শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

শাহজাদপুরে যমুনা তীরের শিশুরা শিক্ষাবঞ্চিত বছরের পর বছর ধরে

শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) : যমুনা বাঁধের গালা মারজান পয়েন্টে স্কুল টাইমে কেরাম খেলছে শিশুরা

এম,এ, জাফর লিটন শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) থেকে : “সবার জন্য শিক্ষা চলো স্কুলে যাই” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে প্রাথমিক শিক্ষা সবার জন্য বাধ্যতামূলক হলেও সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার যমুনা নদীতীরবর্তী সিংহভাগ শিশু শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। সুযোগের অভাব, দরিদ্রতা, অসচেতনতার ফলে এসব শিশুদের সময়কাটে খেলাধুলা, নদীতে মাছ ধরে। সরকারি ও বেসরকারি কোনো বিদ্যালয় গড়ে না ওঠায় যমুনা বাঁধের আশে পাশের কয়েক গ্রামের তিন হাজারের অধিক শিশু শিক্ষালাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে সরকারের বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম এই এলাকায় যেন মুখ থুবড়ে পড়েছে। এ কারণে মেয়ে শিশুরা শিকার হচ্ছে বাল্যবিয়ের মতো সামাজিক ব্যাধির আর ছেলে শিশুদের ভবিষ্যৎ থেকে যাচ্ছে অন্ধকারে।

সরেজমিনে ঘুরে শাহজাদপুর উপজেলার যমুনা অববাহিকা জুড়ে ১০ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রিত বাঁধের পাশে বসবাসকারি শত শত শিশু স্কুলে না গিয়ে খেলাধুলা কিম্বা শ্রম বিক্রি করে সময় অতিবাহিত করছে। শাহজাদপুরের কৈজুরী, গালা, সোনাতুনী, জালালপুর ইউনিয়নের যমুনা নদী তীরবর্তী জগতলা, ভাটপাড়া, চরগুধিবাড়ী, ভেকা, পাঁচিল, গালা, বেনুটিয়া বাঁধ, ফকিরপাড়া গ্রামের অধিকাংশ শিশু শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। যে বয়সে এসব শিশুদের হাতে খাতা, কলম, বই শোভা পাওয়ার কথা ছিল সেই সময় শিশুদের সিংহভাগ এখনও স্কুলে যায়না। এসব বিষয় নিয়ে শিশুদের অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দরিদ্রতা ও অসেচতনতা। যমুনা নদীর ভাঙনে ভিটেমাটি হারানো পরিবারগুলো মাথা গোঁজার ঠাঁই নিয়ে তীরের বাঁধে বসবাস করছে। দিনমজুর এসব ব্যক্তিদের বেশিরভাগ জীবনজীবিকা চালায় দুঃখ কষ্টের ভেতর দিয়ে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দূরে হওয়ায় শিশুরা স্কুলে যায় না। আবার কেউ আশেপাশের বাজারে চায়ের স্টলে সিঁডি, ভিসিডি দেখে, কেউ কেরাম খেলে কাটিয়ে দেয় দিন। এখানকার কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সরকারি কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। এমনকি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার উদ্যোগেও এখানে গড়ে ওঠেনি কোনো প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ফলে বাঁধের পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোর তিন হাজারেরও অধিক শিশু প্রাথমিক শিক্ষালাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এদিকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় প্রাক-প্রাথমিক ও গণশিক্ষা কেন্দ্রের অভাবে কোনো ধর্মীয় শিক্ষাও লাভ করতে পারছে না এখানকার শিশুরা। বাঁধের ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে প্রায় অর্ধশত মসজিদ আছে, কিন্তু নেই ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিচালিত মসজিদভিত্তিক কোনো প্রাক-প্রাথমিক ও গণশিক্ষা কেন্দ্র। ৫ বছর ও তার চেয়ে বেশি বয়সী এ এলাকার সিংহভাগ শিশু এখনও বিদ্যালয়বিমুখ। মারজান এলাকার শিশু শিক্ষার্থী আনোয়ারুল (৮) গালা ফকিরর পাড়া গ্রামের মিঠু (৯), ভেড়াকোলা গ্রামের রুবিনা (৬) জানায়, তাদের বাড়ি থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রায় ৫ থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে। যাওয়া-আসা করতে তাদের খুব কষ্ট হয়। সে কারণে তাদের বাবা-মা গত বন্যার পর আর স্কুলে যেতে দেয়নি। 

এ ব্যাপারে গালা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর বাতেন বলেন, আশে পাশে কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকলেও সচেতনতার অভাবে এসব শিশুরা শিক্ষা বঞ্চিত থাকছে। তবে শতভাগ শিক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারি বেসরকারি আরও অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা প্রয়োজন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ