শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

ডেমোক্রেট নির্বাচনী বিতর্কে স্যান্ডার্সের দিকে তোপ প্রতিদ্বন্দ্বীদের

২৬ ফেব্রুয়ারি, রয়টার্স : যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেট দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে নির্বাচনী বিতর্কে বার্নি স্যান্ডার্সের বিরুদ্ধে অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের একযোগে আক্রমণ চালাতে দেখা গেছে।

মঙ্গলবার সাউথ ক্যারোলাইনার এ বিতর্কে বেশিরভাগ মনোনয়নপ্রত্যাশীই বলেছেন, স্যান্ডার্স প্রার্থী হলে তা ডেমোক্রেটিক পার্টির জন্য ‘বিপর্যয়’ ডেকে আনবে। এর ফলে হোয়াইট হাউস তো দূর ডেমোক্রেটরা কংগ্রেসের নিম্নকক্ষের নিয়ন্ত্রণও হারাতে পারে বলেও সতর্ক করেছেন তারা। নিউ ইয়র্কের সাবেক মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ, ইন্ডিয়ানারা সাউথ বেন্ডের পিট বুটিগিগের পাশাপাশি ম্যাসাচুসেটস ও মিনোসেটার দুই সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন ও অ্যামি ক্লবুচারও এদিন স্যান্ডার্সের দিকে তোপ দেগেছেন বলে বার্তা সংস্থা জানিয়েছে।

বিতর্কে প্রত্যেক মনোনয়প্রত্যাশীই ধারাবাহিকভাবে অন্য মনোনয়প্রত্যাশীদের কথার মাঝখানে বিঘœ ঘটিয়েছেন, চিৎকার করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং কেউই তাদের জন্য নির্ধারিত সময়সীমা মানেননি; কিন্তু বেশিরভাগ মনোনয়নপ্রত্যাশীই একজায়গায় একমত ছিলেন, তা হল স্যান্ডার্স বিরোধিতা। তাদের ভাষ্য, ভারমন্টের সিনেটরকে প্রার্থী করা হলে, নভেম্বরের নির্বাচনে তিনি রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কাছে ধরাশায়ী হবেন।

“বার্নি ট্রাম্পের কাছে হারবেন; তার পাশাপাশি প্রতিনিধি পরিষদ, সিনেট এমনকি অনেকগুলো রাজ্যও লালেদের (রিপাবলিকান) হাতে চলে যাবে,” বলেছেন ধনকুবের ব্লুমবার্গ।

বুটিগিগের আক্রমণের তীর ছিল স্যান্ডার্স প্রস্তাবিত ‘সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবার’ দিকে। এ ধরনের কর্মকা-ে সরকারের খরচ কত হবে, তা নিয়ে ভারমন্টের সিনেটরের একেকবার একেক তথ্য দেওয়ার কড়া সমালোচনা করেছেন তিনি। স্যান্ডার্স বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারেন বলেও সতর্ক করেছেন তিনি। “(তিনি প্রার্থী হলে) কি হবে, তা আমি স্পষ্ট করে বলতে পারি। এরকমটা হলে তা ডনাল্ড ট্রাম্পের ঝুলিতে আরও চার বছর যোগ করবে। আপনি যদি মনে করেন যে শেষ চার বছর ছিল বিশৃঙ্খল, বিভেদময়, বিষাক্ত, দুর্বিসহ; তাহলে ২০২০ সালের বার্নি স্যান্ডার্স বনাম ডনাল্ড ট্রাম্পের সময় যে এর চেয়েও বেশি কিছু আসছে, তা ভাবতে পারেন,” বলেছেন বুটিগিগ।

এক সময় স্যান্ডার্সের মিত্র হিসেবে বিবেচিত ওয়ারেন বলেছেন, তিনি নিজেকে ভারমন্টের সিনেটরের চেয়ে যোগ্য প্রার্থী বলেই মনে করেন। অন্যদিকে ক্লুবচার বলেছেন, স্যান্ডার্স কিংবা ওয়ারেন কেউই সিনেটে তাদের নেতৃত্ব গুণ দেখাতে পারেননি।

মঙ্গলবারের বিতর্কে অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের এমন আক্রমণের মুখেও স্যান্ডার্সকে অবিচল থাকতে দেখা গেছে। এদিনও তিনি তার প্রতিশ্রুতিগুলোই পুনর্ব্যক্ত করেছেন। স্বাস্থ্যসেবাকে মানবাধিকার হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়েছেন; উত্থাপন করেছেন অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচারের মতো ইস্যুগুলোকে।

স্যান্ডার্স বলেছেন, বেসরকারী স্বাস্থ্য বীমার বদলে তিনি সরকার পরিচালিত ‘সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা’র যে প্রতিশ্রুতি হাজির করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সব জনগণ তাতে সমর্থন দিয়েছে।

ফেব্রুয়ারির তিনটি অঙ্গরাজ্যে ককাস ও প্রাইমারির পর ৭৮ বছর বয়সী এ ‘সোশাল ডেমোক্রেট’ই এখন দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে এগিয়ে আছেন। শনিবার সাউথ ক্যারোলাইনা প্রাইমারি ও মার্চের প্রথম মঙ্গলবার ১৪টি অঙ্গরাজ্যে একযোগে লড়াইয়ের আগে তার জয়রথ ঠেকাতে এ নির্বাচনী বিতর্কই ছিল অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের জন্য শেষ সুযোগ।

এদিনের বিতর্কে ব্লুমবার্গকে নেভাডার তুলনায় অনেক গোছানো ও আক্রমণাত্মক মনে হয়েছে। স্যান্ডার্সকে আক্রমণে এদিন তিনি ভারমন্টের সিনেটরের প্রচারে ‘রুশ সহযোগিতা চেষ্টার’ বিষয়ও তোলেন।

“ভ্লাদিমির পুতিন মনে করেন, ডনাল্ড ট্রাম্পেরই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়া উচিত। এ কারণেই রাশিয়া স্যান্ডার্সকে ডেমোক্রেট প্রার্থী করতে চায়, যেন তিনি ট্রাম্পের কাছে হেরে যান,” বলেন নিউ ইয়র্কের সাবেক এ মেয়র।

ব্লুমবার্গের এ ভাষ্যের বিরোধিতা করে স্যান্ডার্স রুশ প্রেসিডেন্টের দিকে পাল্টা তোপ দেগেছেন।

“মিস্টার পুতিন। যদি আমি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হই, বিশ্বাস করুন, আপনি আর কোনো নির্বাচনেই হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না,” বলেছেন তিনি।

সাম্প্রতিককালে স্যান্ডার্সের মুখে কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর প্রশংসা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তার প্রতিদ্বন্দ্বীরা।

উত্তরে স্যান্ডার্স বলেন, তিনি সারাবিশ্বের কর্তৃত্ববাদী শাসকদেরই বিরোধিতা করে আসছেন।

“যখন স্বৈরশাসকরা ভালো কিছু করেন, হোক সেটা চীন কি কিউবার, আপনি অবশ্যই তার স্বীকৃতি দিতে পারেন। কিন্তু আপনি তাদের সঙ্গে প্রেমপত্র বিনিময় করতে পারেন না,” বলেছেন ৭৮ বছর বয়সী এ রাজনীতিক।

স্যান্ডার্স এদিন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ‘প্রতিক্রিয়াশীল বর্ণবাদী’ হিসেবেও অভিহিত করেছেন। মঙ্গলবারের বিতর্কে ডেমোক্রেট মনোনয়নপ্রত্যাশীদের অন্যতম টম স্টেয়ার দলীয় নেতাকর্মীদের স্যান্ডার্স কিংবা ব্লুমবার্গের মতো ‘কট্টরপন্থিদের’ প্রত্যাখ্যান করতে অনুরোধ করেন।

“আমি ভীত। যদি আমরা দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে না পারি, যদি এ কট্টরপন্থিদের একজনকে নিয়ে আমরা এগিয়ে যাই, তাহলে আমরা ট্রাম্পকে পুনঃনির্বাচিত করার মতো ভয়াবহ ঝুঁকি নিতে যাচ্ছি,” বলেছেন তিনি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ