বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

খুলনায় ত্রুটিপূর্ণ সিলিন্ডারের মাধ্যমে গ্যাস ভরে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে বেলুন

খুলনা অফিস : খুলনা মহানগরীর অলি-গলিতে অবৈধভাবে বেলুনে হাইড্রোজেন গ্যাস ভর্তি করে চলছে বিকিকিনি। নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। বিশেষ করে আবাসিক এলাকায় প্রতিনিয়ত এগুলো বিক্রি হতে দেখা যায়। পাশপাশি যে কোন ধরনের উৎসব ও মেলায় ঢাক-ঢোল পিটিয়ে আয়োজনকারীরা মেয়াদউত্তীর্ণ বা ত্রুটিপূর্ণ সিলিন্ডারের মাধ্যমে বেলুনে গ্যাস ফোলানোর আয়োজন করে। যার ফলে প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা। খুলনা আয়কর মেলা ও নিরালার প্রত্যাশা আবাসিক এলাকায় এ রকম বেলুনে গ্যাস ভর্তি করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় বেলুন বিক্রেতা নিহতসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছিল। খুলনা জেলা প্রশাসক সম্প্রতি গ্যাস বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি অনুমোদনহীনভাবে এলপিজি ও খোলা তেল বিক্রির বিষয়ে সোমবার খুলনা বিস্ফোরক পরিদর্শকের সাথে বৈঠক করবেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, অনুমোদন ছাড়াই যত্রতত্র এলপিজি বিক্রি করার কারণেও ঘটছে দুর্ঘটনা। গত দুই বছরে খুলনার বিভিন্ন এলাকায় একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর খুলনা আয়কর মেলার সাজসজ্জার কাজ করার সময় আয়কর ভবন চত্বরে বেলুন ফোলানোর সময় ইসলাম নামে একজন আহত হয়। ২০১৮ সালের ২৫ মার্চ নিরালার প্রত্যাশা আবাসিক এলাকায় বেলুন ফোলানোর সময় বিক্রেতা বাহাদুর নিহত হয়। আহত হয় আবুল কালাম ও নুরুল ইসলাম নামে দু’জন। ২০১৮ সালের ১৩ এপ্রিল নগরীর আহসান আহমেদ রোডের রোস্টার কিং নামের ফাস্ট ফুডের দোকানে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ৮ জন আহত হয়। ২০১৮ সালের ২ ডিসেম্বর খালিশপুর প্লাটিনাম জুট মিলের ২নং গেটে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে আনোয়ারা বেগম, রিফাত ও জিহাদ নামে ৩ জন আহত হয়।
খুলনা বিস্ফোরক অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, অবৈধভাবে বেলুনে হাইড্রোজেন গ্যাস ভর্তিকরণ, বিনা লাইসেন্সে এলপিজি মজুদ, বিক্রয় ও সরবরাহ বন্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে ডিআইজি, কেএমপি কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং সকল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। খুলনায় হাইড্রোজেন গ্যাস ভরার অনুমতি রয়েছে লবণচরা এলাকার লিন্ডে (সাবেক বিওসি) প্রতিষ্ঠানের। কিন্তু বাস্তবে যারা বেলুনে গ্যাস ভর্তি করে তাদের সিলিন্ডারগুলো স্থানীয় বিভিন্ন ওয়ার্কশপে তৈরী এবং গ্যাস বেলুন বিক্রেতারা নিজেরা ভরে। যার ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে।
সূত্রটি আরও জানায়, খুলনায় পেট্রোল, ডিজেল এবং কেরোসিনসহ বিক্রির অনুমতি রয়েছে ৩৮টি প্রতিষ্ঠানের। ডিজেল ও কেরোসিন খোলা ড্রামে বিক্রির অনুমতি রয়েছে ১৫৯টি এবং এলপিজি, এ্যামুনিয়া ও অক্সিজেন বিক্রির অনুমতি রয়েছে ৬২৫টি প্রতিষ্ঠানের।
খুলনার বিস্ফোরক পরিদর্শক ফরিদ উদ্দিন আহমদ জানান, ‘জনবল কম থাকার কারণে আমাদের অনেক কাজই করা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে অবৈধভাবে বেলুনে গ্যাস বিক্রি বন্ধের বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনও আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে। এ বিষয়ে সকলকে অবহিত করা হয়েছে। তাছাড়া আমাদের কাছে কোন অভিযোগ আসলে আমরা সেটি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করি’। তিনি বলেন, যে সকল সিলিন্ডার থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে তার মূল কারণ হচ্ছে রি-টেস্ট না করা এবং হোমমেড বা স্থানীয় ওয়ার্কশপ থেকে সিলিন্ডার তৈরি করা।
খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে ম্যাজিস্ট্রেটদের অবৈধ বেলুন বিক্রি প্রতিরোধের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সোমবার বিস্ফোরক পরিদর্শকের সাথে বৈঠক করে অনুমোদনবিহীন এলপিজি গ্যাস, খোলা তেল বিক্রিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ