শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার আব্বুকে ফিরিয়ে দিন

স্টাফ রিপোর্টার : মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ‘আমার আব্বুকে ফিরিয়ে দিন। আমরা আর পারছি না। আমার লেখাপড়া প্রায় বন্ধ হতে চলেছে। আমার ৪ বছরের ছোট ভাই ইনাম শুধু আব্বু আব্বু করে ডাকে। মানসিকভাবে আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছি। আমার মা আগের মতো কথা বলে না। ঠিকমত রান্নাও করে না। আমাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। আপনি (প্রধানমন্ত্রী) উদ্যোগ গ্রহণ করলেই বাবাকে ফেরত পেতে পারি। এভাবেই কাঁদছিলেন আর গণমাধ্যমের সামনে বক্তব্য রাখছিলেন ঢাকা এ্যাডভেন্টিস্ট প্রিসেমিনারী এন্ড স্কুল (ড্যাপস)-এ পড়ুয়া ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী ইনশা। গত ১৯ জুন ২০১৯ মিরপুরের কাঠ ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন বাতেন (৬০) গুম হন। তার ৭ম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে ইনশা। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পরিবারের পক্ষ থেকে আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশে করে বাবাকে ফিরে পেতে এভাবেই আকুতি জানায় শিশুটি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইনশার মা নাসরীন জাহান স্মৃতি, গুম হওয়া ইসমাইল হোসেন বাতেনের স্ত্রী, গুম হওয়া সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন আফরোজা ইসলাম আঁখি, গুম হওয়া ড্রাইভার কাউসারের স্ত্রী ও শিশুকন্যা লামিয়া মিম ও পরিবারের পক্ষ থেকে জাহাঙ্গীর আলমসহ অন্যরা। মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতির চেয়ারম্যান মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা।
এ সময় ইনশার মা নাসরীন জাহান স্মৃতি বলেন, আর কার কাছে বিচার চাইবো। কি অপরাধ করেছে আমার স্বামী। সে কখনো রাজনীতি করেনি। একজন সাধারণ কাঠ ব্যবসায়ী হিসেবে মিরপুরে ছোট পরিবার নিয়ে বেশ সুখে শান্তিতেই চলে যাচ্ছিল। হঠাৎ এক কালবৈশাখী ঝড়ে সবকিছু তছনছ হয়ে গেল। এখন চোখেমুখে কিছুই দেখছি না। শিশু দু’টি সন্তান নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছি। যে যা বলছে সেখানেই ছুটছি। যদি স্বামীর সন্ধান পাই। কিন্তু কোথাও পাইনি। তাই আজ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতির চেয়ারম্যান মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা। তিনি বলেন, শিশু ইনশা-ইনামের মতো অনেক শিশু তাদের পিতাকে হারিয়ে এখন মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। তাদের অনেকের লেখাপড়াও বন্ধ হয়ে গেছে। ক’দিন আগে কুষ্টিয়ার আবরারের বাসায় তার মা-বাবাকে দেখতে গিয়ে পাশেই কুষ্টিয়ার গুম হওয়া সাজ্জাদ হোসেন সবুজের বাসায় গিয়েছিলাম। তার একমাত্র মেয়ে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। অথচ তার ৭ম শ্রেণিতে পড়ার কথা ছিল। ৫ বছর আগে গুম হয়ে যাওয়ায় তার পড়ালেখার ক্ষতির পাশাপাশি মানসিক রুগিতে পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছা করলেই বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করে যারা গুম হয়েছেন তাদেরকে খুঁজে বের করে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে পারেন। আমি এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
গণমাধ্যমে লিখিত বক্তব্যে গুম হওয়া ইসমাইল হোসেন বাতেনের স্ত্রী বলেন, আমার স্বামী ইসমাইল হোসেন বাতেন বয়স আনুমানিক ৬০, পিতা- মৃত মো. ইলিয়াস মিয়া, ১৯ জুন ২০১৯ সকাল ৯টায় বাসা থেকে বের হয়ে তার মিরপুরস্থ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যায়। দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে তিনি তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে দুপুরের খাবারের কথা বলেন। কিন্তু এরপর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা বাসায় ফিরে আসেননি তিনি। তারপর দিনরাত বিভিন্ন জায়গায় খুঁজে না পাওয়ায় এবং তার ব্যবহৃত মোবাইল বন্ধ থাকায় ২০ জুন ২০১৯ তারিখে শাহআলী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করি। যার নং- ৮৩০। উক্ত জিডি করার পর থেকে আজ পর্যন্ত আমি ও আমাদের আত্মীয়স্বজন মিলে বহু খোঁজাখুঁজি করেছি, কোথাও পাইনি। ইতোপূর্বে জাতীয় প্রেস ক্লাবে মানববন্ধনসহ সাংবাদিক সম্মেলন করেছি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করেছি।
নাসরিন জাহান স্মৃতি স্বামীকে ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ