শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

আগামী বছর থেকে এক হিসাবে সব মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন

মুহাম্মাদ আখতারুজ্জামান: আগামী বছর থেকে এক হিসাবে সব মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন সেবা চালু হবে। তাৎক্ষণিক শহরে কিংবা গ্রামে দ্রুত টাকা পাঠানোর সুবিধার কারণে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। এ সেবা গ্রাহকের কাছে আরও জনপ্রিয় করতে এবার ইন্টার-অপারেবিলিটি (আন্তঃব্যবহারযোগ্যতা) সিস্টেম চালু করতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ব্যবস্থা চালু হলে সেবার আওতা আরও বেড়ে যাবে। সর্বপরি এটি একটি ভালো উদ্যোগ। তবে সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ডাক বিভাগের ‘নগদ’ গ্রাহকরা।
আগামী বছরের শুরুতে এ সেবা চালু হবে। ফলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের একটি প্রতিষ্ঠানে হিসাব (অ্যাকাউন্ট) খুলে অন্য সব প্রতিষ্ঠানে তাৎক্ষণিক সহজে লেনদেন করা যাবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ে এখন একটি প্রতিষ্ঠানের হিসাব খুলে গ্রাহক শুধু ওই প্রতিষ্ঠানের অন্য গ্রাহকের সঙ্গে লেনদেন করতে পারেন। ইন্টার-অপারেবিলিটি সিস্টেমে গ্রাহক একটি হিসাব খুলে সবগুলো এমএফএস-এর গ্রাহকের সঙ্গে লেনদেন করতে পারবেন। অর্থাৎ একটি হিসাব থেকে বর্তমানে এমএফএস সেবা দেয়া ১৬টি প্রতিষ্ঠানেই অর্থ আদান-প্রদান করা যাবে। বিকাশের হিসাবধারীরা ইউক্যাশ, রকেট, এমক্যাশের গ্রাহকের সঙ্গে লেনদেন করতে পারবেন। আবার ইউক্যাশের গ্রাহক বিকাশ, শিওর ক্যাশসহ সব প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকের সঙ্গে লেনদেন করতে পারবেন। এছাড়া এমএফএস হিসাবধারীরা যেকোনো ব্যাংক হিসাবেও লেনদেন করতে পারবেন।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ন্যাশনাল পেমেন্ট স্যুইচের সহযোগিতায় এ সেবা দেবে এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো। ইতোমধ্যে এ সেবা চালুর জন্য পরীক্ষামূলক কাজ চলছে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে এটি চালু হবে। এতে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদানকারী যেসব প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকসংখ্যা কম তারা বেশি উপকৃত হবেন। কারণ তাদের লেনদেনের পরিধি বাড়বে।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, মোবাইল ব্যাংকিংসেবা আরও জনপ্রিয় করতে আন্তঃঅপারেটিং লেনদেন চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর কাজ চলছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের শুরুতে এ সেবা চালু করা সম্ভব হবে। এটি চালু হলে একটি হিসাব খুলে সব ব্যাংকে এমএফএস অর্থ লেনদেন করা যাবে। একাধিক হিসাব খোলোর প্রয়োজন হবে না। এ সেবা চালু হলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের প্রতি গ্রাহকের আগ্রহ আরও বেশি হবে বলে প্রত্যাশা করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নির্বাহী পরিচালক।
এদিকে এমএফএস হালনাগাদ পরিসংখ্যানের তথ্য বলছে, বর্তমানে মোট ১৬টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে জড়িত। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে এসব প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাত কোটি ৫৯ লাখ ৭৮ হাজার। যা আগের মাস আগস্টে ছিল সাত কোটি ৩৫ লাখ ৮৫ হাজার। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এমএফএস-এর মাধ্যমে গত সেপ্টেম্বর মাসে প্রতিদিন গড়ে ৭০ লাখ ৭৮ হাজার লেনদেন হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রতিদিন গড়ে এক হাজার ১৮১ কোটি ১১ লাখ টাকা আদান-প্রদান হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে মোট লেনদেন হয়েছে ৩৫ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা।
আলোচিত সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে নয় লাখ ৫১ হাজার ৭৭৮ জন। এর মাধ্যমে শুধু লেনদেন নয়, যুক্ত হচ্ছে অনেক নতুন নতুন সেবাও। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল অর্থাৎ সেবার মূল্য পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, বেতন-ভাতা প্রদান, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো অর্থাৎ রেমিট্যান্স প্রেরণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবা দেয়া হচ্ছে।
২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের যাত্রা শুরু হয়। এর পরপরই ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে ‘বিকাশ’। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার সিংহভাগই বিকাশের দখলে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমএফএস লেনদেনের সর্বশেষ ১৯ মে’র নির্দেশনা অনুযায়ী, একজন গ্রাহক তার অ্যাকাউন্টে দিনে পাঁচবার ৩০ হাজার টাকা ক্যাশ-ইন বা জমা করতে পারেন। মাসে ২৫ বার সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা ক্যাশ-ইন করা যায়। আগে প্রতিদিন দুবার সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা জমা করতে পারতেন একজন গ্রাহক। মাসে ২০ বার এক লাখ টাকা ক্যাশ-ইন করা যেত।
মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবায় নেতৃত্বদানকারী প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক ব্যাংকের বিকাশ লিমিটেড। দেশের এমএফএস-এর প্রায় ৮০ শতাংশ গ্রাহকই তাদের। ইন্টার-অপারেবিলিটির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির হেড অব কর্পোরেট কমিউনিকেশন অ্যান্ড পিআর শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম জানান, আমরা বিশ্বাস করি, ইন্টার-অপারেবিলিটির মাধ্যমে গ্রাহক লেনদেনে আরও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন। আমাদের সক্ষমতাও বাড়বে। এ বিষয়ে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস সেক্টরের রেগুলেটর হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংক যে সিদ্ধান্ত দেবে তা প্রতিপালনে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
তবে ইন্টার-অপারেবিলিটি সিস্টেমের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ডাক বিভাগের ‘নগদ’। কারণ তারা এমএফএস-এর সেবা দিলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমের আওতায় নেই। তাই ‘নগদ’- এর গ্রাহকরা এ সুবিধা পাবেন না।
ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, ইন্টার-অপারেবিলিটি সেবা এমএফএস-এর গ্রাহকদের জন্য একটি সুসংবাদ। এটি চালু হলে একটি হিসাব (অ্যাকাউন্ট) খুলেই সবগুলো কোম্পানির মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন করতে পারবেন। এতে সেবার আওতা আরও বেড়ে যাবে। আমি মনে করি, এটি ভালো উদ্যোগ।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ