই পূর্বপুরুষের আদি পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় জড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে।
দীর্ঘ বছর ধরে নদী দখল করা হলেও দখলদারদের হাত থেকে নদী রক্ষার জন্য কোন কার্যক্রম গ্রহন করা হয়নি। যে যার ইচ্ছামত নদীর জমি দখল করে নদীকে পুকুরে পরিনত করে রেখেছে। এখনই যদি চিত্রা নদী দখলদারদের হাত থেকে রক্ষা করা না যায়, তবে কয়েক বছরের মধ্যেই পুরো নদী বিলীন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। চিত্রা নদী রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের আশু দৃষ্টি কামনা করেছেন সচেতন মহল।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ