শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

বইমেলার ২২তম দিনে কাব্যগ্রন্থের দাপট

ইবরাহীম খলিল : লেখক, দর্শনার্থী ও বইপ্রেমীদের ভিড়ের মধ্য দিয়ে কাটল অমর একুশের বই মেলার ২২তম দিন। এদিন নতুন বই এসেছে  ১৫৪টি। সব মিলিয়ে এবছরের মেলায় নতুন বইয়ের সংখ্যা দাড়ালো ৩ হাজার ৭শ’৮৫টি। এবারের মেলায় শুধু শিশুতোষ নতুন বই এসেছে ১৬০টি। শনিবার পর্যন্ত আসা বইয়ের পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ওই দিন পর্যন্ত আসা বইয়ের সংখ্যা ছিল তিন হাজার ৬৩১টি। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ১১৩৬টি কবিতার বই এসেছে। দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল উপন্যাস। যার সংখ্যা ৫৮৪টি। এছাড়া গল্পগ্রন্থ ৪৭৯টি, উপন্যাস ৫৮৪টি, প্রবন্ধগ্রন্থ ১৮৯টি, কাব্যগ্রন্থ ১১৩৬টি, গবেষণাগ্রন্থ ৭৫টি, ছড়ার ৬৯টি, শিশুতোষ গ্রন্থ ১৬০টি, জীবনীগ্রন্থ ১০৭টি, রচনাবলি আটটি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গ্রন্থ ১১৯টি, নাটক ২৩টি, বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থ ৬৮টি, ভ্রমণকাহিনী ৬৪টি, ইতিহাসগ্রন্থ ৭২টি, রাজনীতি বিষয়ক গ্রন্থ ১২টি, চিকিৎসা-স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ২৩টি, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা গ্রন্থ ৯৩টি, রম্য-ধাঁধা ২৮টি, ধর্ম বিষয়ক গ্রন্থ ১৪টি, অনুবাদ সাহিত্য ৪১টি, অভিধান ১১টি, সায়েন্স ফিকশন ৫৩টি এবং অন্যান্য বই এসেছে ২০৩টি।
এবারে বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় আট লাখ বর্গফুট জায়গাজুড়ে চলছে বইমেলা। বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করা এবারের মেলা প্রাঙ্গণে মুজিববর্ষ উদযাপনের ছোঁয়া লেগেছে। নান্দনিকভাবে সাজানো হয়েছে মেলা প্রাঙ্গণ। প্রিয় লেখকসহ মেলায় আসা নতুন বইগুলো দর্শনার্থীরা ঘুরে ঘুরে দেখছেন। অনেকে পছন্দের বই কিনছেন। আবার অনেকে বন্ধুদের নিয়ে দল বেঁধে মেলায় ঘুরে দেখছেন বিভিন্ন স্টল। অনেকে আবার বই কিনে লেখকের অটোগ্রাফ নিয়ে তার সঙ্গে ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। সব কিছু মিলিয়ে জমে উঠেছে এবারের বইমেলা।
এবারের বইমেলায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ১২৬টি প্রতিষ্ঠানকে ১৭৯টি স্টল এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৩৪টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৯৪টি স্টলসহ মোট ৫৬০টি প্রতিষ্ঠানকে ৮৭৩টি স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া বাংলা একাডেমিসহ ৩৩টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ৩৪টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
গতকাল বিকাল ৪:০০টায় অনুষ্ঠিত হয় মুর্শিদা বিন্তে রহমান রচিত স্বাধীনতার পথে বঙ্গবন্ধু : পরিপ্রেক্ষিত ১৯৭০-এর নির্বাচন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ পাঠ করেন মুস্তাফিজ শফি। আলোচনায় অংশ নেন আখতার হুসেন, মাহবুব সাদিক এবং আলম খোরশেদ। লেখকের বক্তব্য প্রদান করেন মুর্শিদা বিন্তে রহমান। সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান।
প্রাবন্ধিক বলেন, বঙ্গবন্ধুর জীবন ও রাজনীতির দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই গভীর আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে তিনি নিজেকে গড়ে তুলেছেন শোষকের বিরুদ্ধে নিরলস নেতা হিসেবে। জেল, জুলুম, হুলিয়া সত্ত্বেও তিনি মানুষের মুক্তির মন্ত্র ছড়িয়ে যাচ্ছেন মানুষের মধ্যেই। নিজে প্রস্তুত হচ্ছেন, জাতিকে প্রস্তুত করেছেন স্বাধিকার ও স্বাধীনতার জন্য। দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত ঘুরে বেড়িয়ে বঙ্গবন্ধু আসলে যেন নিজেকে চেনাচ্ছিলেন। তিনি ধীরে ধীরে হয়ে উঠছিলেন বাঙালি জাতির বিশ্বাস ও আস্থার প্রতীক। বঙ্গবন্ধুর সেই ত্যাগ ও সংগ্রাম বৃথা যায়নি। তাঁর নেতৃত্বে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উচু করে দাঁড়িয়েছিল বিস্ময় ছড়িয়ে। বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেছিলেন বিশ্বের অন্যান্য স্বাধীনতাকামী জাতিরও অনুপ্রেরণার নাম, মুক্তির মন্ত্র।
আলোচকরা বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ৭০-এর নির্বাচন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি অধ্যায়। বাঙালি জাতির স্বাধিকার আদায়ের পথে বঙ্গবন্ধুর দূরহ অভিযাত্রায় জনগোষ্ঠী যে কতটা নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত ছিল তা প্রতিফলিত হয় ৭০-এর নির্বাচনের মাধ্যমে। স্বাধীনতা আন্দোলনের পটভূমিতে ৭০-এর নির্বাচনের প্রভাব নিয়ে সমাজতাত্ত্বিক ও অর্থনৈতিক বিচার বিশ্লেষণ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। আলোচ্য গ্রন্থে লেখক বঙ্গবন্ধুর ভাষ্য, ভাষণ, নানা তথ্য উপাত্ত এবং দুর্লভ চিত্র সংযোজনের মাধ্যমে একে গবেষণাধর্মী গ্রন্থের পর্যায়ে উন্নীত করেছেন।
গ্রন্থের লেখক বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব বাংলার জনগণের মনস্তত্ত্ব থেকে ‘পাকিস্তান’ প্রত্যয় মুছে ফেলে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রত্যয় তৈরি করতে সক্ষম হন। এর ফলশ্রুতিতেই ৭০-এর নির্বাচনে জনগণ বঙ্গবন্ধুর পক্ষে অকুণ্ঠ সমর্থন ঢেলে দেয়।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আদর্শের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে একটি জাতিকে যৌক্তিক পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়া। স্বাধীনতার পথে বঙ্গবন্ধু : পরিপ্রেক্ষিত ১৯৭০-এর নির্বাচন  গ্রন্থের মধ্য দিয়ে যে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে তা হলো বঙ্গবন্ধুর মানস-জগতে স্বাধীনতার চিন্তা রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই বিদ্যমান ছিল, যার প্রতিফলন ঘটে তাঁর সামগ্রিক আন্দোলন, ৭০-এর নির্বাচন ও মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে।
আজ লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন মশিউল আলম, মাহবুব রেজা, রুমা মোদক, চাণক্য বাড়ৈ।   
কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি শামীম আজাদ, ফেরদৌস নাহার, আমিনুর রহমান সুলতান, মুস্তাফিজ শফি, প্রত্যয় জসীম  এবং সঞ্জীব পুরোহিত। সংগীত পরিবেশন করেন অপর্ণা খান, মো. মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া, ডালিয়া সুলতানা, সুমন চন্দ্র দাস, মো. নূরুল ইসলাম, হাসান মাহমুদ এবং সৈয়দা কবিতা।
আজ ২৪ ফেব্রুয়ারি সোমবার, অমর একুশে গ্রন্থমেলার ২৩-তম দিন। মেলা চলবে বেলা ৩:০০টা থেকে রাত ৯:০০টা পর্যন্ত। বিকাল ৪:০০টায় অনুষ্ঠিত হবে সাইমন জাকারিয়া রচিত সাধক কবিদের রচনায় বঙ্গবন্ধুর জীবন ও রাজনীতি শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ পাঠ করবেন সুমনকুমার দাশ। আলোচনায় অংশ নেবেন নাসির আহমেদ এবং স্বকৃত নোমান। সভাপতিত্ব করবেন মুহম্মদ নূরুল হুদা। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, আবৃত্তি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ