শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

মাঝামাঝি সময়ে এসে বইমেলা জমজমাট

ইবরাহীম খলিল : মাঝামাঝি সময়ে এসে লেখক-পাঠক-প্রকাশক আর নানা বয়সী মানুষের উপস্থিতিতে চিরচেনা রূপ ধারণ করেছে অমর একুশে বইমেলা-২০২০। সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস হলেও গতকাল রোববার মেলায় বইপ্রেমীদের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। ফাগুনের বিকেলে, মিষ্টি-রোদ গায়ে মেখে সবাই হাজির হন মেলা প্রাঙ্গণে। মেলার গেইট খোলার সাথে সাথেই দল বেঁধে প্রবেশ শুরু করেন বই প্রেমীরা। এদিন নতুন বই এসেছে ১৪৬টি। সব মিলিয়ে অর্ধেক সময়ে সাড়ে ২৩শ’র মত বই মেলায় এসেছে গতকাল পর্যন্ত।
বইমেলায় ঘুরতে আসা মনজুরুল করিম বলেন, ঘুরে ঘুরে অনেকগুলো বই কিনবো বলে ভেবে রেখেছি। মেলায় এসে বইপ্রেমী এতো মানুষ দেখে দারুণ লাগছে।  সময় প্রকাশনীর মালিক ফরিদ আহমেদ বলেন, ফাগুনের প্রথম দিন থেকেই তো মেলার রূপ বদলে গেল।  এখন পাঠক আসছেন, আর যারা আসছেন প্রায় সবাই বই কিনছেন। অনেকেই নতুন বইয়ের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন। কেউবা বইয়ের তালিকা করে জমিয়ে রাখছেন আজ-কালকের মধ্যে কিনবেন।
মেলা পরিচালনা পরিষদের সদস্য সচিব জালাল আহমেদ বলেন, মেলার মাঝামাঝি আছি আমরা। এখন এর যে সত্যিকার জমজমাট রূপ তা দেখা যাচ্ছে। এ ধারা শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলেই আমরা আশা করছি।
এদিকে রোববার অমর একুশে বইমেলার ১৫-তম দিনে মেলা চলে বেলা ৩:০০টা থেকে রাত ৯:০০টা পর্যন্ত। বিকেল ৪:০০টায় মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় পিয়াস মজিদ রচিত মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু ও বাংলা একাডেমি শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গবেষক শাহিদা খাতুন। আলোচনায় অংশ নেন কবি শিহাব সরকার এবং গবেষক ড. ইসরাইল খান। লেখকের বক্তব্য দেন পিয়াস মজিদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
প্রাবন্ধিক বলেন, ভাষাশহিদের স্মৃতি-বিজড়িত এই মাসে বাংলা একাডেমিতে মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও বাংলা একাডেমি শীর্ষক বইয়ের যে আলোচনা তা বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। বইটির লেখক পিয়াস মজিদ গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ করেছেন। বহু উৎস থেকে পুরোনো বই-পুস্তক, পত্র-পত্রিকা, নথিপত্র প্রভৃতি ঘেঁটে অনেকের দৃষ্টির আগোচরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইতিহাসের মূল্যবান অনেকগুলো তথ্য সংগ্রহ ও একত্রিত করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, বাংলা একাডেমিÑ বইয়ে মুদ্রিত শিরোনামের তিনটি শব্দ অবিচ্ছেদ্য। মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির জীবনে গৌরবোজ্জ্বল একটি অধ্যায়। এই অধ্যায়ের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু; আর বাংলা একাডেমি মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তিভূমি, বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনার ভ্রƒণকেন্দ্র। তিনি বলেন, ষাটের দশক থেকে স্বাধীনতা অব্যবহিত পরবর্তী সময় পর্যন্ত বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও বাঙালি সংস্কৃতির মূল কেন্দ্র ছিল বাংলা একাডেমি। সেদিনের বাংলা একাডেমি তার কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে মানুষের জাতীয়তাবাদী মানসের ধারা বিকশিত করতে পেরেছিল। একাডেমির সেই ইতিহাস এই বইয়ের মধ্য দিয়ে আরও উজ্জ্বলতর হয়ে উঠেছে।
আলোচকরা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশে সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন। তাই বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সূতিকাগার বাংলা একাডেমির সঙ্গেও তাঁর সম্পর্কটি অতীব নিবিড়। অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক, তথ্যসমৃদ্ধ মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু ও বাংলা একাডেমি গ্রন্থটিতে লেখক পিয়াস মজিদ মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে বাংলা একাডেমির ভূমিকা এবং বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বাংলা একাডেমির সম্পর্কটি একজন গবেষকের দৃষ্টিকোণ থেকে দক্ষতার সঙ্গে তুলে ধরেছেন। যারা বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি ও বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসেন তাদের কাছে এ গ্রন্থটি সমাদৃত হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।
গ্রন্থের লেখক বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু ও বাংলা একাডেমির পারস্পরিক যোগসূত্র অন্বেষার প্রেরণা থেকেই এ গ্রন্থের সৃষ্টি। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও বাংলা একাডেমি বিষয়ে এ গ্রন্থটি রচনা করতে পেরে আমি নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করছি।
সভাপতির বক্তব্যে সেলিনা হোসেন বলেন, পিয়াস মজিদ রচিত মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু ও বাংলা একাডেমি গ্রন্থটি মূলত বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধ সর্বোপরি মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর সাংস্কৃতিক চেতনাকে ধারণ করেই রচিত। সাংস্কৃতিক চেতনা দিয়েও যে সংগ্রাম করা যায় বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আদর্শ আমাদের সেই শিক্ষাই দেয়। ভাষা আন্দোলনের পর থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে আজ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে বাংলা একাডেমির দীর্ঘ অভিযাত্রার ইতিহাস ও অর্জন নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে এ গ্রন্থ সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন মাসরুর আরেফিন, সোহেল হাসান গালিব, সৈয়দ জাহিদ হাসান এবং আলতাফ শাহনেওয়াজ।     
কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি মাসুদুজ্জামান, মাহবুব আজীজ, জাহানারা পারভীন এবং আশরাফ জুয়েল। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী শিরিন ইসলাম, আজিজুল বাসার এবং মনিরুল ইসলাম। আজ ছিল আবুল ফারাহ্ মোঃ তোয়াহার পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বিশ্বভুবন’, জিনিয়া জ্যোৎস্নার পরিচালনায় নৃত্য সংগঠন ‘জিনিয়া নৃত্যকলা একাডেমী’ এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী’-এর পরিবেশনা। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন শ্যামা প্রসাদ মজুমদার (কী-বোর্ড)।  
আজ সোমবার বইমেলার ১৬তম দিনে। মেলা চলবে বেলা ৩:০০টা থেকে রাত ৯:০০টা পর্যন্ত। বিকেল ৪:০০টায় মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ রচিত ৭ই মার্চের ভাষণ কেন বিশ্ব-ঐতিহ্য সম্পদ : বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন অধ্যাপক মোহাম্মদ সেলিম।  আলোচনায় অংশ নেবেন করবেন ,ড. এ কে এম শাহনাওয়াজ এবং ড. কুতুব আজাদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ, বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, আবৃত্তি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ