শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

খুলনাঞ্চলে নারী নির্যাতন ধর্ষণ ও পাচার আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধি

খুলনা অফিস : নারী নির্যাতনের সংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে মামলা। সেই সাথে নারী পাচারও ১০ মাসে ১০ জন। খুলনায় গত ১০ মাসে কেবল নারী নির্যাতনের মামলা হয়েছে ১৯৭টি আর ধর্ষণের মামলা হয়েছে ৩৪টি। জেলায় নারী নির্যাতনের ঘটনায় উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজ। সামাজিক অবক্ষয়, বিচারের দীর্ঘসূত্রতা, কখনো কখনো আইনের ফাঁকফোকরে পার পাওয়া বা রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় অপরাধীদের পার পেয়ে যাওয়া এবং গৃহ থেকে রাষ্ট্রে নারী অধিকার বাস্তবায়িত না হওয়ায় এ ধরনের অপরাধে কমছে না বল মনে করেন তারা।
খুলনা জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভার কার্যবিবরণীর তথ্যে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে খুলনা মহানগরীর আটটি থানায় ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হয়েছে ২৩টি। নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় ৮১টি এবং পাচারের ঘটনায় মামলা হয়েছে ৪টি। এছাড়া খুলনা জেলার নয়টি উপজেলায় একই সময়ে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হয়েছে ১১টি। নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় ১১৬টি এবং পাচারের ঘটনায় মামলা হয়েছে ৬টি।
এ সংক্রান্ত প্রাপ্ত হিসেব পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, জেলার ৯টি উপজেলার চেয়ে মহানগরী এলাকায় ধর্ষণের ঘটনা বেশি। উপজেলা পর্যালয়ে পাচারের মামলা এবং নারী নির্যাতনের মামলা বেশি। তবে নারী নেত্রীরা বলছেন, ধর্ষণের শিকার অনেকে লোকলজ্জা ও ভবিষ্যতের কথা ভেবে ঘটনা চেপে যান। অনেকে আবার আপোস করেন বা করতে বাধ্য হন। ফলে থানায় ধর্ষণের মামলার সংখ্যা কম।
মানবাধিকারকর্মী এডভোকেট মোমিনুল ইসলাম জানান, নারীর যেকোনো অধিকার খর্ব বা হরণ করা এবং কোনো নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে যেকোনো বিষয় চাপিয়ে দেওয়া বা কোনো ব্যাক্তির ইচ্ছানুসারে কাজ করতে বাধ্য করা নারী নির্যাতনের অন্তর্হিত। সার্বজনীন নারী অধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘনমূলক অপরাধ নারী নির্যাতন। এ ক্ষেত্রে সামাজিক অস্থিরতা, নৈতিক অবক্ষয়, বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও অনলাইনের অশ্লীল ভিডিওর ছড়াছড়িতে ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার বড় কারণ বলে মনে করেন তিনি। তিনি আরও জানান, পরিবারে নারী অধিকার বাস্তবায়িত না হলে আশঙ্কজনক হারে এ ধরনের অপরাধ বেড়ে যাবে।
আমরাই পারি জোটের (উইক্যান) সভাপতি এডভোকেট শামীমা সুলতানা শীলু জানান, খুলনায় ধর্ষণের ঘটনা, বিশেষত শিশু ধর্ষণ এখন উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। দ্রুত বিচার না হওয়ায় অনেকে এই অপরাধে উৎসাহী হচ্ছে। তিনি মনে করেন, ধর্ষণ প্রতিরোধে দ্রুত বিচার ও রায় কার্যকর করা, উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েদের প্রতি বাড়তি নজর রাখা, ঘরে-বাইরে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা জরুরি।
খুলনা লেখিকা সংঘের সাধারণ সম্পাদক সুতপা বেদজ্ঞ জানান, নারী নির্যাতন ও সহিংসতা রোধে প্রচলিত আইন দ্বারা আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে। যে নারীরা মুখ খুলে কথা বলতে ভয় পায়, তাদেরকে সাহস দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধের জন্য আইন ছাড়াও রাষ্ট্রের প্রয়োজন ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির। শুধুমাত্র কোটা ব্যবস্থাই পারে না নারী নির্যাতন রোধ করতে বা নারী অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে।
খুলনা জেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নার্গিস ফাতেমা জামিন জানান, বর্তমান সরকার নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় অনেক কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি নারী নির্যাতন ও সহিংসতা রোধে নারীদের সচেতন হতে হবে। নারীদের নিজ অধিকার আদায়ের জন্য নিজেদের কথা বলতে হবে। নারী নির্যাতনকারী যেই হোক না কেনো তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিতে হবে। নারীদের সচেতন হতে হবে প্রকৃত অধিকার প্রতিষ্ঠায়। সরকার নারীদেরকে উন্নয়নের অংশীদার বলে মনে করছেন। এভাবে সকল স্তরে নারীদেরকে যখনই মানুষ হিসেবে দেখা হবে তখনই নারী নির্যাতন ও নারীর প্রতি সহিংসতা কমে আসবে। ‘নারী পুরুষ সমতা’ রুখতে পারে সহিংসতা- প্রতিপাদ্য নিয়ে সোমবার থেকে শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ