শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

ফের ভোট ডাকাতি করতেই চট্টগ্রামেও ইভিএম ব্যবহার হচ্ছে

গতকাল সোমবার নয়াপল্টনস্থ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ -সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার: ফের ভোট ডাকাতি করতেই চট্টগ্রামেও ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন রুহুল কবির রিজভী। গতকাল সোমবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ঢাকা সিটি নির্বাচনে ভোটাররা ইভিএম ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করলেও প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে ডিজিটাল কারচুপির এই যন্ত্র ব্যবহার করার আবারো ঘোষণা দিয়েছে। তার মানে ঢাকার মতো একই কায়দায় চট্টগ্রামেও ভোট ডাকাতির সুযোগ তৈরির জন্য এটা করা হচ্ছে। সিইসির এই সিদ্ধান্তকে আমরা ধিক্কার জানাই।
রিজভী বলেন, খারাপ মানুষ যাতে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হতে না পারেন এজন্য নির্বাচন কমিশননের উচিত সময়োপযোগী আইন ও বিধি তৈরি করা এবং নির্বাচনের এমন পরিবেশ নিশ্চিত করা জনগন তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে। সিইসি সেটি না করে তিনি সারা বিশ্বে নিষিদ্ধ ইভিএম নিয়ে দেশে হেড মাস্টার সেজেছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ক্ষমতা পেয়েই নিজের অখ্যাত ভাগ্নেকে যিনি এমপি বানানোর লোভ সামলাতে পারেন না তার মুখে ভোট নিয়ে কোনো কথা মানায় না। ঢাকা সিটি নির্বাচন ভোটার অনুপস্থিতির মাধ্যমে ভোটাররা বর্তমান সিইসিসহ নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছেও বলে মন্তব্য করেন তিনি।
গত রোববার প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে কমিশনের সভায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল চূড়ান্ত করা হয়। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগ্রহী প্রার্থীরা ২৭ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র দাখিল, প্রার্থিতা প্রত্যাহার ৮ মার্চ এবং প্রতীক বরাদ্ধ ৯ মার্চ এবং ভোট গ্রহন হবে ২৯ মার্চ।
রিজভী বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের উন্নয়নের কথিত শ্লোগানের আড়ালে গত একদশকে বাংলাদেশ হারিয়েছে তার সকল অর্জন আর মর্যাদা। গুম খুন অপহরণের ফলে উদ্ভুত ভয়ে জনগণকে পরিণত করা হয়েছে একটি আত্মমর্যাদাহীন জাতিতে। গত ৯ ফেব্রুয়ারী ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জি কিষান রেড্ডি বলেছেন, ভারতের নাগরিকত্বের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলে বাংলাদেশের অর্ধেক মানুষ বাংলাদেশ ছেড়ে দেবে। ভারতীয় মন্ত্রীর এই মন্তব্য ঔদ্ধত্বপূর্ণ ও কান্ডজ্ঞানহীন যা, বাংলাদেশের জনগণের জন্য লজ্জাকর ও অপমানজনক। তিনি বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকার নিজেদের অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে মাথা এতটাই নত করেছে যে এখন আর বাংলাদেশের স্বার্থের পক্ষে, বাংলাদেশের জনগণের সম্মান ও মর্যাদার পক্ষে যা হয়েছে তা মর্যাদাহানীকর। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের কথিত স্বামী-স্ত্রীর পররাষ্ট্রনীতির কারণে আজ তাই বাংলাদেশের জনগণ হেয় হচ্ছে।
‘কে ভোট দিলো, কে দিলো না তা বিবেচনা করে না আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের জবাবে রিজভী বলেন, এই বক্তব্যের মাধ্যমে শেখ হাসিনা প্রকাশ্যেই স্বীকার করে নিলেন, তার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য কিংবা সরকার গঠনের জন্য দেশের জনগণ কিংবা জনগণের ভোটের প্রয়োজন হয়না। প্রয়োজন হয় নিশিরাত আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জনগণের প্রতি, জনগণের ভোটাধিকারের প্রতি এমন অবজ্ঞা ও  তাচ্ছিল্যপূর্ণ মন্তব্য একমাত্র সরকার প্রধান এবং তার দল আওয়ামী লীগের পক্ষেই সম্ভব। কারণ সুষ্ঠু ভোট তাদের জন্য আতঙ্ক, তাদের মসনদ উল্টে যাওয়ার ভয়ে তারা অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিরুদ্ধে অবৈধ ক্ষমতা প্রয়োগ করছে। এই কারণেই আমরা বলি, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের জনগণ ক্ষমতাহীন হয়ে যায়। আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় থাকলে জনগণ দেশে অনিরাপদ আর বিদেশে আত্মমর্যাদাহীন হয়ে যায়। ক্ষমতাসীন অবৈধ সরকার বাংলাদেশের জনগণকে নিজ দেশেই পরাধীন করে ফেলেছে। ঔপনেবেশিক আমলে জনগণের যতটুকু অধিকার ছিলো সেটাও আওয়ামী লীগ কেড়ে নিয়েছে। দেশের জনগণের এখন কোনো অধিকার ও মর্যাদা অবশিষ্ট নেই। নেই ভোটাধিকার।
এক প্রশ্নের জবাবে রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি চেয়ে এসছি। আমরা ১৫ ফেব্রুয়ারি নয়া পল্টনে বড় সমাবেশ করলাম। তার মুক্তির জন্য আমাদের আন্দোলন-সংগ্রাম, যে যার অবস্থান থেকে দলীয় পর্যায় থেকে শুরু করে সারা দেশে অব্যাহত আছে। কোনোদিনও কোনো নেতা-কর্মী এব্যাপারে নিশ্চুপ নয়। তার স্বাস্থ্যের যে শোচনীয় অবস্থা আমরা আপনাদেরকে বার বার অবগত করেছি। আমরা এই মুহুর্তে তার মুক্তির দাবি করছি।
প্যারোলের আবেদনের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এই বিষয়ে আমরা অবগত নই। আমরা পরিবারের সাথে এখনো এ নিয়ে আমরা আলোচনা করেনি। আমরা এই মুহুর্তে দেশনেত্রীর মুক্তি চাই। তাকে অন্যায়ভাবে কারাগারে সাজা দিয়ে রাখা হয়েছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সহ সাংগঠিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহ দপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন, যুব দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ