বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

বায়ু দূষণের কারণে চট্টগ্রাম ক্রমেই বসবাস অনুপযোগী হয়ে পড়ছে

চট্টগ্রাম ব্যুরো: একজন ধূমপায়ী তামাক সেবনের কারণে তার নিজের যে পরিমান ক্ষতি করেন, ধূমপানের ক্ষতিকর বায়ু ছড়ানোর মাধ্যমে তার চেয়ে অনেক বেশী ক্ষতি করেন শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের। ঠিক একই ভাবে বায়ু ধুষণের কারনে শিশু ও মা’দের হাপানী, এ্যাজমা, ক্যান্সার, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী, শিশুর মেধা বিকাশ, জন্ডিসসহ নানা জঠিল রোগের প্রকোপ ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। ক্রমাগত বায়ু দূষণের কারনে দেশের বানিজ্যিক রাজধানীখ্যাত চট্টগ্রামও ক্রমেই বসবাস অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। বায়ু দূষণের মূল কারনগুলোর মধ্যে যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা স্তূপ, সমন্বয়হীন উন্নয়ন কর্মকান্ড, উন্নয়ন কর্মকান্ডে পরিবেশ সংরক্ষনের জন্য পৃথক বরাদ্ধ রাখা ও তার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা, বিভিন্ন শিল্প কারখানার কালো ধুয়া নির্মগন, শিল্প বজ্য, পাহাড় কাটা ও ইট ভাটার ধুয়া। অন্যদিকে উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য পরিবেশ ছাড়পত্র বাধ্যতামুলক এবং পরিবেশ সংরক্ষনের জন্য পৃথক বরাদ্ধ রাখার বিধান থাকলেও পরিবেশ অধিদপ্তর শুধুমাত্র নোটিশ দিয়ে দায়িত্ব শেষ করছে। ফলে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন মানছে না খোদ সরকারী সংস্থাগুলি, বিশেষ করে চট্টগ্রাম ওয়াসা, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, টিএন্ডটি, কর্নফুলী গ্যাস ও সিটি কর্পোরেশন এর উন্নয়ন কর্মকান্ডে নিয়োজিত ঠিকাদারগন। যার খেসারত দিতে হচ্ছে পুরো নগরবাসীকে। বায়ু দুষণের ফলে বসবাস অযোগ্য নগরীর মধ্যে অন্যতম হিসাবে চট্টগ্রামের নাম উঠে এসেছে। এ অবস্থায় বায়ু দূষণ রোধে দ্রুত এ দূষণের সাথে জড়িত সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলিকে পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়গুলি কঠোর ভাবে অনুসরণে বাধ্য করা ও সাধারন জনগনের মাঝে এ বিষয়ে অনুসরণীয় বিধি বিধানগুলি মেনে চলার আহবান জানানো হয়েছে। ২ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম মহানগরীর জামালখানস্থ আমেরিকান কর্নার মিলনায়তনে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ(ক্যাব) চট্টগ্রাম ও আমেরিকান কর্নারের যৌথ উদ্যোগে চট্টগ্রাম নগরীর বায়ুর মান নির্ণয় ও বায়ু দূষণ রোধে করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভায় বিভিন্ন বক্তাগণ উপরোক্ত মন্তব্য করেন।
ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ঠ শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ বাসনা মহুরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি ও এনভায়রনমেন্ট সাইন্স এর অধ্যাপক মোশারাফ হোসেন, সরকারী মহসিন কলেজের অধ্যাপক ও কর্নফুলী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক শাহাব উদ্দীন, পরিবেশ অধিদপ্তরের কেইজ প্রকল্পের সমন্বয়কারী নূর হোসেন, দেশ টিভির বুরে‌্যা চীপ আলমগীর সবুজ।
আমেরিকান কর্নারের পরিচালক রুমা দাসের স্বাগত বক্তব্যে আলোচনায় অংশনেন মুক্তিযোদ্ধা ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, রোটারিয়ান তারিক, ক্যাব আকবর শাহ থানার সভাপতি ডাঃ মেজবাহ উদ্দীন তুহিন, ক্যাব হালিশহরের এম এ আজিজ, এমদাদুল ইসলাম সৈকত, অ্যাডভোকেট জামাল হোসেন, শিক্ষিকা সালমা জাহান, ক্যাব জামালখানের নবুয়ত আরা সিদ্দিকী, হেলাল চৌধুরী, সালাহ উদ্দীন আহমদ, ক্যাব পাহাড়তলীর হারুন গফুর ভ্ইুয়া, ক্যাব চান্দগাঁও এর জানে আলম, অধ্যক্ষ মনিরুজ্জমান, আবু ইউনুচ, ক্যাব খুলসীর লায়ন প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান, রুখসানা আখতারুন্নবী, ক্যাব সদর ঘাটের শাহীন চৌধুরী, নারী নেত্রী সায়রা বেগম, রেবা বড়ুয়া, যর্ণা বড়ুয়া, জেলা স্কাউটস’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শাহনেওয়াজ আলী মির্জা প্রমুখ।
বক্তাগন বায়ুর মান ক্রমাগত দ্রুত অবনতির কারনে মানুষের নির্মল বায়ু প্রাপ্তি ও বেঁচে থাকা এখন অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। সাময়িক ভাবে মাক্স ব্যবহারে সুফল মিললেও দীর্ঘ মেয়াদে বায়ুর দূষণ থেকে বাঁচতে বায়ু দুষনের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠিন পদক্ষেপ গ্রহন ছাড়া বিকল্প নাই। অপরিকল্পিত ও সমন্বয়হীন উন্নয়ন কর্মকান্ড, নগরীর রাস্তা খুড়ে বছরের পর পর ফেলে রেখে দুর্ভোগ সৃষ্ঠিকারী সরকারী-বেসরকারী যে সংস্থাই হোক তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। যততত্র ময়লা ফেলে রাখা, নালা-নর্দমার ময়লা-আবর্জনা রাস্তায় তুলে রাখা, উন্নয়ন প্রকল্পের পরিবেশ সংরক্ষনের তহবিলের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতে তদারিক নিশ্চিত করা, রাস্তার উপর ইট, সুরকি, বালি রাখা বন্ধ, বৃহৎ এপাটমেন্ট-বাড়ী নির্মানে পরিবেশ সংরক্ষণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, ধুলাবালি না ছড়াতে রাস্তা ও উন্নয়ন প্রকল্প এলাকায় প্রতিনিয়ত পর্যাপ্ত পানি ছিটানো, ক্যামিকেল বর্জ্য-কালো ধোয়া নির্গমনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করা, পরিবেশ অধিদপ্তরকে নোটিশের পরিবর্তে প্রতিষ্ঠানগুলির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনে সক্ষম করে তোলা, জনগনকে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা, পাহাড় কাটা বন্ধ, ইট ভাটার কালো ধোয়া নির্গমন বন্ধ, পলিথিন ফেলে পরিবশে বিপর্যয় রোধে এগিয়ে আসার আহবান জানানো হয়। এছাড়াও দীর্ঘমেয়াদী ফল লাভে বৃক্ষরোপন কার্যক্রম জোরদারের দাবি জানানো হয়।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ