শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

ক্রিকেট দলের পারফরম্যান্স নিয়ে সংসদেও আলোচনা

সংসদ রিপোর্টার: বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে হতাশা প্রকাশ করেছেন সংসদ সদস্যরা। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন যারা দেশের সম্মান বয়ে আনতে পারছে না তাদের জন্য সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি না করে যারা সম্মান বয়ে আনছেন তাদের দিকে নজর দেয়া উচিত।
সোমবার পাকিস্তানের মাটিতে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টিতে ২-০ তে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে সংসদ সদস্যরা বলেন, ক্রীড়াঙ্গন খুব একটা ভালো নেই। জানি না কি বিপর্যয় আমাদের ওপর দিয়ে যাচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সংসদ অধিবেশনে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিল-২০২০ এর ওপর জনমত যাচাই-বাছাই করার প্রস্তাব দিয়ে আলোচনাকালে একথা বলেন বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যগণ। বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্য মুজিবুল হক বলেন, যুব ফুটবল টিম সম্মান কুড়িয়ে আনছে। সম্প্রতি সময়ে অলিম্পিকে বেশ কয়েকটা আইটেমে ছেলে-মেয়েরা স্বর্ণপদক জয় করে এনেছে। যেগুলো আমাদের সম্মান আনছে, যে সমস্ত ছেলে-মেয়েরা পুরস্কার আনছে তাদেরকে পেট্রোনাইস করা হোক। সময় এসেছে যারা কিছু আনতে পারে বা যারা কিছু দিতে পারে, যারা সম্মান বয়ে আনতে পারে তাদের গুরুত্ব দেয়া হোক। যারা সম্মান আনতে পারে না তাদের এত গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিলে উল্লেখযোগ্য বিশেষ কোনো দিক নেই। কিছুদিন আগে দেখলাম ক্রীড়াঙ্গনগুলোতে ক্যাসিনো বিপ্লব চলছে। সেই ক্যাসিনো বিপ্লবে বেশ কিছু ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে, অভিযোগ আনা হয়েছে এই টুকুই শেষ।
তিনি বলেন, ক্রীড়াঙ্গনের অবস্থা খুব একটা ভালো নেই। যে কারণে এই বিলটি যে উদ্দেশে আনা হয়েছে তা আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক শক্তিশালীকরণ, দৃঢ় এবং মজবুত করার জন্য জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নত মানের ক্রীড়াবিদ তৈরি করতে পারি এরকম বিল আনেন।
তিনি আরও বলেন, ক্রিকেট শুধু আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলাধুলা করছে। কয়েকদিন আগে দেখলাম পাকিস্তানে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে, এটা আমাদের জন্য দুঃখজনক। ভারতেও হোয়াইটওয়াশ । জানি না কি বিপর্যয় আমাদের উপর দিয়ে যাচ্ছে। যে কারণে আমি মনে করি বিকেএসপিতে আরও নজর দেন। অহেতুক উল্লেখযোগ্য উদ্দেশ্যে কারণ ছাড়াই বিল নিয়ে আসছেন।
জবাব দিতে গিয়ে প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, অনেকেই বলেছেন মাঠের অভাবে ক্রীড়াঙ্গনে উল্লেখযোগ্য উন্নতি নেই। তাদের জানাতে চাই মাঠের অভাব মেটাতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় প্রতিটি জেলা পর্যায়ে ৪৯২টি শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের লক্ষ্যে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এরইমধ্যে ১২৫টি নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছি। দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ১৬৭টি স্টেডিয়াম নির্মাণ করতে যাচ্ছি। অচিরেই সেই কাজ শুরু করতে পারব।
তিনি বলেন, ভারতে হোয়াইটওয়াশ হয়নি। সেখানে টি-টোয়েন্টির প্রথম ম্যাচে আমরা ভারতকে পরাজিত করেছি। এছাড়া গত বছর প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পরাজিত করে দ্বিপাক্ষিক ট্রফি ছিনিয়ে এনেছি। আমাদের খেলোয়ারেরা অলিম্পিকে ১৯টি গোল্ডসহ ১৪২টি পদক ছিনিয়ে এনেছে। কাজেই অগ্রগতি নেই কথাটি সঠিক না।
এরপর সংশোধনী প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, আমাদের জন্য দুঃসংবাদ। আমাদের বিসিবি’র প্রভাবশালী সভাপতি পারলেন না আমাদের সাকিবকে ফেরাতে। সাকিব এক বছর খেলার বাইরে থাকল এটা আমাদের বোধগম্য নয়, এর আগেও দেখেছি সভাপতি যারা ছিলেন দক্ষতার সঙ্গে চালিয়েছেন, আশা করি এটার শাস্তির কমানোর ব্যাপারে আরেকটু পদক্ষেপ নেওয়া উচিত হবে।
ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আইন পাস
বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) অধ্যাদেশ রহিত করে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আইন, ২০২০ বিল জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। ক্রীড়া ক্ষেত্রে প্রতিভা অন্বেষণ ও স্নাতক-স্নাতকোত্তর ডিগ্রিসহ নিবিড় প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টিই নতুন এ আইনের লক্ষ্য।
গতকাল মঙ্গলবার বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম, রওশন আরা মান্নানের দু’টি সংশোধনী গ্রহণ করা হয়। বিলের ওপর আনীত জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানো ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো কণ্ঠ ভোটে নাকচ হয়ে যায়।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, পীর ফজলুর রহমান, মুজিবুল হক, ডা. রুস্তম আলী ফরাজী, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, বিএনপির হারুনুর রশীদ ও ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, গণফোরামের মোকাব্বির খান ওই সংশোধনী প্রস্তাবগুলো আনেন।
পরে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আইন, ২০২০ বিলটি পাস করার প্রস্তাব করেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল।
বিলে যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রীকে বোর্ডের চেয়ারমান ও প্রতিমন্ত্রীকে ভাইস চেয়ারম্যান এবং ক্রীড়া সচিব, অর্থ সচিবসহ ১৯ সদস্যবিশিষ্ট বিকেএসপি পরিচালনা বোর্ড গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। বিলে অধ্যাদেশ বলে প্রতিষ্ঠিত বিকেএসপিইর সব কার্যক্রম এই আইনের অধীনে হয়েছে বলে গণ্য হবে। এ ছাড়া এ প্রতিষ্ঠানের সব সম্পদ অধিকার ক্ষমতা, সব ঋণ দায় ও দায়িত্ব, সব চুক্তিসহ মামলার ধারাবাহিকতা একইভাবে বহাল থাকবে।
বিলে ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সম্পর্কে বলা হয়, ‘উন্নতমানের ক্রীড়া বিজ্ঞানী, কোচ, রেফারি ও আম্পায়ার তৈরি, বিভিন্ন দেশীয় খেলাধুলার বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও প্রতিযোগিতার আয়োজন, আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক ও যোগাযোগ স্থাপন হলো এই প্রতিষ্ঠানের কাজ।’
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১৯৮২ সালে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের ঘোষণা বলে প্রতিষ্ঠিত হয়। সামরিক ফরমান বলে জারি হওয়া অধ্যাদেশগুলোর অনুমোদন ও সমর্থন সংবলিত সংবিধানের চতুর্থ তফশিলের ১৯ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করেন আদালত। একইসঙ্গে সংবিধানের সপ্তম সংশোধন আইন ১৯৮৬ বাতিল ঘোষিত হওয়ায় ওই অধ্যাদেশের কার্যকারিতা লোপ পায়। কিন্তু অধ্যাদেশগুলোর মধ্যে বিকেএসপিসহ কতিপয় অধ্যাদেশ কার্যকর রাখতে ২০১৩ সালে প্রণীত আইন দ্বারা সুরক্ষা দেয়া হয়। ওই অধ্যাদেশের আবশ্যকতা ও প্রাসঙ্গিকতা বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় সংশোধন ও পরিমার্জন করে বাংলা ভাষায় নতুনভাবে আইন প্রণয়নের জন্য সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তাই বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অধ্যাদেশ রহিত করে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আইন, ২০১৯ বিল সংসদে উত্থাপন করা হলো।’

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ