শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

সিরিয়ায় তুর্কী সেনাদের সামনে থেকে রাশিয়াকে সরে যেতে বললেন এরদোগান

১ মার্চ, আনাদুলো, টিআরটি ওয়ার্ল্ড, বিবিসি : প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্রসহ আরও নানা বিষয় নিয়ে তুরস্কের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শনিবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এমন মন্তব্য করেন তিনি। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে তুর্কী সংবাদমাধ্যম।

এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে ট্রাম্প বলেন, সিরিয়া ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সঙ্গে আমাদের বহু বৈঠক হয়েছে। আপনি যে বিষয়টির (প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র) কথা বলছেন, তা নিয়েও আমাদের আলাপ আলোচনা চলছে।

এর আগে শনিবার কাতারের রাজধানী দোহায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ নিয়ে কথা বলেন তুর্কী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু। তিনি বলেন, আঙ্কারা চায় সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইদলিব প্রদেশে তুরস্ককে সহায়তা দিতে ওয়াশিংটন যেন সেখানে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র পাঠায়। এই ইদলিবেই বিমান হামলা চালিয়ে ৩৩ তুর্কী সেনাকে হত্যা করে সিরিয়ার রাশিয়া ও ইরান সমর্থিত আসাদ বাহিনী।

গত মাসেই মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ জানায়, রাশিয়া সমর্থিত আসাদ বাহিনীর হামলা থেকে তুরস্কের সুরক্ষা নিশ্চিতে সীমান্তে দুইটি প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্থাপনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ জানিয়েছে আঙ্কারা।

সিরিয়ায় ৩৩ তুর্কী সেনাকে হত্যার পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তাহলে কি তুরস্কের সঙ্গে সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে রাশিয়া ও ইরানের সমর্থনপুষ্ট সিরিয়ার আসাদ বাহিনী? এজন্যই নিজের সুরক্ষায় মার্কিন প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সংগ্রহে জোর দিচ্ছে আঙ্কারা? ইতোমধ্যেই সিরিয়ার ২০০টি লক্ষ্যবস্তুতে স্থল ও বিমান হামলা চালিয়েছে তুর্কী বাহিনী। আঙ্কারা জানিয়েছে, তাদের  পাল্টা হামলায় আসাদ বাহিনীর ৩০৯ জনকে ‘নির্মূল’ করা হয়েছে। 

এছাড়া পাঁচটি হেলিকপ্টার, ২৩টি ট্যাংক, ২৩টি হাওইটজার এবং দুইটি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে। তুর্কী সংবাদমাধ্যমগুলোতেও আসাদের সামরিক যানে বিস্ফোরণের ছবি দেখানো হয়েছে। বিশ্লেষক জোনাথন মার্কাস বলছেন, তুরস্ক ও সিরিয়ার মধ্যে এখন পূর্ণ-মাত্রার সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আঙ্কারা বা দামেস্ক এক্ষেত্রে পিছু হটবে কিনা? আসাদ চাইছেন তিনি পুরো সিরিয়ার ওপর একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করবেন। আর এ কাজে রাশিয়া বরাবরই তাকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আসছে। খবর পাওয়া যাচ্ছে যে, ক্রুজ মিসাইল সজ্জিত দুইটি রাশিয়ান ফ্রিগেট এখন বসফরাস প্রণালী পার হয়ে ভূমধ্যসাগরের দিকে যাচ্ছে। যদিও মস্কো বলছে, এর সঙ্গে সিরিয়ার ঘটনাবলীর কোনও সম্পর্ক নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা ন্যাটো মিত্র তুরস্কের পাশে আছি। সিরিয়া, রাশিয়া ও ইরান সমর্থিত বাহিনীর নিন্দনীয় অভিযান তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি।’ ন্যাটো মহাসচিব ইয়েন্স স্টোলটেনবার্গ সিরিয়ার বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে রাশিয়া ও আসাদ বাহিনীর অভিযান থামানোর আহ্বান জানিয়েছেন। 

তবে দামেস্ক বলছে, ইদলিবে ‘সন্ত্রাসীদের’ তৎপরতা দীর্ঘায়িত করতে পশ্চিমাদের কোনও চেষ্টা তারা মেনে নেবে না।

প্রেসিডেন্ট এরদোগানের একজন মুখপাত্র বলেছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে বলা হয়েছে সিরিয়ার সরকারের সঙ্গে সস্পৃক্ত যে কোনও কিছুই তুরস্কের বৈধ টার্গেট। তাদের আঘাত করা হবে।

সিরিয়ার ইদলিব পরিস্থিতি নিয়ে সৃষ্ট উত্তেজনার মধ্যে রাশিয়ার প্রতি হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগান।

তিনি রাশিয়ার সঙ্গে তার দেশের সম্ভাব্য সামরিক সংঘাতের ইঙ্গিত দিয়ে মস্কোকে উদ্দেশ করে বলেছেন, তুর্কী সেনাদের সামনে থেকে সরে দাঁড়ান।

এরদোগান গত শনিবার আঙ্কারায় এক বক্তব্যে দাবি করেন, রাশিয়া সিরিয়ার ইদলিব পরিস্থিতিকে ব্যবহার করে তুরস্কের অভ্যন্তরে হস্তক্ষেপ করতে চায়।

তিনি আরও দাবি করেন, সিরিয়ার তেল সম্পদ বা দেশটির ভূখ- দখল করার ইচ্ছা আঙ্কারার নেই; বরং তুরস্ক নিজের জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষা করতে চায় মাত্র।

কিন্তু এ কাজে রাশিয়া প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে বলে প্রেসিডেন্ট এরদোগান অভিযোগ করেন।

সিরিয়ার সরকার নয়; বরং সে দেশের জনগণের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে সিরিয়ায় তুর্কী সেনা মোতায়েন করা হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন। কাজেই তার দেশের সেনারা সিরিয়া ত্যাগ করবে না বলেও প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এরদোগান।

তুর্কী প্রেসিডেন্ট অবশ্য এ কথার সত্যতা স্বীকার করেন, সম্প্রতি সিরিয়ার বিমান হামলায় ইদলিবপ্রদেশে মোতায়েন করা তার দেশের ৩৬ সেনা নিহত হয়েছে।

সিরিয়ার সেনাবাহিনী প্রায় দুই মাস আগে সে দেশের উত্তরাঞ্চলীয় ইদলিবপ্রদেশ থেকে সন্ত্রাসীদের বিতাড়িত করার অভিযান শুরু করে।

এ কাজে সিরিয়াকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে রাশিয়া। কিন্তু তুরস্ক এ অভিযানের বিরোধিতা করছে এবং ইদলিবপ্রদেশে মোতায়েন নিজের সেনাদের দিয়ে তা প্রতিহত করার চেষ্টা করছে।

তবে সিরিয়ার সরকার ও জনগণ এ কাজের পরিণতির ব্যাপারে আঙ্কারাকে সতর্ক করে দিয়েছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ