শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

ভোলার হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে কাল দেশব্যাপী বিএনপির বিক্ষোভ ঘোষণা

গতকাল সোমবার নয়াপল্টন বিএনপি কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন -সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার: ভোলার হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আগামীকাল বুধবার ঢাকা মহানগরীতে থানায় থানায় এবং সারাদেশে জেলা ও মহানগরীতে প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। গতকাল সোমবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে ভোলার ঘটনায় পুলিশী ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, আমি ভোলার সাধারণ মানুষের ওপর পুলিশের নির্বিচারে গুলিবর্ষণে হত্যাকান্ডের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। এই লক্ষ্যে আমরা কর্মসূচি ঘোষণা করছি। ভোলার হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে বিএনপির উদ্যোগে আগামী ২৩ অক্টোবর বুধবার ঢাকা মহানগরীর থানায় থানায় এবং সারাদেশে জেলা ও মহানগরীতে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হবে।
প্রতিবাদ কর্মসূচির ধরন কেমন হবে জানতে চাইলে খন্দকার মোশাররফ বলেন, এটা পরিবেশ পরিস্থিতির ওপর ঢাকা মহানগরের থানা ও জেলা ও মহানগরগুলো নেতাবৃন্দরা ঠিক করবেন। এটা প্রতিবাদ সমাবেশ হতে পারে, প্রতিবাদ মিছিল হতে পারে যেভাবে করে।
ভোলার বোরহানউদ্দিনে এক হিন্দু তরুণের ফেইসবুক আইডি ‘হ্যাক করে মহানবী হযরত মুহাম্মদ(সা.) এর বিরুদ্ধে অবমাননাকর’ বক্তব্য ছড়ানোর পর মুসলিম তাওহিদী জনতার ব্যানারে সমাবেশ থেকে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে এক মাদরাসার ছাত্রসহ অন্তত: ৪ জন নিহত ও ১০ পুলিশসহ দেড় শতাধিক আহত হয়েছে।
নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আতাউর রহমান ঢালী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, শ্যামা ওবায়েদ, নুরী আরা সাফা, মীর সরফত আলী সপু প্রমূখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ভোলার ঘটনা ‘পূর্বপরিকল্পিত’ অভিহিত করে এর সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে  খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এই দেশে অনাধিকাল হতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনুপম নির্দশন হয়ে আছে। এখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের শান্তিপূর্ণ বসবাস। কোনো ধর্ম নিয়ে অনাকাক্সিক্ষত মন্তব্য করা এই দেশের আবহমানকালের ঐতিহ্যে নেই। আমরা মনে করি, ভোলার ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত। যে কারণে ভোলাকে রক্তে রঞ্জিত করা হয়েছে তার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদেরকে দৃষ্টান্তমূলক সাজা দিতে হবে।
ভোলার ঘটনাকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে অভিহিত করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, আমরা সরকারের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, জনগণকে যারা অবজ্ঞা করে তাদের পরিণতি শুভ হয় না। গণমানুষের জানমাল নিয়ে আর ছিনিমিনি খেলবেন না। যথেষ্ট হয়েছে। ভোলার গণহত্যার বিচার করতে হবে। ভোলা জনগণের দাবি অবিলম্বে মেনে নিতে হবে।
পুলিশি ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ভোলায় পুলিশের এমন মারমুখী আচরণ ও নিষ্ঠুরতা ক্ষমার অযোগ্য। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জবাবদিহিতা করতে হয় না বলেই সামান্য কিছুতেই নির্বিচারে গুলি করে মানুষ হত্যা যেন এখন নিত্যদিনের ঘটনা। এই ভোটারবিহীন সরকারের দুঃশাসনে মানুষের জীবনের মূল্য এখন পশু-পাখির মূল্যের চেয়ে কমে গেছে। বিদেশে অনেক বড় বড় বিক্ষোভে পুলিশকে একটি বুলেট খরচ না করেও ধৈর্য্য সহকারে মোকাবিলা করতে দেখেছি আমরা। আর এদেশে কোনো ঘটনা ঘটলেই অসহিষ্ণু আচরণ করে পুলিশ বাহিনী। ক্ষমতা হারানোর শংকায় প্রতিনিয়ত অস্থির সরকার এবং তাদের রক্ষাকারী বাহিনী। ভোলায় বিক্ষোভটি করতে দিলে কী সরকারের পতন হয়ে যেতো?
ভোলার ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, তারা (বিক্ষোভকারীরা) একটি অন্যায়ের প্রতিবাদ করার জন্য জড়ো হয়েছিলো। এটি তো কোনো অপরাধ নয়। তারা কোনো ভাংচুর করেনি, কারো ক্ষতি করেনি। প্রতিবাদ করা কী অন্যায়? তারা কী কোনো দাঙ্গায় লিপ্ত হয়েছিল? যেকোনো ধর্ম সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করে মানুষের বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠা নতুন কিছু নয়। এটাই স্বাভাবিক। আমরা আশ্চর্য্যরে সাথে লক্ষ্য করছি, স্থানীয় প্রশাসন সুকৌশলে ভোলার মানুষের প্রতিবাদটিকে সাম্প্রদায়িক রূপ দেয়ার ঘৃণ্য চক্রান্ত চালাচ্ছে। আপনারা ভোলার হত্যাকান্ডের পর সরকার ও প্রশাসনের বক্তব্য এবং মন্তব্য শুনলে অনুধাবন করতে পারবেন তারা দুঃখ প্রকাশ না করে হত্যাকান্ডের পক্ষে সাফাই গাইছে। আর প্রধানমন্ত্রী তার স্বভাবসুলভ ভাষায় প্রতিবাদকারীদের প্রতি হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর মধ্যরাতের নির্বাচনের এই সরকার। তাদেরকে জনগণ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেনি। ফলে জনগণকে সম্মান করা, জনগণের প্রতিবাদের ভাষার প্রতি সম্মান দেখানো, গুরুত্ব দেয়া এইসব গণতান্ত্রিক রীতি ও আচরণগুলো এই সরকার পরোয়া করে না। তারা (সরকার) মনে করে,  আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে দেশের জনগণকে শায়েস্তা করে ক্ষমতায় টিকে থাকা যায়। তাই দেখা যায়, বর্তমান সরকারের কাছে সবচেয়ে বড় শত্রু হলো বিরোধী দল ও বিরোধী মত।
মোশাররফ বলেন, এই সরকারের কাছে সবচেয়ে উপেক্ষিত এবং অসম্মানিত দেশের জনগণ, এই সরকারের সবচেয়ে বড় ভয় দেশের জনগণ। জনগণ একত্রিত হলেই সর্বদা ক্ষমতা হারানোর ভয়ে কাতর এই সরকার মনে করে তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এ কারণেই পুলিশ ভোলায় ঈদগাহ মাঠে জড়ো হওয়া মানুষের প্রতিবাদের ভাষা না শুনে উন্মত্ত হয়ে গুলী করেছে। বর্তমান গণবিরোধী সরকার পুলিশকে একটা কাজই শিখিয়েছে সেটি হলো প্রতিবাদী জনগণের প্রতি গুলী করা ও মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, গত এক দশকে পুলিশ প্রমাণ পেয়েছে বিরোধী দল ও মতের মানুষকে হত্যা করলে কোনো বিচার হয় না বরং পদোন্নতি হয়, তাদের পুরস্কৃত করা হয়। এ কারণেই ভোলায় জনগণের ভাষা বোঝার চেষ্টা করেনি বর্তমান সরকার। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, কী হতো প্রতিবাদী মানুষের কথা শুনলে? সরকারের পতন হয়ে যেত? কিসের এতো ভয়? কাদের প্রতি এতো ভয়? ঘটনার শুরু শুক্রবার থেকে। ঘটনার পর দেয়া পুলিশের ব্যাখ্যায় মনে হয়, তারা পুরো বিষয়টি আগে থেকেই জানতো। তাহলে এতো সময় পেয়েও পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে পারলো না কেন? এর কারণ, সরকার ও পুলিশের কাছে জনমতের কোনো মূল্য নেই। তাদের বিশ্বাস জন্মেছে, মানুষকে মেরে ফেললে কোনো বিচার হবে না।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ