শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

অরক্ষিত ক্রসিং ঝুঁকিতে রেলের পশ্চিমাঞ্চলও

খুলনা অফিস : রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলেও গেট ও গেটম্যানবিহীন রেলক্রসিংয়ে রয়েছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। গেটম্যান ছাড়াই চলছে সাত শতাধিক রেলক্রসিং। এসব রেল ক্রসিংয়ের অনুমোদন থাকলেও নেই গেটম্যান। রেলক্রসিংয়ের সামনে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং ও পথচারীদের অসচেতনতার কারণে প্রায়ই বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনা ঘটছে। ২০১৫ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়ায় রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের লেভেলক্রসিং ও গেটসমূহের পুনর্বাসন ও মান উন্নয়ন প্রকল্পটি শেষ হবে ২০২০ সালের জুনে। খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ নিয়ে রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল।
সংশ্লিষ্টদের দেয়া তথ্যমতে, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়েতে গেটম্যান ছাড়াই চলছে ৭১৪টি রেলক্রসিং। এসব রেলক্রসিংয়ের অনুমোদন থাকলেও নেই গেটম্যান। এসব রেলক্রসিংয়ের সামনে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড টানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। এর বাইরে ৩৩৯টি রেলক্রসিংয়ের বৈধতা নেই। তাই নেই সতর্কবার্তাও। এতে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বিভিন্ন যানবাহন রেললাইন পার হয়। এ অবস্থায় ঘটছে ছোট-বড় নানা ধরনের দুর্ঘটনা। গত সোমবার দিবাগণ রাতে (পূর্বাঞ্চলের) ব্রাহ্মণবাড়িয়া কসবার মন্দবাগ রেলস্টেশন এলাকার ভয়াবহ ট্রেন ঘটনায় ১৬ জন নিহতসহ বহু মানুষ আহত হয়েছে।
এদিকে, পশ্চিমাঞ্চলে চলতি বছরের ১৫ জুলাই সিরাজগঞ্জের উল¬াপাড়ায় এমন একটি রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় বর-কনেসহ মাইক্রোবাসের ১১ যাত্রী নিহত হন। অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে ওঠে পড়া বিয়ের মাইক্রোবাসটিকে রাজশাহী থেকে ছেড়ে যাওয়া ‘পদ্মা এক্সপ্রেস’ ট্রেন ধাক্কা দিলে মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা ঘটেছিল। ওই দুর্ঘটনায় নিজেদের দায় অস্বীকার করেছিল রেল কর্তৃপক্ষ। এদিকে মাঝে মধ্যে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটলে দেশজুড়ে আলোচনা হলেও প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার কোন খোঁজই রাখে না কেউ।
রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান জানান, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের অনুমোদিত লেভেল ক্রসিং রয়েছে এক হাজার ৩৪টি। এরমধ্যে ৩১৯টিতে গেটম্যান রয়েছে। বাকি ৭১৫টি গেটে গেটম্যান আপাতত নেই। এসব লেভেল ক্রসিং পারাপার হতে হয় নিজ দায়িত্বে।
রেলের একাধিক কর্মকর্তা জানান, রেল লাইনের পাশে নতুন নতুন রাস্তা নির্মাণের কারণে অবৈধ ক্রসিংয়ের সংখ্যা বাড়ছে। রেললাইনের ওপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করতে হলে রেলওয়ের অনুমোদন নেয়ার বিধান থাকলেও উন্নয়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সেই অনুমোদনের তোয়াক্কা করে না। এ নিয়ে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করেও তারা ফল পাচ্ছে না বলে দাবি রেল কর্তৃপক্ষের।
রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের লেভেলক্রসিং ও গেটসমূহের পুনর্বাসন ও মান উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, অন্তত অনুমোদিত লেভেল ক্রসিংগুলো সুরক্ষায় কাজ করা হচ্ছে। তবে অবৈধ এবং গেটম্যান নেই এমন লেভেল ক্রসিংও আসছে সুরক্ষার আওতায়। এরই অংশ হিসেবে লেভেল ক্রসিং গেট পুনর্বাসন ও মানোন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে ২০১৫ সাল থেকে। এ প্রকল্পের আওতায় এসেছে ৩২৬টি রেলক্রসিং। এ প্রকল্পে অনুমোদন দেয়া হয়েছে ৫৩টি অবৈধ রেলক্রসিংয়ের। এছাড়া ২০৪টি রেলক্রসিংয়ে দেয়া হয়েছে গেটম্যান। প্রকল্পের আওতায় থাকা প্রত্যেক রেলক্রসিংয়ের মান উন্নয়ন করা হয়েছে।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জিএম মো. আবদুল আউয়াল ভূঁইয়া বলেন, দীর্ঘদিন কিছু রেলক্রসিংয়ে গেটম্যান নেই। অস্থায়ী লোকবল নিয়োগ দিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া হচ্ছে। এ নিয়ে সবার সচেতন হওয়া জরুরি। তাছাড়া রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের লেভেলক্রসিং ও গেইটসমূহের পুনর্বাসন ও মান উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ হলে সমস্যাটির অনেকটাই সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ মোশাররফ হোসেন বলেন, লেভেল ক্রসিংয়ে ঝুঁকিপূর্ণ যাতায়াতে অপূরণীয় ক্ষতি হলে সে দায় নেবে কে? এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। অবিলম্বে অরক্ষিত গেট ও গেটম্যানবিহীন রেলক্রসিং সমস্যা সমাধানের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ